অস্ত্রোপচার করার কথা, বর্ধমানে ফেরাটা জরুরি

আমার ন’বছরের মেয়ে রূপকথার পায়ে যখন সাগরের ঢেউ এসে নুইয়ে পড়ল, ওর চোখে ঝিলিক দেখলাম। আর খিলখিলিয়ে হাসি। বাবা হিসেবে সে এক পরম পাওয়া।

Advertisement

দেবদূত বন্দ্যোপাধ্যায়

নীল দ্বীপ (আন্দামান) শেষ আপডেট: ০৯ ডিসেম্বর ২০১৬ ০৩:৪৭
Share:

আমার ন’বছরের মেয়ে রূপকথার পায়ে যখন সাগরের ঢেউ এসে নুইয়ে পড়ল, ওর চোখে ঝিলিক দেখলাম। আর খিলখিলিয়ে হাসি। বাবা হিসেবে সে এক পরম পাওয়া। জায়গাটার প্রতি টান বেড়ে গেল। ছ’দিন কাটল হিসেব মতো, ঠিক যেমনটা ভেবে এসেছিলাম। কিন্তু শেষে যে এমন হবে, কল্পনার অতীত ছিল। বৃহস্পতিবার হোটেলের ঘরে বসে মনে হচ্ছে, কোনও মতে ফিরলে বাঁচি!

Advertisement

এখন রূপকথার মুখ ভার, আকাশের থেকেও! এই প্রথম সে ভিন্‌ রাজ্যে ঘুরতে এসেছে। কিন্তু যা অভিজ্ঞতা হল! কবে যে এই আকাশভাঙা বৃষ্টি আর সমুদ্রের কানফাটা গর্জনটা একটু কমবে। আমার স্ত্রী তো দুশ্চিন্তায় অসুস্থ হয়ে পড়েছে।১ ডিসেম্বর আন্দামান পৌঁছেছিলাম। কলকাতা থেকে বিমানে পোর্ট ব্লেয়ার। কী মনোরম আবহাওয়া। কখনও সেলুলার জেল, কখনও মারিনা পার্ক ঘুরে বেড়াচ্ছি আমরা ছ’জন। আমার সঙ্গে আমার এক বন্ধু ও তাঁর পরিবারও এসেছে। কিন্তু নীল দ্বীপে এসে এ ভাবে আটকে পড়ব, ভাবিনি। আবহাওয়া বিশ্বাসঘাতকতা না করলে বৃহস্পতিবার বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে রোগী দেখার কথা ছিল আমার। কিন্তু যা ঝড়-বৃষ্টি, তাতে জলপথ পুরো বন্ধ। পোর্ট ব্লেয়ার ফেরার কোনও উপায় নেই।

ঠিক ছিল, মঙ্গলবার রাতে নীল দ্বীপ থেকে পোর্ট ব্লেয়ার ফিরব। বুধবার সকালের উড়ানে কলকাতা। কিন্তু কোথায় কী! মঙ্গলবার সকালেও ভাবতে পারিনি এ ভাবে আটকে পড়ব। এখনও অবশ্য থাকা-খাওয়ার অসুবিধা হয়নি। যে হোটেলে আছি, সেখানে যথেষ্ট ব্যবস্থা রয়েছে। তবে জলপথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পোর্ট ব্লেয়ার থেকে নীল দ্বীপে কিছুই আসছে না। জমানো রসদে ক’দিন চলবে জানি না! যদিও হোটেল কর্তৃপক্ষ বলছেন, যা আছে, আরও ক’দিন খাওয়া-দাওয়ার অসুবিধা হবে না।

Advertisement

কিন্তু বর্ধমানে ফেরাটা বড্ড জরুরি। আমি স্ত্রীরোগের চিকিৎসক। ফিরেই কয়েকটা অস্ত্রোপচার করার কথা ছিল। কোনও রকম খবর না পাঠিয়ে হাসপাতালে অনুপস্থিত। জানি না কী হবে। সম্ভবত খারাপ আবহাওয়ার জন্য আমার মোবাইলের নেটওয়ার্কও এখানে কাজ করছে না। হোটেলের ফোন থেকে ক’জনের সঙ্গেই বা যোগাযোগ করতে পারছি।

আন্দামান ভ্রমণের অভিজ্ঞতা যে এত তিক্ত হয়ে দাঁড়াবে, ভাবতেও পারিনি।

*লেখক বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসক

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন