ভয় তৃণমূলেই, দল চাঙ্গা করতে বার্তা সূর্যকান্তের

গোটা রাজ্যে ৯২টি পুরসভার মোট ২০৯০টি ওয়ার্ডে পুরভোট হচ্ছে। তার মধ্যে তৃণমূলের ‘চাপে’ বামেদের মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নিতে হয়েছে ৯০টি ওয়ার্ডে। বাকি দু’হাজার ওয়ার্ডে মাটি কামড়েই তৃণমূলের সঙ্গে লড়াই হবে। তার জন্য দেওয়াল লিখন, পোস্টার-ফেস্টুনের অপেক্ষায় না থেকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে নিজেদের কথা বলে আসার জন্য দলকে বার্তা দিলেন সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্ব।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:২০
Share:

গোটা রাজ্যে ৯২টি পুরসভার মোট ২০৯০টি ওয়ার্ডে পুরভোট হচ্ছে। তার মধ্যে তৃণমূলের ‘চাপে’ বামেদের মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নিতে হয়েছে ৯০টি ওয়ার্ডে। বাকি দু’হাজার ওয়ার্ডে মাটি কামড়েই তৃণমূলের সঙ্গে লড়াই হবে। তার জন্য দেওয়াল লিখন, পোস্টার-ফেস্টুনের অপেক্ষায় না থেকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে নিজেদের কথা বলে আসার জন্য দলকে বার্তা দিলেন সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্ব।

Advertisement

নতুন রাজ্য সম্পাদক হিসেবে সূর্যকান্ত মিশ্র দায়িত্ব নেওয়ার পরে মঙ্গলবার ছিল সিপিএমের নবগঠিত রাজ্য কমিটির প্রথম বৈঠক। স্বাভাবিক ভাবেই সেখানে মূল আলোচ্য ছিল আসন্ন পুরভোট। এক বছর আগের লোকসভা নির্বাচনের সময়ের বিজেপি-হাওয়া এখন আর তেমন প্রবল নয়। উল্টে পুরভোটের মুখে রাজ্য বিজেপি অন্তর্কলহে জেরবার। এই পরিস্থিতির ফায়দা নিয়ে তৃণমূলের বিপক্ষে মূল বিরোধী হিসেবে নিজেদের জায়গা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করার জন্য সর্বশক্তি দিয়েই পুরভোটে ঝাঁপাতে চাইছে সিপিএম। রাজ্য জুড়ে শাসক দল তৃণমূলের চোখ রাঙানির মধ্যেও কী ভাবে নিজেদের বক্তব্য মানুষের দরবারে হাজির করা যায়, সেই কৌশল নিয়েই এ দিন মূলত আলোচনা হয়েছে আলিমুদ্দিনে। নতুন রাজ্য সম্পাদক বার্তা দিয়েছেন, তৃণমূল যে পুরভোটে সন্ত্রাস করবে, এ জানা কথা। ওরা রাজনৈতিক ভাবে রক্ষণাত্মক জায়গায় আছে। স্বস্তিতে নেই বলেই ওরা শক্তি প্রয়োগের পথে যাচ্ছে। কিন্তু তৃণমূল যতই বলপ্রয়োগ করুক, বাড়ি বাড়ি পৌঁছতে হবে। আবার বিজেপিকে দেখে এখন দুর্বল মনে হলেও বামেদের আত্মসন্তুষ্ট হয়ে পড়ার কোনও কারণ নেই। বরং, সংসদে একের পর এক গুরুত্বপূর্ণ বিল কী ভাবে তৃণমূলের ঘুর পথে সমর্থনের জেরে বিজেপির সরকার পাশ করিয়ে নিতে পেরেছে, সেই রাজনৈতিক সমীকরণের কথা মানুষের কাছে সাধ্যমতো তুলে ধরতে হবে।

এর পাশাপাশিই সূর্যবাবু এ দিন রাজ্য কমিটির বৈঠকে পরিষ্কার বুঝিয়ে দিয়েছেন, লড়তে হয় তাই লড়ছি এমন মনোভাব নিয়ে ময়দানে নামলে চলবে না! নিজেদের আক্রমণাত্মক প্রচার বজায় রাখতে হবে। মানুষকে বোঝাতে হবে, তৃণমূলের ভিতরে ভিতরে ভয় আছে বলেই তারা বিরোধী দলের প্রার্থী তুলিয়ে দিচ্ছে, বিরোধীদের পতাকা-ফেস্টুন ছিঁড়ে দিচ্ছে, কোথাও কোথাও মারধর করছে। তাত্‌পর্যপূর্ণ ভাবে, এ দিনের বৈঠকের প্রারম্ভিক ভাষণেই রাজ্য সম্পাদক বুঝিয়ে দিয়েছেন, শিলিগুড়িতে বাম নেতা-কর্মীরা যে অদম্য মনোভাব নিয়ে পুরভোটে লড়ছেন, তা সকলের কাছেই অনুকরণযোগ্য। ক’দিন আগেই শিলিগুড়ি গিয়ে প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্যকে প্রথা ভেঙেই সেখানকার মেয়র পদপ্রার্থী হিসাবে ঘোষণা করে দিয়ে এসেছেন সূর্যবাবু।

Advertisement

সিপিএম সূত্রের খবর, পুরভোটে লড়াইয়ের মানসিকতার প্রশ্নেই এ দিনের বৈঠকে ঈষত্‌ চাপানউতোর বেধেছিল রাজ্যের দুই প্রাক্তন মন্ত্রীর! দার্জিলিং জেলার অশোকবাবু বৈঠকে বলেন, আপাতত শিলিগুড়ি থেকে দলের লোকজনের কলকাতায় না আসাই ভাল! কারণ, এখানে এলেই ‘সন্ত্রাস’ নিয়ে বিস্তর অভিযোগ, সেই মনোনয়ন প্রত্যাহার, সেই তৃণমূলের একতরফা প্রচার এ সব দেখে বাম কর্মী-সমর্থকদের মনোবলে ধাক্কা লাগতে পারে! ‘ভীতু’ লোকজন দিয়ে যে দল চলে না, এমন মন্তব্যও করেন প্রাক্তন পুরমন্ত্রী। পরে কলকাতা জেলার তরফে আর এক প্রাক্তন মন্ত্রী মানব মুখোপাধ্যায় প্রবল প্রতিবাদ করে বলেন, কলকাতা পুরসভার ১৪৪টি ওয়ার্ডে কোথায় প্রত্যাহার হয়েছে? তৃণমূলের রোজকার ‘সন্ত্রাস’ মোকাবিলা করেই কর্মীরা ময়দানে আছেন। তাঁরা কেউ ‘ভীতু’ নন! পরে জবাবি ভাষণে সূর্যবাবু অবশ্য পাল্টা তৃণমূলের মনের ভয়ের কথাই জনসমক্ষে ছড়িয়ে দেওয়ার বার্তা দেন।

আলিপুরদুয়ারের সলিল আচার্য, নদিয়ার সুমিত দে-রা এ দিনের বৈঠকে জানিয়েছেন, রাজ্য নেতৃত্ব এখন অনেক বেশি সচল হয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে যাওয়ায় কর্মী মহলে ‘ইতিবাচক’ সাড়া মিলছে। রানাঘাট-কাণ্ডেও তা-ই হয়েছে। উত্তর ২৪ পরগনার ভারপ্রাপ্ত জেলা সম্পাদক নেপালদেব ভট্টাচার্য আবার রাজ্য নেতৃত্বের কাছে প্রশ্ন তুলেছেন, যে সব জায়গায় বাম প্রার্থী নেই বা তুলে নিতে হয়েছে, সেখানে কর্মী-সমর্থকেরা কাকে সমর্থন করবেন? রাজ্য সম্পাদক জানিয়েছেন, বিষয়টি নিয়ে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলী এবং বামফ্রন্টে চর্চা করে এই সপ্তাহের মধ্যেই অবস্থান ঠিক করা হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন