দুর্গাপুর এনআইটির মৃত পড়ুয়া অর্পণ ঘোষ। —ফাইল চিত্র।
পরীক্ষা দিতে যাওয়ার আগে মায়ের সঙ্গে কথা হয়েছিল ছেলের। পরে পরীক্ষা দিয়ে বেরোনোর সময় ফোন করেছিলেন বাবাকেও। জানিয়েছিলেন, পরীক্ষা ভাল হয়নি! তার ঘণ্টাখানেক পরেই হোস্টেলের ঘর থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয় দুর্গাপুরের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির (এনআইটি) দ্বিতীয় বর্ষের পড়ুয়া অর্পণ ঘোষকে। পড়ুয়ার মৃত্যুতে দুর্গাপুর এনআইটি কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে প্রাথমিক চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ উঠেছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পড়ুয়াদের একাংশের সুরে পরিবারেরও দাবি, আইকার্ড দেখতে চেয়ে চিকিৎসায় দেরি করা হয়। যার জেরেই মৃত্যু হয় অর্পণের। তদন্ত করে দোষীদের শাস্তির দাবি করেছে পরিবার।
অর্পণ মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ছাত্র ছিলেন। তাঁর বাড়ি হুগলির ব্যান্ডেলে। দেবানন্দপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত জোড়াশ্বত্থতলার বাসিন্দা ছিলেন অর্পণ। পুলিশ জানিয়েছে, রবিবার দুপুরে অর্পণ পরীক্ষা দিয়ে হস্টেলে ফেরেন। পরে সহপাঠীরা হস্টেলে ফিরে অর্পণকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পান। সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে উদ্ধার করে প্রথমে প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব চিকিৎসাকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় গান্ধী মোড়ের একটি বেসরকারি হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসকেরা অর্পণকে মৃত বলে জানান। প্রাথমিক ভাবে পুলিশের অনুমান, মানসিক অবসাদের জেরে ওই ছাত্র আত্মঘাতী হয়ে থাকতে পারেন। দেহ ময়নাতদন্তের জন্য দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
অর্পণের মৃত্যুর খবর পেয়েই রবিবার রাতে দুর্গাপুরে গিয়েছিলেন তাঁর মা-বাবা। সোমবার সকালে তাঁরা ব্যান্ডেলের বাড়িতে ফেরেন। মা পলি ঘোষ বলেন, ‘‘পরীক্ষা দিতে যাওয়ার আগে সাড়ে ৮টা নাগাদ ফোনে কথা হয়েছিল ছেলের সঙ্গে। বলল, ‘মা টেনশন হচ্ছে।’ আমি বললাম, টেনশন করিস না। পরীক্ষা দিয়ে বাবাকে ফোন করে বলেছিল, পরীক্ষা ভাল হয়নি। বাবা ছেলেকে বলে, ‘ঠিক আছে, পরের পরীক্ষাটা ভাল করে দাও।’ এর এক ঘণ্টা পরেই ওই ঘটনা।’’
এনআইটি সূত্রে জানা গিয়েছে, অর্পণকে উদ্ধার করার সময়ে তাঁর নাড়ি সচল ছিল। প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে গেলে সেখানে তাঁর পরিচয়পত্র দেখতে চাওয়া হয়। হস্টেল থেকে পরিচয়পত্র আনতে দেরি হয়। তার পরে চিকিৎসক পরীক্ষা করে জানান, অর্পণকে অন্য হাসপাতালে স্থানান্তর করতে হবে। ওই সময় অ্যাম্বুল্যান্স আসতেও দেরি করে বলে তাঁদের অভিযোগ। পড়ুয়াদের একাংশের দাবি, অ্যাম্বুল্যান্সে অক্সিজেনও ছিল না। একই অভিযোগ করেছে অর্পণের পরিবারও। দেবানন্দপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য পীযূষ ধর বলেন, ‘‘আমরা দুর্গাপুরে গিয়ে জানতে পারলাম, অ্যাম্বুল্যান্সে অক্সিজেনের কোনও ব্যবস্থা ছিল না। আইকার্ড না থাকার কারণেও চিকিৎসায় দেরি হয়। মানসিক চাপ দেওয়া হত অর্পণের উপর।’’
অর্পণের মৃত্যুর পরেই রবিবার সন্ধ্যায় এনআইটির ডিরেক্টর অরবিন্দ চৌবেকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখান পড়ুয়াদের একাংশ। সেই পরিস্থিতিতে পদত্যাগ করেন ডিরেক্টর। পদত্যাগপত্রে তিনি জানিয়েছেন, দুর্গাপুর এনআইটি কর্তৃপক্ষের তরফে চিকিৎসায় যে গাফিলতি হয়েছে, তার জন্যই মৃত্যু হয়েছে ওই পড়ুয়ার। এনআইটি সূত্রে খবর, পড়ুয়ার মৃত্যুতে তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে।