Jan Sangh Party

হিন্দু মহাসভার পাল্টা নতুন ‘জন সঙ্ঘ’! বাংলার দায়িত্ব পাওয়া ‘গেরুয়া’ কার্তিক নেতা মানেন শুভেন্দুকেই

একটা সময়ে কার্তিক ভট্টাচার্য ছিলেন রাজ্যে হিন্দু মহাসভার নেতা। পরে চন্দ্রচূড় গোস্বামীদের হাতে চলে যায় সংগঠন। কার্তিক এখন জন সঙ্ঘ পার্টির রাজ্য সভাপতি। উত্তরপ্রদেশের দল বাংলায় কার সুবিধা করে দেবে?

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ নভেম্বর ২০২৩ ০৯:৩০
Share:

অন্য দল তবু শুভেন্দু অধিকারীকে নেতা মানেন কার্তিক ভট্টাচার্য। — ফাইল চিত্র।

উত্তরপ্রদেশের হিন্দুত্ববাদী দল এ বার সক্রিয় হতে চায় বাংলায়। লোকসভা নির্বাচনের আগে আগে সেই সংগঠনের দায়িত্ব পেয়েছেন হিন্দু মহাসভার প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি কার্তিক ভট্টাচার্য। পুরনো দল ছেড়ে তিনি যোগ দিয়েছেন জন সঙ্ঘ পার্টি নামে উত্তরপ্রদেশের একটি দলে। এটা বিজেপির কাছে চিন্তার না-হয়ে সুবিধার হবে বলেই কার্তিকের ইঙ্গিত।

Advertisement

আসল হিন্দু মহাসভা কোনটা? কে রাজ্যের আসল নেতা? এ নিয়ে চন্দ্রচূড় গোস্বামী বনাম কার্তিক ভট্টাচার্যের বিবাদ ছিল অনেক দিনের। একটা সময়ে দু’জনেই দাবি করতেন, অখিল ভারতীয় হিন্দু মহাসভার রাজ্য শাখার দায়িত্ব তাঁর। আসলে হিন্দু মহাসভার কোনটি আসল, তা নিয়ে জাতীয় স্তরেও রয়েছে বিতর্ক। কলকাতায় গান্ধীরূপী অসুর বানিয়ে প্রচারে আসা চন্দ্রচূড় নন, তিনিই যে ‘আদি’ হিন্দু মহসভার রাজ্য নেতা, সেই দাবি করে বর্ধমানের বাসিন্দা কার্তিকের দাবি ছিল, তাঁকে নিয়োগ করেছেন খোদ সর্বভারতীয় সভাপতি স্বামী ত্রিদণ্ডী মহারাজ।

যদিও সে দাবি এখন অতীত। হিন্দু মহাসভা ছেড়ে কার্তিক যোগ দিয়ে ফেলেছেন নতুন দলে। সঙ্গে সঙ্গেই পেয়ে গিয়েছেন তার রাজ্য সভাপতির দায়িত্বও। উত্তরপ্রদেশে ২০১৭ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে আগে জন্ম নেয় এই দল। নির্বাচন কমিশনের তালিকায় আঞ্চলিক দল হিসাবে স্বীকৃতিও পায় ‘জন সঙ্ঘ পার্টি’। ২০১৭ এবং ২০২২ সালে উত্তরপ্রদেশ বিধানসভা ভোটে কয়েকটি আসনে প্রার্থীও দিয়েছিল জয়েন্দ্র সিংহের সেই দল। তবে জয় মেলেনি কোথাও। এ বার সেই দলেরই পশ্চিমবঙ্গ শাখার সভাপতি হয়েছেন কার্তিক। হিন্দু মহাসভা ছেড়ে দেওয়ার কারণ হিসাবে তিনি বলেন, ‘‘হিন্দু মহাসভার অনেক ভাগ। বাংলায় তো বটেই, সর্বভারতীয় ক্ষেত্রেও। তা ছাড়া নির্বাচন কমিশনের স্বীকৃতি নেই। ভোটে লড়তে হলে নির্দল প্রার্থী হতে হয়। কিন্তু জন সঙ্ঘ পার্টির হয়ে ভোটে লড়া যাবে। তা ছাড়া, যে আদর্শ নিয়ে ওই দল তৈরি হয়েছিল, তার থেকে এখন অনেক দূরে চলে গিয়েছে। বাংলায় হিন্দু মহাসভার নামে যা করা হচ্ছে, সেটা সমর্থনযোগ্য নয়।’’

Advertisement

লোকসভা নির্বাচনে বাংলায় প্রার্থী দেওয়ার কথা ভাবছেন না কার্তিক। বরং, তিনি বিজেপির শুভেন্দু অধিকারীকেই ‘নেতা’ মনে করেন। কার্তিক স্পষ্ট করেই আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেন, ‘‘বিজেপির সঙ্গে কোনও বিবাদ নেই আমাদের। নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে দেশ যে পথে এগোচ্ছে তাতে আমাদের সমর্থন রয়েছে।’’ আর বাংলার রাজনীতি নিয়ে কথা বলতে গিয়ে কার্তিক বলেন, ‘‘বিরোধী দলনেতা হিসাবে শুভেন্দু অধিকারীর ভূমিকাও আমরা সমর্থন করি। বাংলায় অতীতে কোনও বিরোধী দলনেতাকে এমন লড়াকু ভূমিকা নিতে দেখা যায়নি। উনি সত্যিই নেতা।’’

তবে কি বিজেপির দ্বিতীয় শক্তি হিসাবেই কাজ করবে কার্তিকের দল? বিক্ষুব্ধ বিজেপি কর্মী, সমর্থকরাই তাঁর সম্পদ? কার্তিক বলেন, ‘‘আমাদের অনেক পুরনো কর্মী রয়েছেন। যাঁরা এখন আর হিন্দু মহাসভার উপরে আস্থা রাখছেন না। আর এটাও ঠিক নয় যে, আমরা বিজেপির হয়ে কাজ করব। আলাদা দল হিসাবেই রাজ্য সংগঠন গড়ে তোলা আমার লক্ষ্য।’’ একই সঙ্গে তাঁর দাবি, শ্যামপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় যে লক্ষ্য নিয়ে ভারতীয় জনসঙ্ঘ গঠন করেছিলেন, সেই আদর্শই তাঁর দলের পাথেয়।

প্রসঙ্গত, শ্যামাপ্রসাদ ভারতীয় জনসঙ্ঘ তৈরি করেছিলেন ১৯৫১ সালে। ১৯৬২, ১৯৬৭ এবং ১৯৭১ সালের লোকসভা নির্বাচনে যথাক্রমে ১৪, ৩৫ এবং ২২টি আসনে জয়ী হয়েছিল সেই জনসঙ্ঘ। ১৯৭৭ সালে জনতা পার্টির সঙ্গে জনসঙ্ঘ মিশে যায়। ১৯৮০ সালে ভেঙে বেরিয়ে জনসঙ্ঘেরই উত্তরসূরি হিসাবে বিজেপির জন্ম হয়। অন্য দিকে, ১৯১৫ সালে হিন্দু মহাসভার প্রতিষ্ঠা। তখন নাম ছিল সর্বদেশক হিন্দু সভা। পরে ১৯২১ সালে হয় অখিল ভারতীয় হিন্দু মহাসভা। ১৯৫১ সালের লোকসভা নির্বাচনে চারটি আসনে জয় পায় তারা। এর পরে ক্রমেই কমতে থাকে শক্তি। শেষ বার ১৯৮৯ সালে লোকসভায় একটি আসনে জিতেছিল।

এখন বাংলায় হিন্দু মহাসভার নেতা চন্দ্রচূড়ও একটা সময় পর্যন্ত বিজেপির সঙ্গেই ছিলেন। গত বিধানসভা নির্বাচনের সময় বিজেপির একটি কমিটিতেও ছিলেন তিনি। ভবানীপুর উপনির্বাচনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে নির্দল হিসাবে প্রার্থীও হন। পরে হিন্দু মহাসভার নেতা হিসাবে নিজেকে দাবি করলেও অনেকেই তাঁকে বিজেপির ‘দোসর’ মনে করেছিল। এখন আবার বিজেপি অভিযোগ করে, তৃণমূলের হয়েই রাজনীতি করেন চন্দ্রচূড়রা। তবে এ সব বিতর্কের মধ্যে থাকতে নারাজ কার্তিক। তিনি বলেন, ‘‘আমি একটা স্বীকৃত রাজনৈতিক দলের রাজ্যের দায়িত্ব পেয়েছি। সেই দলের নীতি মেনে সংগঠন গড়াই আমার লক্ষ্য।’’ রাজ্য বিজেপির পক্ষ থেকে অবশ্য নতুন দলের সঙ্গে কোনও সংস্পর্শ নেই বলেই দাবি করা হয়েছে। দলের মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘ওই দলের নাম আগে শুনিনি। তবে কেউ সমর্থন করলে তো ভাল। সকলেই বিজেপিকে সমর্থন করতে চাইবে কারণ, সবাই তৃণমূলের অপশাসন থেকে মুক্তি চায়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন