—প্রতীকী চিত্র।
আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের আগে ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধনের (এসআইআর) প্রক্রিয়া চলাকালীন মতুয়াদের নাগরিকত্ব ও ভোটাধিকারের প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলির তরজা অব্যাহত। নির্বাচন কমিশন মঙ্গলবার খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করার পরে সেই তরজার স্বর আরও বেড়েছে। নির্দিষ্ট করে কোথায় কত তাঁদের নাম বাদ গিয়েছে, কত জনকে শুনানিতে ডাকা হবে, সেটা বোঝা না-গেলেও, মতুয়া সমাজের অনেকেই চূড়ান্ত তালিকায় তাঁদের নাম থাকবে কি না, তা নিয়ে সংশয়, প্রশ্ন থাকার কথা বলছেন।
উত্তর ২৪ পরগনায় মোট ৭ লক্ষ ৯২ হাজার ১০৭ জনের নাম বাদ গিয়েছে। ‘নো ম্যাপিং’ ভোটার (যাঁদের নাম ২০০২-এর ভোটার তালিকায় নেই) ৭ লক্ষ ৪১ হাজার ৭০০। এই আবহে এ দিন ঠাকুরবাড়িতে আসা বহু মানুষ সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনে (সিএএ) আবেদন করেছেন জানিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন, কত দ্রুত নাগরিকত্ব মিলবে? অনেকেরই প্রশ্ন, “খসড়ায় নাম আছে। কিন্তু নাগরিকত্ব না-পেলে চূড়ান্ত তালিকায় কী হবে?” নানা সংগঠন সূত্রে দাবি, উত্তরবঙ্গে মতুয়াদের অনেকের নাম বাদ গিয়েছে। মতুয়া মহাসঙ্ঘের দাবি, এঁদের বেশির ভাগই গণনা-পত্র পূরণ করেছিলেন। যদিও নাম বাদ বা নথি যাচাই সংক্রান্ত নির্দিষ্ট তথ্য এখনও স্পষ্ট নয় বলে দাবি নমঃশূদ্র মতুয়া মহাসঙ্ঘের কোচবিহার জেলা আহ্বায়ক মানিক দাসের। আবার, জলপাইগুড়িতে যে মতুয়ারা এসআইআর-এ ফর্ম পূরণ করেছেন, সবারই নাম খসড়ায় আছে বলে দাবি। তবে ধানতলার বিজেপি কর্মী, মতুয়া সম্প্রদায়ের জীবন বিশ্বাসের প্রশ্ন, “আমার নামের ম্যাপিং হয়নি। নেতারা বললেও কেন নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করব? ৩০ বছর এই দেশে আছি!”
এমন ‘সংশয়ে’র আবহেই কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর বলছেন, “মতুয়া উদ্বাস্তুদের নাম বাদ যাবে কি না, সেটা এখনই বলা যাচ্ছে না। তাঁরা যাতে দ্রুত নাগরিকত্ব পান, সে জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে কথা বলব। ভয়ের কিছু নেই।” বিজেপির গাইঘাটার বিধায়ক তথা অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘের সঙ্ঘাধিপতি সুব্রত ঠাকুরও জানাচ্ছেন, যত বেশি সংখ্যক মানুষকে সিএএ-তে আবেদন করানোটাই এখন তাঁদের মূল কাজ। যদিও তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ তথা অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘের সঙ্ঘাধিপতি মমতা ঠাকুরের পাল্টা প্রশ্ন, “নো-ম্যাপিং ভোটারদের মধ্যে যাঁদের নাম বাদ যাবে, তাঁদের ৯০% হবেন মতুয়া উদ্বাস্তু। বিজেপি সত্যিই দরদ দেখালে এখনই কেন সকলকে নিঃশর্ত নাগরিকত্ব দেওয়া হচ্ছে না?”
এর পাশাপাশি ভোট-অঙ্ক নিয়েও চর্চা চলছে। নদিয়ার উত্তরের তুলনায় দক্ষিণে বেশি নাম বাদ পড়েছে। মতুয়া, নমঃশূদ্র উদ্বাস্তু অধ্যুষিত এই এলাকা বিজেপির ‘শক্ত ঘাঁটি’। কমিশন সূত্রে জানা যাচ্ছে, রানাঘাট ও কল্যাণী মহকুমার সাতটি বিধানসভায় ম্যাপিং হয়নি প্রায় ২ লক্ষ ১৫ হাজার। নাম বাদ, ১ লক্ষ ১৫ হাজারেরও বেশি। রাজনৈতিক শিবিরে একাংশের মতে, বিজেপির উপরে এর প্রভাব পড়তে পারে। কারণ, নাম কাটা যাওয়া হিন্দুরা সিএএ-তে আবেদন করলেও বিধানসভা ভোটের আগে কত জন নাগরিকত্বের শংসাপত্র পাবেন, তাতে সংশয় আছে। অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘের তৃণমূলপন্থী সংগঠনের সর্বভারতীয় সভাপতি প্রমথরঞ্জন বসুর দাবি, “এসআইআর-এর ফলশ্রুতি দেখে মতুয়ারা বিজেপির থেকে মুখ ঘোরাচ্ছেন।” যদিও অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘের (সুব্রত ঠাকুরপন্থী) নদিয়া দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলা সভাপতি সুশীল বসুর দাবি, “এসআইআর-এ মতুয়াদের নাম বাদ যায়নি। হিন্দু ভোটে প্রভাব পড়বে না।”
বিজেপি ও তৃণমূল, দু’পক্ষকেই বিঁধেছে সিপিএম। গাইঘাটায় দলের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেছেন, “এসআইআর-এর সঙ্গে নাগরিকত্বের প্রশ্ন জুড়ে দেওয়া হয়েছে। শান্তনু ঠাকুরের কার্ড কাজে আসবে না।” মতুয়া ঠাকুরবাড়িতে এ দিন গিয়েছিলেন সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীও। তাঁর বক্তব্য, “মতুয়া উদ্বাস্তুদের নাম বাদ গেলে, তার দায় মতুয়া ভোটে যাঁরা সাংসদ, মন্ত্রী, বিধায়ক হয়েছেন, তাঁদের। আমরা মতুয়াদের ভোটাধিকার রক্ষায় দরকারে আদালতে যাব।”
প্রতিদিন ২০০’রও বেশি এমন প্রিমিয়াম খবর
সঙ্গে আনন্দবাজার পত্রিকার ই -পেপার পড়ার সুযোগ
সময়মতো পড়ুন, ‘সেভ আর্টিকল-এ ক্লিক করে