৩ টাকা কিলো টোম্যাটো, সংরক্ষণের দাবি চাষিদের

গত বছর এই সময় ছিল ৯-১০ টাকা। এ বার সেটাই অর্ধেকের অর্ধেক! কার্যত জলের দরে টোম্যাটো বিক্রি করে আতান্তরে পড়ছেন চাষিরা।বলরামপুরের পাইকারি বাজারে গিয়ে দেখা গেল, ভাল সাইজের টোম্যাটো বিক্রি হচ্ছে কিলো প্রতি তিন টাকায়। মাঝারি সাইজের দাম দুই টাকা। বাদবাকির দাম এক টাকা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৩ জানুয়ারি ২০১৭ ০০:৫৩
Share:

বলরামপুর পাইকারি বাজারে বিকোচ্ছে টোম্যাটো। —নিজস্ব চিত্র।

গত বছর এই সময় ছিল ৯-১০ টাকা। এ বার সেটাই অর্ধেকের অর্ধেক! কার্যত জলের দরে টোম্যাটো বিক্রি করে আতান্তরে পড়ছেন চাষিরা।

Advertisement

বলরামপুরের পাইকারি বাজারে গিয়ে দেখা গেল, ভাল সাইজের টোম্যাটো বিক্রি হচ্ছে কিলো প্রতি তিন টাকায়। মাঝারি সাইজের দাম দুই টাকা। বাদবাকির দাম এক টাকা। প্রথম দিকে ভাল দাম মিললেও, বেশ কিছু দিন হল এতটাই পড়ে গিয়েছে দাম। এই অবস্থায় উঠছে টোম্যাটো সংরক্ষণের প্রস্তাব। কেননা, তেমনটা বাস্তবায়িত হলে কিছুটা হলেও লাভের মুখ দেখতে পারবেন চাষিরা।

মাটি ও টোম্যাটো চাষের অনুকূল আবহাওয়ার কারণে ঝাড়খণ্ড লাগোয়া বলরামপুর, বাঘমুণ্ডি, বরাবাজার এলাকায় টোম্যাটো চাষ ভাল হয়। এ বারেও বর্ষায় ভাল বৃষ্টি হওয়ায় চাষিরা টোম্যাটোর ফলন ভাল পেয়েছেন। তাঁদের আক্ষেপ, ফলন ভাল হলে কি হবে, দাম কই? এই বাজারে বলরামপুর ও লাগোয়া ঝাড়খণ্ডের বহু গ্রাম থেকে চাষিরা ফসল বেচতে আসেন। ভোররাত থেকে চাষিরা হাজিরা দেন বাজারে।

Advertisement

বাজারে গিয়ে দেখা গেল, যেখানে সেখানে টোম্যাটো ডাঁই করা রয়েছে। ঝাড়খণ্ডের পটকাডি থেকে আসা মাধব সিংহ জানালেন, প্রথম দিকে কিছুটা দাম পেলেও এখন পাঁচ থেকে ছ’টাকার বেশি দাম মিলছে না। তাঁর কথায়, ‘‘কুইন্টাল প্রতি ৭৫ টাকা গাড়িভাড়া। আগের দিন ফসল তোলা, ঝুড়িতে রাখা, বাঁধা তারপর এই শীতের রাতে বাজারে নিয়ে আসা। খাটনির দামই উঠছে না।’’ স্থানীয় বাসিন্দা কষ্ণপদ সিংহ, ভবতারণ সিংহেরা জানালেন, না বেচেও উপায় নেই। নষ্ট হয়ে যাবে।

নামশোল ও সংলগ্ন এলাকার টোম্যাটোও স্বাদে উত্তম। এই গ্রামের মাণিক মাহাতো জানালেন, এক দিন ছাড়া তিন থেকে চার কুইন্ট্যাল করে বিক্রি করেছেন। এখন তো দামই পাওয়া যাচ্ছে না। তারপর খুললেন খরচের খাতা। বললেন, ‘‘তিনশো টাকা প্যাকেট বীজ (১০ গ্রাম প্রতি প্যাকেট), তারপর সার, ওষুধপত্র ও চাষের পরিশ্রম রয়েছে। জিনিসপত্রের দামের নিরিখে পরিশ্রমের মূল্য তো দূর, খরচটুকুও উঠছে না।’’

চাষিদের থেকে এই বাজার থেকে টোম্যাটো মূলত আড়তদারেরা কেনেন। কখনও বাইরের ব্যবসায়ীরা আসেন। বাজারের আড়তদার ঘনশ্যাম কুমারের কথায়, ‘‘এখন মাল যাচ্ছে দক্ষিণ দিনাজপুর, কলকাতা, বোলপুর, সাঁইথিয়া, আসানসোল-সহ বিভিন্ন জায়গায়। সেখানকার ব্যবসায়ীরা আসেন না। দর জেনে বলে দেন। আমরা মাল কিনে পাঠিয়ে দিই।’’ কমিশনের বদলে তাঁরা এ কাজ করেন বলেও জানাচ্ছেন। আড়াতদাররা মানছেন, ‘‘এ বার চাষিরা সত্যিই দাম পাচ্ছেন না। তবে আমাদের কিছু করার নেই। বাড়তি দর দিলে বাইরে বিক্রি করতেই অসুবিধে হবে। তখন আরও সমস্যা।’’

এই পরিস্থিতিতে অনেকেই চাইছেন বাইরে গিয়ে সরাসরি টোম্যাটো বিক্রি করে আসতে। সে ঝুঁকি আবার নিতে চান না কেউ কেউ। কিন্তু, সকলেরই প্রস্তাব উৎপাদিত টোম্যাটো সংরক্ষণ করা গেলে এই সমস্যার মোকাবিলা করা যেত। সরকারের তরফে সে চেষ্টা কেন হচ্ছে না, সেই প্রশ্ন তুলেছেন বাঘমুণ্ডির কংগ্রেস বিধায়ক নেপাল মাহাতো। তাঁর কথায়, ‘‘কোটি কোটি টাকা খরচে তৈরি হওয়া কিসান মান্ডির বাড়ি তৈরি হয়ে পড়ে রয়েছে। কোথাও ধান কেনা হচ্ছে, কোথাও সবুজ সাথী প্রকল্পের সাইকেল রাখা হচ্ছে। সেটা না করে সরকার সংরক্ষণ নিয়ে ভাবতে পারত।’’

সেই চেষ্টাই চলছে, জানিয়েছেন পুরুলিয়ার কৃষি বিপণন দফতরের আধিকারিক সুধীর মাঝি। তিনি বলেন, ‘‘আমরা চেষ্টা করছি যাতে কৃষকেরা ফসলের দাম পান। কিন্তু, তার জন্য মান্ডিগুলি আগে চালু করা দরকার। তা হলে বাইরের ক্রেতারাও সরাসরি এসে কেনাকাটি করতে পারবেন। তাতে লাভ সবপক্ষেরই।’’

সে আর কত দিনে? প্রশ্ন চাষিদের।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement