‘মরলে যে বাঁচাইতে পারে তার সাথে প্রেম করলি’

জলপাইগুড়ির ধূপগুড়িতে গোবিন্দপল্লির বাড়িতে মারা যান তিনি। ঠুনকিরঝাড় জুনিয়র হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন কালাচাঁদ দাস। বাংলাদেশের রাধাচন্দ্রের কাছ থেকে দরবেশী গান শেখেন তিনি। সাধনার শেষে দাস পদবি থেকে দরবেশ হন।

Advertisement

অনিতা দত্ত ও রাজকুমার মোদক

ধূপগুড়ি শেষ আপডেট: ০৪ ডিসেম্বর ২০১৭ ০২:২৩
Share:

কালাচাঁদ দাস।

প্রধান শিক্ষকের চাকরি করতেন। গানের চানে এক সময় ভিক্ষা করতে হয়েছে। ট্রেনে ট্রেনে দরবেশি গান গেয়েছেন। তারপরে সেই গানের টানেই গিয়েছেন লন্ডন থেকে প্যারিস। প্রশংসা পেয়েছেন পণ্ডিত রবিশঙ্কর থেকে শান্তিদেব ঘোষের। দরবেশি গানের সেই শিল্পী কালাচাঁদ দরবেশ (৮৪) মারা গেলেন রবিবার সকালে।

Advertisement

জলপাইগুড়ির ধূপগুড়িতে গোবিন্দপল্লির বাড়িতে মারা যান তিনি। ঠুনকিরঝাড় জুনিয়র হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন কালাচাঁদ দাস। বাংলাদেশের রাধাচন্দ্রের কাছ থেকে দরবেশী গান শেখেন তিনি। সাধনার শেষে দাস পদবি থেকে দরবেশ হন। তারপরেও নিজেও গান বেঁধেছেন, গেয়েছেন অন্যের বাঁধা গানও। সেই সময়েই শিক্ষকতা ছেড়ে দেন।

কিন্তু তাঁকে নিয়েই এখন পড়াশোনা করতে হয়। দরবেশি গান তাঁর জন্যই সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে গিয়েছে। এই গানের প্রতি ভালবাসা বেড়েছে মানুষের। তিনিই প্রায় মুছে যাওয়া এই গান-রীতিকে টেনে নিয়ে গিয়েছেন। রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলার বিভাগীয় প্রধান লোকসংস্কৃতির গবেষক দীপককুমার রায় জানান, মারফতি ও মুর্শিদি গানে যে আচরণের রীতি, সংস্কার ও বিশ্বাস জড়িয়ে রয়েছে, তার যথার্থ উত্তরাধিকারী ছিলেন কালাচাঁদ দরবেশ। দরবেশি গানের মধ্যে দিয়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বার্তা তিনি ছড়িয়ে দিয়েছেন।

Advertisement

তাঁকে নিয়ে তথ্যচিত্র তৈরি হয়েছে ফ্রান্সে। সংগ্রহ করেছিলেন প্রায় দু’হাজার দরবেশি গান। একতারা, করতাল, খমক বাজিয়ে তিনি যখন গাইতেন, অপেক্ষা করত প্যারিস থেকে ধূপগুড়ি। আসর আচ্ছন্ন হয়ে থাকত তাঁর বিখ্যাত গান—‘‘আল্লা আদম রসুলউল্লাহ এক ঘরেতে তিনজনা / জিন্দেগি ভর রইলি ঘরে একবারও দেখাশোনা করলি না / কাজেই ছয় ডাকাতে যুক্তি করে তোর ঘরে বসে তোকেই মারে / মরলে যে বাঁচাইতে পারে তার সাথে প্রেম করলি না।’’ সঙ্গীতপ্রেমীরা বলছেন, মৃত্যুর পরেও তাঁকে কেউ ভুলবে না। তিনি প্রয়াণের পরেও বেঁচে থাকবেন।

অসুস্থ হওয়ার পরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতায় তাঁর চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। কালাচাঁদ দরবেশের মৃত্যুতে গভীর ভাবে মর্মাহত উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ, পর্যটন মন্ত্রী গৌতম দেব সহ জেলা পরিষদের সভাধিপতি নুরজাহান বেগম, ধূপগুড়ির বিধায়ক মিতালী রায়। রবীন্দ্রনাথবাবু বলেন, “আজ থেকে পৃথিবী থেকে হারিয়ে গেল দরবেশি গানের শেষ শিল্পী। কালাচাঁদবাবুর দরবেশি গানের জন্যই পৃথিবীর মানুষের কাছে ধূপগুড়ির নাম জনপ্রিয় হয়েছে। তার মৃত্যুতে আমি গভীরভাবে শোকাহত। তার পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাই। ”

রবীন্দ্রনাথবাবু আরও জানান, কালাচাঁদ দরবেশকে মানুষ যেন চিরদিন মনে রাখে সে জন্য ধূপগুড়িতে জায়গা দেখে তাঁর আবক্ষ মূর্তি বসানো হবে। থাকবে কালাচাঁদবাবুর জীবনী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন