পিংলা বিস্ফোরণ

সিআইডির জালে ফেরার তৃণমূল কর্মী

পিংলা বিস্ফোরণ কাণ্ডে আরও একজনকে গ্রেফতার করল সিআইডি। গত সাত মাস গা ঢাকা দিয়ে থাকা নিমাই মাইতিকে সোমবার সন্ধ্যায় ডেবরার চণ্ডীপুর থেকে গ্রেফতার করে সিআইডি-র একটি দল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ১২ জানুয়ারি ২০১৬ ০১:৪৭
Share:

পিংলা বিস্ফোরণ কাণ্ডে আরও একজনকে গ্রেফতার করল সিআইডি। গত সাত মাস গা ঢাকা দিয়ে থাকা নিমাই মাইতিকে সোমবার সন্ধ্যায় ডেবরার চণ্ডীপুর থেকে গ্রেফতার করে সিআইডি-র একটি দল। এক সূত্র মারফত্‌ সিআইডির কাছে খবর আসে, পিংলা বিস্ফোরণ কাণ্ডে অন্যতম অভিযুক্ত নিমাই নিজের পরিচয় গোপন করে ডেবরার ওই এলাকায় রয়েছে। এ দিন বিকেলে সিআইডির একটি দল ওই এলাকায় যায়। সন্ধ্যায় হাতেনাতে ধরা পড়ে যায় নিমাই। আজ, মঙ্গলবার ধৃতকে মেদিনীপুর সিজেএম আদালতে হাজির করা হবে। তদন্তের স্বার্থে ধৃতকে হেফাজতেও চাইতে পারে সিআইডি।

Advertisement

ঘটনার পরই গ্রেফতার হয় কারখানার অন্যতম মালিক রঞ্জন মাইতি। রঞ্জন এলাকায় তৃণমূল কর্মী বলেই পরিচিত। তদন্তে নেমে গোয়েন্দারা জানতে পারেন, ঘটনায় রঞ্জনের ভাই নিমাইও যুক্ত। নিমাইয়ের একটি পিক- আপ ভ্যান রয়েছে। এই ভ্যানে করে বিভিন্ন এলাকায় বাজি সরবরাহ করা হত। এই অবস্থায় রঞ্জনের ভাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করা জরুরি। ঘটনার পর নিমাইয়ের খোঁজে বিভিন্ন এলাকায় হানা দিয়েছে সিআইডি। অবশ্য তার নাগাল তারা পায়নি। দীর্ঘদিন গা- ঢাকা দিয়ে থাকার পরে সোমবার সন্ধ্যায় সে ধরা পড়ে যায়। সিআইডির এক কর্তা বলেন, “এক সূত্র মারফত্‌ খবর এসেছিল, নিমাই ডেবরার ওই এলাকায় রয়েছে। সেই মতো ওই এলাকায় গিয়ে ওকে ধরা হয়েছে।”

ঘটনাটি গত ৬ মে-র। ওই দিন রাতে পিংলার ব্রাহ্মণবাড়ে ভয়াবহ বিস্ফোরণ হয়। ঘটনাস্থলে মৃত্যু হয় ১২ জনের। পরে কলকাতার হাসপাতালে আরও একজন মারা যান। জখম হয় ৩ জন। মৃতদের মধ্যে ৯ জনই নাবালক। ঘটনা নিয়ে রাজ্য- রাজনীতি তোলপাড় হয়। গোড়ায় তদন্ত শুরু করেছিল পুলিশই। পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে তদন্তভার হাতে নেয় সিআইডি। আগে দু’জন গ্রেফতার হয়। একজন শেখ সুরজ। অন্যজন রঞ্জন মাইতি।

Advertisement

রঞ্জন কারখানার অন্যতম মালিক। আর সুরজ মুর্শিদাবাদের সুতি থেকে অল্পবয়সী ছেলেদের টাকার লোভ দেখিয়ে পিংলার এই কারখানায় নিয়ে আসার ব্যাপারে মধ্যস্থতা করত। ভয়াবহ বিস্ফোরণের পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেছিলেন, পিংলার ব্রাহ্মণবাড়ের বেআইনি বাজি কারখানায় বিয়ে বাড়ির জন্য বাজি তৈরি হচ্ছিল। একই দাবি করেছিলেন জেলার পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষও। অবশ্য পরে রাজ্য সরকারেরই ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চ বা আইবি- র গোয়েন্দারা রিপোর্টে জানান, পটকা বাজির পাশাপাশি দেশি বোমাও তৈরি হত এই বেআইনি বাজি কারখানায়। সিআইডির চার্জশিটে অবশ্য মুখ্যমন্ত্রীর দাবিকেই মান্যতা দেওয়া হয়।

ঘটনার ৮৯ দিনের মাথায় গত ৩ অগস্ট মেদিনীপুর সিজেএম আদালতে জমা দেওয়া চার্জশিটে তদন্তকারী সংস্থা জানিয়ে দেয়, পিংলার ব্রাহ্মণবাড়ে বেআইনি বাজি কারখানাই ছিল। মামলার বিচার চলছে মেদিনীপুর আদালতে। মুস্তাক শেখ নামে বিস্ফোরণে জখম এক কিশোরের গোপন জবানবন্দিও নিয়েছে সিআইডি। বস্তুত, এই পিংলা কাণ্ড নিয়ে রাজ্য- রাজনীতিতে কম শোরগোল হয়নি। বিস্ফোরণস্থল তড়িঘড়ি সাফসুতরো করা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। ধৃত রঞ্জনের সঙ্গে দলের যোগাযোগের কথা যেমন মানতে রাজি হয়নি তৃণমূল, তেমন রঞ্জনের ভাই নিমাইয়ের সঙ্গেও দলের যোগাযোগের কথা মানতে রাজি হচ্ছে না শাসক দল।

নিমাই মাইতি এলাকায় তৃণমূল কর্মী বলেই পরিচিত। যদিও তৃণমূলের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা কার্যকরী সভাপতি নির্মল ঘোষের জবাব, “ও দলের কেউ নয়। দলের সঙ্গে ওর কোনও যোগাযোগও ছিল না।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন