বাদল মেঘ কি উবেই গেল, চিন্তায় চাষিরা

মৌসুমি বায়ু ওখানে মারকাটারি। খাস রাজস্থানের মরু তল্লাটও ভাসিয়ে দিচ্ছে। উত্তরাখণ্ডে মেঘ-ভাঙা বৃষ্টি নামিয়ে প্রাণ কাড়ছে। অথচ এখানে তার সব জারিজুরি খতম!

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ জুলাই ২০১৬ ০৪:০৪
Share:

মৌসুমি বায়ু ওখানে মারকাটারি। খাস রাজস্থানের মরু তল্লাটও ভাসিয়ে দিচ্ছে। উত্তরাখণ্ডে মেঘ-ভাঙা বৃষ্টি নামিয়ে প্রাণ কাড়ছে। অথচ এখানে তার সব জারিজুরি খতম!

Advertisement

তাই ভরা আষাঢ়েও রাঢ়বঙ্গে বৃষ্টির নাম নেই! দু’সপ্তাহ হয়ে গেল, দক্ষিণবঙ্গে বর্ষা ঢুকেছে। কিন্তু এক দিনের জন্যও দিনভর কালো মেঘে আকাশ ঢাকেনি। মুষলধারে বৃষ্টি নামেনি। বর্ষার প্রথম দু’সপ্তাহে দক্ষিণবঙ্গ-সহ গোটা পূর্ব ভারতে বৃষ্টির ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৬১%। যেখানে রাজস্থানের মরু অঞ্চলে বৃষ্টি হয়েছে স্বাভাবিকের ১১% বেশি!

প্রকৃতি এ হেন উলটপুরাণ দেখিয়েছে গত গ্রীষ্মেও। যখন শুকনো দক্ষিণবঙ্গ ভাজা-ভাজা হচ্ছিল, আর সোনার কেল্লার জয়সলমেরে দিনের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের কোঠাই ছুঁতে পারছিল না। ফের একই খেল। স্বাভাবিক নিয়মে উত্তর ভারতে বর্ষা ঢোকার কথা ১ জুলাই। এ বার পৌঁছে গিয়েছে সাত দিন আগে। এবং এতটাই সক্রিয় যে, শুক্রবার উত্তরাখণ্ডে মেঘ-ভাঙা বৃষ্টিতে অন্তত ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে, ২৫ জন নিখোঁজ। বাড়িঘর, রাস্তাঘাট, চাষের জমির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। অন্য দিকে ‘সুজলা-সুফলা’ দক্ষিণবঙ্গ নির্জলা। ক্যালেন্ডারে ভরা বর্ষার মরসুমে ঝকঝকে নীল আকাশে পেঁজা তুলোর মতো শরতের মেঘ। ভাদ্র মাসের মতো প্যাচপ্যাচে গরমে প্রাণ অতিষ্ঠ।

Advertisement

চাষের খেতে অশনি সঙ্কেত। বৃষ্টির অভাবে চাষিরা বীজতলা তৈরির কাজে নামতে পারছেন না। সাধারণত প্রথম দফার বৃষ্টিতে বীজতলা তৈরি হয়। গত ক’বছর ধরে সেই সময়টা পিছোচ্ছে। এখন জুনের শেষের পরিস্থিতি দেখেও প্রমাদ গুনছেন চাষিরা। বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি-আবহবিদ্যার অধ্যাপক শাওন বন্দ্যোপাধ্যায়ের হুঁশিয়ারি, ‘‘জুলাইয়ে বৃষ্টি ঠিকঠাক না-হলে বীজতলা নিয়ে ভুগতে হবে।’’

গত এপ্রিলে মৌসম ভবন দেশে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বর্ষার পূর্বাভাস দিয়েছিল। বস্তুত জুনের শেষে অনেক রাজ্যে তারই প্রতিফলন। রাজস্থানের মরু এলাকা তো বটেই, বিদর্ভ-ছত্তীসগঢ়ের ‘শুখা’মাটিও স্বাভাবিক বর্ষণে স্নিগ্ধ। পশ্চিম ও মধ্য ভারতে জুলাইয়েও ভাল বৃষ্টির আশা। পূর্বাঞ্চলের কপাল মন্দ কেন?

এর নেপথ্যে মে মাসে হাজির হওয়া বঙ্গোপসাগরের ঘূর্ণিঝড় ‘রোয়ানু’র ভূমিকা দেখতে পাচ্ছেন আবহবিদদের বড় অংশ। ওঁদের ব্যাখ্যা: বর্ষা আসার মুখে বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড় তৈরি হলে বর্ষার ট্রেন বেলাইন হয়ে যায়। যেমন হয়েছিল ২০০৯-এ। সে বছর ২৫ মে আছড়ে প়ড়া ‘আয়লা’র জেরে বর্ষার দফারফা হয়ে গিয়েছিল। ‘‘মৌসুমি বায়ুকে দক্ষিণবঙ্গ-সহ পূর্ব ভারতে টেনে আনা ও ধরে রাখার জন্য বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণাবর্ত বা নিম্নচাপ দরকার পড়ে। কিন্তু রোয়ানুর প্রভাবে এ বার জুনে ওড়িশা-বাংলা উপকূলে ঘূর্ণাবর্ত-নিম্নচাপের আকাল। ফলে বর্ষার জোরালো শাখাটি বঙ্গোপসাগর দিয়ে ভূখণ্ডে ঢুকেও পূর্ব ভারতে থিতু না-হয়ে চলে গিয়েছে উত্তর ও পশ্চিমে।’’— বলছেন এক কেন্দ্রীয় আবহবিজ্ঞানী। আলিপুর হাওয়া অফিসের বিজ্ঞানী গণেশকুমার দাসেরও পর্যবেক্ষণ, ‘‘নিম্নচাপ-ঘূর্ণাবর্তের অভাবেই পূর্ব ভারতে বর্ষা বেহাল হয়ে পড়েছে।’’

তা হলে এ ভাবেই ভুগতে হবে?

জুলাইয়ের প্রথম দিনে অবশ্য ক্ষীণ আশার আলো দেখা গিয়েছে। উপগ্রহ-চিত্র বিশ্লেষণ করে আলিপুর জানাচ্ছে, বঙ্গোপসাগরে দানা বেঁধেছে একটা নিম্নচাপ, যা কিনা উত্তর ওড়িশা ও লাগোয়া দক্ষিণবঙ্গে হাজির হলেও হতে পারে। গণেশবাবু বলেন, ‘‘তেমনটা হলে চলতি সপ্তাহের শেষে জোরালো বৃষ্টির আশা রয়েছে। কোথাও কোথাও ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা।’’

নিম্নচাপ আদৌ আসবে কিনা, এলেও তার দৌলতে বৃষ্টির ঘাটতি কতটা মিটবে বলা যাচ্ছে না। তবু আপাতত সে-ই ভরসা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন