তালাকের পরে জুড়ল সংসার, ফতোয়া বয়কটের

মন ভিজতে সময় লাগেনি। মাস দুয়েকের মধ্যেই বাপ-মা টের পেয়েছিলেন, কাজটা ঠিক হয়নি। ভুল বোঝাবুঝি মিটিয়ে রেজিস্ট্রি করে ফের বিয়ে করে ভাঙা সংসার জুড়ে নিয়েছিলেন তাঁরা। তাতেই চোখ টাটিয়েছিল গ্রামের মুরুব্বিদের।

Advertisement

সেবাব্রত মুখোপাধ্যায়

নওদা শেষ আপডেট: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০২:০২
Share:

নিতান্তই আটপৌরে ঝগড়া, স্বামী-স্ত্রী’র মধ্যে পারিবারিক টানাপড়েনে যেমন হয়।

Advertisement

রাগের মাথায়, সেই মন কষাকষিতেই স্ত্রীকে তালাক দিয়ে বসেছিলেন শেখ সাদি। ‘ঢের হয়েছে’ বলে, রেগেমেগে এক কাপড়েই ঘর ছেড়ে বাপের বাড়ি গিয়ে উঠেছিলেন মদিরা বিবিও, টেনে হিঁচড়ে সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলেন তাঁদের ছোট্ট ছেলে মাসুমকেও।

মন ভিজতে সময় লাগেনি। মাস দুয়েকের মধ্যেই বাপ-মা টের পেয়েছিলেন, কাজটা ঠিক হয়নি। ভুল বোঝাবুঝি মিটিয়ে রেজিস্ট্রি করে ফের বিয়ে করে ভাঙা সংসার জুড়ে নিয়েছিলেন তাঁরা। তাতেই চোখ টাটিয়েছিল গ্রামের মুরুব্বিদের। তালাকের পরে নিকাহ-হালালা না করেই ফের সংসার! আলমপুরের শেখ সাদি আর মদিরা বিবি’র পুরনো সংসারে তাই ফের নেমেছে আঁধার, বন্ধ হয়েছে ধোপা-নাপিত, পড়শির সঙ্গে বাক্যালাপ, এমনকী মসজিদে নমাজ পড়তে গিয়েও সাদিকে ফিরতে হয়েছে ধমক খেয়ে, ‘‘ধর্ম মানো না, তোমাদের আবার নমাজ, দূর হও!’’

Advertisement

বছর পাঁচেকের মাসুমও অনুযোগ করে, ‘‘লজেন্স কিনতে গিয়েছিলাম, দু’চড় মেরে তাড়িয়ে দিল!’’ তা নিয়ে অবশ্য তেমন অনুতাপ নেই আলমপুরের মুরুব্বি নুর আলম বিশ্বাসের, ‘‘শরিয়ত বলে তো একটা ব্যাপার আছে, তালাকের পরে পুরনো সংসারে ফিরতে হলে নতুন করে বিয়ে এবং তিন মাসের সহবাসের পরে তালাক না পেলে চলবে কী করে!’’ আর এক মুরুব্বি আব্দুল লতিফ মণ্ডল আরও সটান, ‘‘এ গ্রামে থাকতে গেলে নিয়ম মানতেই হবে!’’

তবে, সকলেই তো সমান নন, সদ্য সুপ্রিম কোর্টের রায়ের প্রসঙ্গ তুলে নওদার বিধায়ক কংগ্রেসের আবু তাহের খান বলেন, ‘‘সামাজিক বয়কট আবার চলতে পারে নাকি! আমরা ওই সব বেয়াদপি চলতে দেব না।’’ তোপ দাগলেও বয়কটের রাঙা চোখে ভাটা পড়েনি এখনও।

ওই গ্রামীণ দম্পতির পাশে দাঁড়িয়েছেন ‘রোকেয়া নারী উন্নয়ন সমিতি’ও। সমিতির জেলা সম্পাদক খাদিজা বানু জানান, ‘‘ওই সব পুরনো কানুন আর নয়, এখন আর নিকাহ-হালালা চলবে না। আমি তো বুঝতেই পারছি না পুলিশ কেন ঠুঁটো জগন্নাথ হয়ে বসে আছে!’’ পুলিশ জানেই না। নওদার বিডিও লিটন সাহাও বলছেন, ‘‘দেখছি কী করা যায়।’’ তা হলে উপায়? মাসুম অত সব বোঝে না, উঠোনে বসে সে বিড় বিড় করে, ‘‘কেন আমাকে লজেন্স দেবে না!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন