পশ্চিমবঙ্গ-সহ দেশের ১২টি রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে চলছে এসআইআর প্রক্রিয়া। —ফাইল চিত্র।
পশ্চিমবঙ্গ-সহ দেশের ১২টি রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধনের (এসআইআর) প্রক্রিয়া পিছিয়ে দেওয়া হল। খসড়া ভোটার তালিকা এবং চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশের দিন পিছিয়ে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। নতুন তারিখ জানিয়ে রবিবার একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে। গত ৪ নভেম্বর থেকে এই রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিতে এসআইআর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। আগে বলা হয়েছিল, ৪ ডিসেম্বরের মধ্যে এনুমারেশন ফর্ম নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে আপলোড করার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে। ৯ ডিসেম্বর খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে এবং ২০২৬ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত হবে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা। নতুন ঘোষণায় গোটা প্রক্রিয়াই সাত দিন করে পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে।
কমিশনের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, এনুমারেশন ফর্ম জমা নেওয়া এবং কমিশনের ওয়েবসাইটে আপলোড করার প্রক্রিয়া শেষ করতে হবে ১১ ডিসেম্বরের মধ্যে। তার মধ্যে বুথ ব্যবস্থাপনাও সেরে ফেলতে হবে। ১২ ডিসেম্বর থেকে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে খসড়া ভোটার তালিকা প্রস্তুত করার কাজ। খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে ১৬ ডিসেম্বর, মঙ্গলবার। তার পর সেই তালিকা সংক্রান্ত যাবতীয় অভিযোগ, আপত্তি কমিশনে জানানো যাবে ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত।
খসড়া তালিকার সমস্ত আপত্তি, অভিযোগ এবং দাবি খতিয়ে দেখে পদক্ষেপ করা, বিতর্কের নিষ্পত্তি করা, প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট ভোটারকে শুনানিতে (হিয়ারিং) ডাকা এবং আলোচনার সাপেক্ষে সন্দেহ দূর করার কাজ ইআরও-রা করবেন ১৬ ডিসেম্বর থেকে ৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। ১০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ভোটার তালিকা ভাল করে খতিয়ে দেখে চূড়ান্ত করার জন্য কমিশনের অনুমতি নিতে হবে। তার পর চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে ১৪ ফেব্রুয়ারি।
পশ্চিমবঙ্গ ছাড়া এই মুহূর্তে যে সমস্ত রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে এসআইআর প্রক্রিয়া চলছে, তার মধ্যে রয়েছে গুজরাত, ছত্তীসগঢ়, গোয়া, কেরল, আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ, লক্ষদ্বীপ, মধ্যপ্রদেশ, পুদুচেরী, রাজস্থান, তামিলনাড়ু এবং উত্তরপ্রদেশ। এই সব জায়গাতেই ৪ নভেম্বর থেকে এসআইআর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। বুথ স্তরের আধিকারিকেরা (বিএলও) বাড়ি বাড়ি ঘুরে এনুমারেশন ফর্ম বিলি করেছেন। তা পূরণের পর আবার বাড়ি বাড়ি গিয়ে ফর্ম সংগ্রহ করেছেন। এই কাজে তাঁদের সাহায্য করেছেন বিভিন্ন দলের বিএলএ বা বুথ স্তরের এজেন্ট। ভোটারদের কাছ থেকে ফর্ম সংগ্রহ করার পর তা কমিশনের নির্দিষ্ট পোর্টালে আপলোড করা বিএলও-দের দায়িত্ব। তাঁদের আপলোড করা তথ্যের ভিত্তিতেই কমিশন খসড়া ভোটার তালিকা প্রস্তুত করবে। প্রাথমিক ভাবে মনে করা হচ্ছে, বিএলও-দের এই কাজে আরও কিছুটা সময় দেওয়ার জন্যই সাত দিন করে সমস্ত ঘোষিত তারিখ পিছিয়ে দেওয়া হল। বাংলা-সহ বিভিন্ন রাজ্য থেকে এসআইআর-এর কাজের ‘চাপ’ নিয়ে সরব হয়েছেন বিএলও-রা। সরকারি কর্মচারী, অধিকাংশ ক্ষেত্রে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বিএলও-র দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ, এসআইআর-এর জন্য দীর্ঘ সময় বাড়তি কাজ করতে হচ্ছে তাঁদের। এতে শারীরিক এবং মানসিক চাপ বাড়ছে। অনেকে কমিশনের পোর্টালে তথ্য আপলোড করতে গিয়েও সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। অনলাইন মাধ্যমে স্বচ্ছন্দ না-হওয়ায় তাঁদের সমস্যা হচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিএলও-দের অসুস্থ হয়ে পড়া, কিছু কিছু ক্ষেত্রে ‘এসআইআর-এর কাজের চাপে’ আত্মহত্যার খবরও মিলেছে। পরিস্থিতি বিবেচনা করে কমিশন পদক্ষেপ করল বলে মনে করা হচ্ছে। তবে কমিশন এখনও তারিখ পিছিয়ে দেওয়ার কোনও কারণ জানায়নি।