এসআইআর নিয়ে উদ্বেগ কমাতে সোনাগাছির যৌনকর্মীদের জন্য বিশেষ শিবির করবে নির্বাচন কমিশন। ছবি: এআই সহায়তায় প্রণীত।
এসআইআর (ভোটার তালিকায় বিশেষ নিবিড় সংশোধন) আবহে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে এশিয়ার বৃহত্তম যৌনপল্লি সোনাগাছিতে। যৌনকর্মীদের বাস্তব সমস্যার কথা জানিয়ে রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক মনোজ আগরওয়ালকে গত শুক্রবার চিঠিও লিখেছিল তিনটি সংগঠন। সূত্রের খবর, কমিশনের তরফে ইতিমধ্যেই মৌখিক ভাবে জানানো হয়েছে, সোনাগাছিতে বিশেষ সহায়তা শিবির করবে তারা। সেখানে এক দিন মনোজ নিজে সশরীরে উপস্থিত থাকতে পারেন বলেও আশা যৌনকর্মীদের নিয়ে কাজ করা একাধিক সংগঠনের। কমিশনের কাছ থেকে ইতিবাচক বার্তা পাওয়ার পরেই এসআইআর আতঙ্কে যে যৌনকর্মীরা অন্যত্র চলে গিয়েছেন, তাঁদের ফেরানোর উদ্যোগ নিচ্ছে সংগঠনগুলি।
যৌনকর্মীদের সন্তানদের নিয়ে কাজ করে ‘আমরা পদাতিক’ নামে একটি সংগঠন। সংগঠনের অন্যতম সংগঠক মহাশ্বেতা মুখোপাধ্যায় শুক্রবার বলেন, ‘‘আতঙ্কে অনেকে ফর্ম নেননি বিএলও-র কাছ থেকে। তাঁরা মনে করেছেন, ফর্ম নিলে তা জমা দিতে হবে। যেহেতু অনেকের কাছে নথি নেই, তাঁরা এই পর্বে অনেকেই এলাকা ছেড়ে আত্মীয়ের বাড়ি চলে গিয়েছেন। আমরা তাঁদের ফেরানোর জন্য প্রচার শুরু করেছি।’’ সূত্রের খবর, কমিশনের তরফে মৌখিক ভাবে সোনাগাছির যৌনকর্মীদের হয়ে পত্র পাঠানো তিন সংগঠনকে জানানো হয়েছে, ৯ ডিসেম্বরের পরে কমিশনের উদ্যোগে বিশেষ শিবির হবে। উল্লেখ্য, ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে এসআইআর-এর প্রাথমিক পর্ব। তার পর ৯ ডিসেম্বরই খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করবে নির্বাচন কমিশন। যদিও যৌনকর্মীদের অন্যতম সংগঠন ‘দুর্বার’ অপেক্ষা করে আছে বিশেষ শিবিরের জন্য। কারণ, তারা এখনও নিশ্চিত নয় যে, বিশেষ শিবির হবেই। ‘দুর্বার’-এর অন্যতম সংগঠক বিশাখা লস্কর বলেন, ‘‘এখনও লিখিত ভাবে কমিশন এ ব্যাপারে কোনও নির্দেশিকা দেয়নি। যা বলেছে, পুরোটাই মৌখিক।’’
যৌনকর্মীদের বাস্তব সমস্যার কথা জানিয়ে সিইও-কে চিঠি লিখেছিল ‘সোসাইটি অফ হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল অ্যাকশন’, ‘ঊষা মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ লিমিটেড’ এবং ‘আমরা পদাতিক’। মূলত তিনটি সমস্যার কথা উল্লেখ করা হয়েছিল যৌনকর্মীদের তরফে। চিঠিতে মূলত তিনটি সমস্যার কথা উল্লেখ করা হয়েছিল যৌনকর্মীদের তরফে। এক, গ্রামাঞ্চল বা ভিন্রাজ্য থেকে যৌনকর্মীরা আসেন সোনাগাছিতে। সামাজিক নানা কারণে তাঁদের অধিকাংশের সঙ্গেই পরিবারের যোগাযোগ থাকে না। ফলে ২০০২ সালের নথি তাঁদের পক্ষে জোগাড় করা অসম্ভব। দুই, বহু যৌনকর্মী পরিস্থিতির চাপে পরিবার এবং বাড়ি ছেড়ে এই পেশায় আসেন। তাঁরা অনেকেই নথি নিয়ে বাড়ি ছাড়েন না। ফলে তাঁদের অনেকের কাছেই কমিশন নির্ধারিত নথি নেই। তিন, এমন অনেক যৌনকর্মী রয়েছেন, যাঁরা পরিবারের কাছে তাঁদের পেশা গোপন করে রেখেছেন সামাজিক বেড়াজালের কারণে। এই অংশের পক্ষেও পরিবারের নথি জোগাড় করা সম্ভব নয়।
সোনাগাছিতে এখন যৌনকর্মীর সংখ্যা প্রায় ১০ হাজার। তাঁদের মধ্যে হাজারতিনেক যৌনকর্মী প্রত্যহ পেশার জন্য সেখানে আসেন। আবার বাড়ি ফিরে যান। কিন্তু এমন হাজারসাতেক যৌনকর্মী আছেন, যাঁরা সোনাগাছিতেই স্থায়ী ভাবে বসবাস করছেন বছরের পর বছর। অধিকাংশেরই ভোটার আইডি কার্ড রয়েছে। তাঁরা ভোটও দেন। সোনাগাছির কয়েক হাজার যৌনকর্মী লক্ষ্মীর ভান্ডার বা বিধবাভাতার মতো সরকারি প্রকল্পের সুবিধাভোগী। কমিশনের উদ্দেশে তাঁদের অনেকেরই প্রশ্ন, সরকারি প্রকল্পের উপভোক্তা হওয়ার পরেও কেন নাগরিকত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে? পরিস্থিতি যে ‘উদ্বেগজনক’, তা মানছে যৌনকর্মী ও তাঁদের সন্তানদের নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলি। চিঠিতে তারা এ-ও স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, যৌনকর্মীরা কিন্তু এসআইআরের বিরুদ্ধে নন। তাঁরা শুধু চান, বাস্তবতা বুঝে কমিশন বিকল্প কোনও পদক্ষেপ করুক।