কর্তব্যে বিচ্যুতি, ভাঙড়ের মামলায় তিরস্কৃত বিচারক

ভাঙড়ে বিদ্যুতের গ্রিড নিয়ে আন্দোলনের জেরে কয়েক জন বিক্ষোভকারীর বিরুদ্ধে ইউএপিএ বা বেআইনি কার্যকলাপ প্রতিরোধ আইন প্রয়োগ সংক্রান্ত একটি মামলায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী এ দিন ম্যাজিস্ট্রেটের ওই কাজের সমালোচনা করেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৬ জুলাই ২০১৭ ০৫:৩৫
Share:

ফাইল চিত্র।

বিদ্যুৎ গ্রিডের বিরুদ্ধে ভাঙড়ে আন্দোলন নিয়ে রাজনৈতিক চাপান-উতোর শেষ হয়নি। তার মধ্যেই ওখানকার গোলমালের মামলায় নিম্ন আদালতের বিচারক এবং পুলিশের মধ্যে অবাঞ্ছিত আপসের ইঙ্গিত দিয়ে মঙ্গলবার সেই বিচারককে তীব্র তিরস্কার করল কলকাতা হাইকোর্ট।

Advertisement

বিচার ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত করণিকের যে-কাজ করার কথা, ভাঙড়-মামলায় বারুইপুর আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট সেটা এক জন পুলিশ অফিসারকে দিয়ে করানোয় হাইকোর্ট ক্ষুব্ধ। হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণ, এই ধরনের কাজ বিচার ব্যবস্থা তথা বিচারকের সঙ্গে পুলিশের ‘গুরুতর আপস’-এর প্রমাণ। নিরপেক্ষ বিচার ব্যবস্থায় এটা কখনওই কাম্য নয়।

ভাঙড়ে বিদ্যুতের গ্রিড নিয়ে আন্দোলনের জেরে কয়েক জন বিক্ষোভকারীর বিরুদ্ধে ইউএপিএ বা বেআইনি কার্যকলাপ প্রতিরোধ আইন প্রয়োগ সংক্রান্ত একটি মামলায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী এ দিন ম্যাজিস্ট্রেটের ওই কাজের সমালোচনা করেন। রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্তকে বারুইপুরের ম্যাজিস্ট্রেটের সই সংবলিত একটি নথি দেখিয়ে বিচারপতি বাগচী মন্তব্য করেন, ‘‘ওই বিচারক নিজের কর্তব্য থেকে বিচ্যুত হয়েছেন।’’

Advertisement

আইনজীবী শিবিরের একাংশের পর্যবেক্ষণ, সাম্প্রতিক কালে কোথাও অতিসক্রিয়তা আবার কোথাও কোথাও নিষ্ক্রিয়তার জন্য পুলিশকে বারবার দুরমুশ করেছে উচ্চ আদালত। তবে ভাঙড়ের মতো মামলায় হাইকোর্ট এ দিন যে-ভাবে বিচারক-পুলিশ আপসের সমালোচনা করেছে, তা সচরাচর দেখা যায় না।

ভাঙড়ে বিক্ষোভের ঘটনায় শর্মিষ্ঠা চৌধুরী-সহ ন’জনের বিরুদ্ধে ইউএপিএ-তে মামলা করেছে রাজ্য সরকার। ওই অভিযুক্তদের কৌঁসুলি বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য জানান, এই আইনে চার্জশিট পেশের জন্য পুলিশকে ১৮০ দিন সময় দেওয়া হয়েছে। ভাঙড়ে আন্দোলন হয় জানুয়ারিতে। মামলার তদন্তকারী অফিসার ইউএপিএ-তে ধৃতদের জেলে আটক রাখার মেয়াদ বাড়ানোর জন্য বারুইপুর আদালতে আবেদন জানান এপ্রিলে। সেই আবেদন মঞ্জুর করেন ওই আদালতের অতিরিক্ত মুখ্য বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট।

ওই আইনজীবী জানান, ভাঙড়-কাণ্ডে ইউএপিএ-তে অভিযুক্তেরা প্রথমে তাঁদের বিরুদ্ধে পুলিশের দায়ের করা এফআইআর এবং পরে পুলিশের দায়ের করা চার্জশিট খারিজের আবেদন জানিয়ে বিচারপতি বাগচীর আদালতে মামলা করেন। তার শুনানিতে রাজ্যের পক্ষ থেকে একটি নথি পেশ করা হয়। সেই নথি খুঁটিয়ে দেখেন বিচারপতি বাগচী। দেখা যায়, আটকে রাখার মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন মঞ্জুর করার নির্দেশ লিখেছেন গভর্নমেন্ট রেকর্ড অফিসের (জিআর অফিস) এক পুলিশ অফিসার। ম্যাজিস্ট্রেট সেই লেখার তলায় ‘অনুমতি দেওয়া হচ্ছে’ কথাটি লিখে সই করেছেন।

বিকাশবাবু জানান, এই মামলায় বারুইপুর আদালতের সব নথি তাঁর আদালতে পেশ করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি বাগচী। কাল, বৃহস্পতিবার সেই সব নথি দাখিল করতে হবে রাজ্য সরকারকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন