দলমার দল থাকছে বেশি, বাড়ছে বিপদ

এ যেন জোড়া ফলা! এক দিকে, দলমা থেকে আসা হাতির দলের স্থায়িত্বকাল বাড়ছে। বাড়ছে দলে থাকা হাতির সংখ্যা। অন্য দিকে, রেসিডেন্ট হাতির সংখ্যাও আগে থেকে বেড়েছে। মূলত এই দুই কারণেই হাতির দৌরাত্ম্য ভয়ঙ্কর আকার নিয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুরে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ০৭ জুলাই ২০১৬ ০০:৪২
Share:

এ যেন জোড়া ফলা!

Advertisement

এক দিকে, দলমা থেকে আসা হাতির দলের স্থায়িত্বকাল বাড়ছে। বাড়ছে দলে থাকা হাতির সংখ্যা। অন্য দিকে, রেসিডেন্ট হাতির সংখ্যাও আগে থেকে বেড়েছে। মূলত এই দুই কারণেই হাতির দৌরাত্ম্য ভয়ঙ্কর আকার নিয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুরে। বন দফতরের একটি সূত্র জানাচ্ছে, দেশে যে সংখ্যক হাতি রয়েছে তার মাত্র ২ শতাংশ হাতি পশ্চিমবঙ্গে রয়েছে। অথচ, বছরে দেশে যে সংখ্যক মানুষের মৃত্যু হাতির হানায় হয়, তার ১৯ শতাংশই পশ্চিমবঙ্গের।

হাতির হানায় মৃতের সংখ্যা বাড়তে থাকায় বিরক্ত খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রথমে ঝাড়গ্রামে, পরে শিলিগুড়িতে প্রশাসনিক বৈঠকে তিনি এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রীকে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘দিনের পর দিন এটা হলে দফতর রেখে লাভ কী!’ চাপে পড়ে হাতি সমস্যা সমাধানের পথ খোঁজা শুরু করেছে বন দফতর। গত শনিবার মেদিনীপুরে এসে এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠক করে গিয়েছেন বনমন্ত্রী বিনয়কৃষ্ণ বর্মন।

Advertisement

দফতরের এক সূত্রে খবর, বৈঠকে সমস্যার ব্যাখ্যা করতে গিয়ে এই স্থায়িত্বকাল বেড়ে যাওয়ার দিকটিও উল্লেখ করেন পশ্চিম মেদিনীপুরের বনকর্তারা। পরে বিনয়বাবুও বলেন, “দক্ষিণবঙ্গে স্থায়ী ভাবে হাতি ছিল না। এটা ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যাবে। দলমা থেকে হাতি আসছে। হাতিরও রুচির পরিবর্তন হচ্ছে। তাই লোকালয়ে চলে আসছে।”

বন দফতর জানিয়েছে, এক সময় যেখানে দলমা থেকে আসা হাতির দল দক্ষিণবঙ্গে দু’-তিন মাস থাকত, এখন সেখানে তাদের স্থায়িত্বকাল আট থেকে দশ মাস! অর্থাৎ বছরের বেশিরভাগ সময়টাই তারা দক্ষিণবঙ্গে থাকছে। স্বভাবতই বাড়ছে ক্ষয়ক্ষতি। হাতির হানায় মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়ছে। এই অবস্থায় হাতির তাণ্ডব মোকাবিলাই পশ্চিম মেদিনীপুরের বন দফতরের কাছে কঠিনতম চ্যালেঞ্জ।

জেলার এক বনকর্তার মতে, হাতির তাণ্ডব মোকাবিলার বিষয়ে আলোচনা করতে হলে প্রায় ৩০ বছর পিছিয়ে যেতে হবে। ১৯৮৭ সালে প্রথম বিহারের দলমা থেকে গোটা পঞ্চাশেক হাতি ঝাড়গ্রামে এসেছিল। তখন তাদের গতিবিধি কংসাবতী নদীর ও পার পর্যন্তই সীমাবদ্ধ ছিল। পরে তাদের গতিবিধির পরিধি বাড়ে। কংসাবতী পেরিয়ে গোয়ালতোড়, গড়বেতা, বিষ্ণুপুর হয়ে দ্বারকেশ্বর নদ পেরিয়ে সোনামুখী, পাত্রসায়র পর্যন্ত যেতে শুরু করে হাতিগুলি। কিছু দিন আগে তো কয়েকটি হাতি দামোদর পেরিয়ে বর্ধমানে
পর্যন্ত চলে গিয়েছিল।

বন দফতরের এক সূত্রে খবর, এখন দলমার যে দল এখানে আসে, তাতে ১৩৫-১৪০টি হাতি থাকে। এই সময়ের মধ্যে রেসিডেন্ট হাতির সংখ্যাও বেড়েছে। এখন রেসিডেন্ট হাতির সংখ্যা প্রায় ৫০। জেলার এক বনকর্তা মানছেন, “শুধু মানুষের মৃত্যু কিংবা জখম হওয়া নয়, হাতির হানায় গবাদি পশুর মৃত্যু, ঘরবাড়ি ও ফসলের ক্ষতি রোজকার ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটা চিন্তার।” কী ভাবে উদ্বেগজনক এই পরিস্থিতি বন দফতর সামলায়, সেটাই এখন দেখার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন