ডিলারদের মধ্যে স্বচ্ছতা আনতে উদ্যোগ

এ বার ইপিওএস বাধ্যতামূলক রেশনে

ইপিওএস যন্ত্র ব্যবহারের শর্ত অবশ্য জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা আইনে রয়েছে।

Advertisement

নুরুল আবসার

উলুবেড়িয়া শেষ আপডেট: ০৯ জুন ২০১৯ ০৫:২৪
Share:

ইপিওএস যন্ত্র

‘খাদ্য সুরক্ষা আইন’ অনুযায়ী গরিব মানুষকে সস্তায় চাল ও আটা দেওয়ার ক্ষেত্রে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে প্রায়ই। এ বার রেশন ডিলারদের মধ্যে স্বচ্ছতা আনতে উঠে পড়ে লাগল রাজ্য খাদ্য দফতর।

Advertisement

প্রথম ধাপ হিসাবে মধ্যে রেশন ডিলারদের ইপিওএস (ইলেকট্রনিক পয়েন্ট অফ সেল) যন্ত্র ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হল। শুক্রবার খাদ্য ভবনে রেশন ডিলারদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে একটি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক করেন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। বৈঠক শেষে তিনি বলেন, ‘‘রাজ্যে মোট ২১ হাজার ডিলার আছেন। প্রত্যেককে ইপিওএস যন্ত্র দেওয়া হয়েছে। প্রশিক্ষণও দেওয়া হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে রাজ্যের সর্বত্র এই যন্ত্র ব্যবহার করে ডিলাররা গ্রাহকদের সঙ্গে লেনদেনের হিসাব রাখবেন। আগামী দু’মাসের মধ্যেই সারা রাজ্যে এই যন্ত্রের ব্যবহার চালু হয়ে যাবে।’’

ইপিওএস যন্ত্র ব্যবহারের শর্ত অবশ্য জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা আইনে রয়েছে। ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা আইন অনুযায়ী গরিব মানুষকে রেশনের মাধ্যমে সস্তায় চাল ও আটা দেওয়া হচ্ছে। রাজ্যে মোট ৬ কোটি ১ লক্ষ গ্রাহক ‘জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা’ আইন অনুযায়ী এই প্রকল্পের সুবিধা পান। তাঁদের কার্ড প্রতি ২ টাকা কিলোগ্রাম চাল ও সাড়ে তিন টাকা কিলোগ্রাম দরে আটা সরবরাহ করা হয়। এর জন্য বিপুল পরিমাণ টাকা ভর্তুকি দেয় কেন্দ্রীয় সরকার।

Advertisement

ইপিওএস যন্ত্র কী

• এই যন্ত্রের সঙ্গে আছে স্ক্যানার। কেন্দ্রীয় সরকারের ডিজিট্যাল রেশন কার্ড এবং খাদ্যসাথী প্রকল্পের কার্ড নিয়ে গ্রাহকেরা এলে সেই কার্ড স্ক্যানারের সামনে ধরা হবে।
• স্ক্যানারের সামনে ধরলেই ইপিওএস যন্ত্রের মনিটরে গ্রাহকের নাম ফুটে উঠবে। তিনি কতটা চাল বা আটা পেতে পারেন তা-ও ফুটে উঠবে।
• গ্রাহকের কাছ থেকে টাকা নিয়ে ডিলার যন্ত্রে নির্দিষ্ট অপশনে ক্লিক করলেই গ্রাহকের নামে রসিদ আসবে।
• ইওপিএস যন্ত্রে গ্রাহক যে চাল ও আটা বা গম নিলেন, সেই তথ্য কেন্দ্রীয় ভাবে নথিভুক্ত হয়ে যাবে রাজ্য খাদ্য দফতর এবং কেন্দ্রীয় সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগে। সেখানে ওই ডিলারের নামে কম্পিউটারে ক্লিক করে তথ্য জানা যাবে।
• ডিলার সত্যিই গ্রাহকদের গম-আটা দিচ্ছেন না ভুয়ো হিসাব দিচ্ছেন, তা পরিষ্কার জানা যাবে।
• এই যন্ত্রে বেশ কিছু অতিরিক্ত সুবিধাও পেতে পারবেন রেশন গ্রাহকেরা। মোবাইল রিচার্জ, বিদ্যুৎ বিল পেমেন্ট, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলা, ব্যাঙ্ক থেকে টাকা তোলার মতো ১৪টি অতিরিক্ত পরিষেবা দিয়ে বাড়তি আয় করতে পারবেন রেশন ডিলার।

এর বাইরে রাজ্য সরকারও ‘খাদ্যসাথী’ প্রকল্পে মোট ২ কোটি ৮৫ লক্ষ মানুষকে সস্তায় চাল ও আটা দিয়ে থাকে। এর জন্য ভর্তুকি দেয় রাজ্য সরকার। ‘জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা’ আইনের শর্ত অনুযায়ী যাঁরা সস্তায় চাল ও আটা পাবেন রেশন ডিলার সেই গ্রাহকদের লেনদেনের হিসাব ইপিওএস যন্ত্রের মাধ্যমে রাখবেন। এর ফলে লেনদেনে স্বচ্ছতা আসবে। কোন গ্রাহক তাঁর জন্য বরাদ্দকৃত চাল ও আটা তুলছেন তা এই যন্ত্রের মাধ্যমে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের আধিকারিকরা সরাসরি দেখতে পাবেন। সেই অনুযায়ী প্রতি মাসে চাল ও আটার বরাদ্দ নির্ধারণ হবে। তবে শুধু জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা আইনের আওতাভুক্ত গ্রাহকরাই নন, ‘খাদ্যসাথী’ প্রকল্পের গ্রাহকদের লেনদেনের হিসাবও ওই যন্ত্রের মাধ্যমে রাখা হবে বলে রাজ্য খাদ্য দফতর সূত্রের খবর।

কেন এই ব্যবস্থা? রাজ্য খাদ্য দফতরের আধিকারিকদের একটা অংশ জানান, সব গ্রাহক তাঁদের জন্য বরাদ্দকৃত চাল ও আটা তোলেন না। সেগুলি অনেক ডিলারই খোলা বাজারে বিক্রি করেন। রাজ্য খাদ্য দফতরের আধিকারিকদের দাবি, খাতায় লিখে হিসাব রাখা হয় বল‌েই ডিলারদের একটা অংশ এই অসাধু উপায় অবলম্বন করেন।

রাজ্য খাদ্য দফতরের আধিকারিকদের এই মন্তব্যের প্রমাণও মেলে শুক্রবারের বৈঠকে। বৈঠকে ডিলারদের প্রতিনিধিরা যন্ত্র ব্যবহারের পাশাপাশি তাঁদের কমিশন বাড়ানোর জন্য খাদ্যমন্ত্রীকে অনুরোধ করেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ডিলারের দাবি, যন্ত্র ব্যবহার হলে সব হিসাব নিখুঁতভাবে হবে। ফলে তাঁদের আয় কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সেই কারণেই তাঁরা মন্ত্রীর কাছে কমিশন বাড়ানোর জন্য দাবি করেছেন।

দুর্নীতির প্রসঙ্গ এড়িয়ে ওয়েস্ট বেঙ্গল এম আর ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশনের রাজ্য কোষাধ্যক্ষ বিকাশ বাগ বলেন, ‘‘কমিশন না বাড়ালে ব্যবসা চালাতে সমস্যা হবে।’’ খাদ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘ডিলাররা তাঁদের কিছু সমস্যার কথা জানিয়েছেন। তাঁদের লিখিত ভাবে সব কথা জানাতে বলা হয়েছে। উপযুক্ত মনে হলে তা বিবেচনা করা হবে।’’

একই সঙ্গে প্রশ্ন উঠেছে ইপিওএস যন্ত্রের সঙ্গে আধার সংযোগ ঘটানোর বিষয়টি নিয়েও। রাজ্য খাদ্য দফতরের এক পদস্থ আধিকারিক জানান, কেন্দ্র চাপ দিচ্ছে গ্রাহকদের আধার সংযোগ করানোর জন্য। এটা দ্রুত করা না হলে কেন্দ্র এই প্রকল্পে ভর্তুকি বন্ধ করে দেবে বলেও জানিয়েছে। তবে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘এখনও রাজ্যে অন্তত ২০ শতাংশ গ্রাহকের আধার কার্ড হয়নি। তাই এই প্রকল্পে আধার সংযোগ বাধ্যতামূলক করা কঠিন। তা ছাড়া আধার সংযোগ করাতে হলে নবান্নের অনুমতিও লাগবে। তা সত্ত্বেও আমরা আধার সংযোগ করানোর অনুমতি চেয়ে ফাইল নবান্নে পাঠিয়েছি। সেখান থেকে কোনও নির্দেশ এলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও। সাবস্ক্রাইব করুনআমাদেরYouTube Channel - এ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন