Saradha

সারদার তথ্যে দেরি, প্রশ্নের মুখে অর্থ দফতর

নবান্ন সূত্রের খবর, সিবিআইয়ের নতুন চিঠি পেয়ে ফাঁপরে পড়েছেন প্রশাসনিক কর্তাদের একাংশ। কারণ, নবান্নের শীর্ষ স্তর থেকে এই বিষয়ে জবাব দেওয়ার ছাড়পত্র এখনও মেলেনি।

Advertisement

চন্দ্রপ্রভ ভট্টাচার্য ও জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ অক্টোবর ২০১৮ ০৪:৩২
Share:

রাজ্য সরকার সারদা-কাণ্ডের কতটা কী তদন্ত করেছিল, তা জানতে চেয়ে কিছু দিন আগেই স্বরাষ্ট্রসচিব অত্রি ভট্টাচার্যকে চিঠি দিয়েছিল সিবিআই। কিন্তু নবান্ন এখনও তার জবাব দেয়নি। সম্প্রতি রাজ্যকে ফের চিঠি দিয়ে সেই তদন্তের বিষয়ে রিপোর্ট তলব করেছে সিবিআই।

Advertisement

নবান্ন সূত্রের খবর, সিবিআইয়ের নতুন চিঠি পেয়ে ফাঁপরে পড়েছেন প্রশাসনিক কর্তাদের একাংশ। কারণ, নবান্নের শীর্ষ স্তর থেকে এই বিষয়ে জবাব দেওয়ার ছাড়পত্র এখনও মেলেনি। বস্তুত, লগ্নি সংস্থার তছরুপের তদন্তে রাজ্য সরকার কী পদক্ষেপ করছে, তা জানতে চেয়েছিল প্রধানমন্ত্রীর দফতর। এক বার নয়, বারবার চিঠি দিয়েছে তারা। ২০১১ সালে প্রথম চিঠি পাওয়ার পরে স্বরাষ্ট্র দফতর তথ্য চায় অর্থ দফতরের কাছে। কিন্তু ২০১৩-র আগে অর্থ দফতরের তথ্য হাতে পায়নি তারা। দীর্ঘ দু’বছরের বিলম্ব কেন, এখন সেই কারণ সন্ধান করছেন সিবিআইয়ের তদন্তকারী অফিসারেরা।

ঘটনাচক্রে এই সময়কালের মধ্যে বাজার থেকে বিপুল অর্থ তুলেছিল সারদা এবং অন্যান্য অর্থ লগ্নি সংস্থা। প্রশাসনিক বিলম্বের কারণে আখেরে সারদা-সহ অর্থ লগ্নি সংস্থাগুলির সুবিধা হল কি না, এ বার তা জানতে চাইছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা।

Advertisement

কেন মেলেনি ছাড়পত্র?

প্রশাসনিক কর্তাদের একটি অংশের অনুমান, কারণ ব্যাখ্যা করে জানাতে গেলে বিলম্বের দায়ভারের অনেকটাই বর্তাবে অর্থ দফতরের উপরে। তদন্তকারীদের প্রশ্ন, রাজ্য সচিবালয়ের একই ভবনে থাকা স্বরাষ্ট্র ও অর্থ দফতরের মধ্যে তথ্য আদানপ্রদান হতে এত সময় লাগল কেন? ঘটনাচক্রে অর্থ দফতরের উত্তর হাতে পাওয়ার পরেই ২০১৩ সালের ২৬ এপ্রিল সারদা-কাণ্ডের তদন্তে সিট বা বিশেষ তদন্তকারী দল গঠনের বিজ্ঞপ্তি জারি করেছিল স্বরাষ্ট্র দফতর। পুলিশ এবং সিআইডি-র একাধিক কর্তা ছাড়াও সেই দলে অর্থ দফতরের এক যুগ্মসচিবকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। নির্দেশিকা অনুযায়ী তাঁকে মনোনীত করেছিলেন অর্থসচিব নিজেই।

ইতিমধ্যেই আরও দু’টি বিষয় জানতে পেরেছে সিবিআই। ১) উল্লিখিত সময়ের মধ্যে সরকারকে একাধিক বার ‘সতর্কবার্তা’ পাঠিয়েছিল ক্ষুদ্র সঞ্চয় বিভাগ। নির্দিষ্ট সময় অন্তর পাঠানো একাধিক চিঠিতে ক্ষুদ্র সঞ্চয় বিভাগের তৎকালীন কর্তা জানিয়েছিলেন, অর্থ লগ্নি সংস্থার বাড়বাড়ন্তের ফলে রাজ্যে স্বল্প সঞ্চয় কী ভাবে নিম্নমুখী হয়েছে। ক্ষুদ্র সঞ্চয়ের সঙ্গে যুক্ত এজেন্টরা যে বাড়তি অর্থের টানে অর্থ লগ্নি সংস্থাগুলির হয়ে কাজ শুরু করেছেন, ক্ষুদ্র সঞ্চয় বিভাগের তরফে তা-ও জানানো হয়েছিল। ২) ২০১২ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর এ রাজ্যে ‘স্টেট লেভেল ব্যাঙ্কার্স কমিটি বা এসএলবিসি-র বৈঠকে এসএলবিসি-র তৎকালীন চেয়ারম্যান ভাস্কর সেন রাজ্য সরকারকে সতর্ক করে জানান, গ্রামাঞ্চলে ব্যাঙ্ক নয়, এমন কিছু আর্থিক সংস্থা ‘অবাস্তব’ সুদের প্রলোভন দেখিয়ে সাধারণ মানুষের থেকে অর্থ সংগ্রহ করছে।

এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রকে ফোন করা হলে তিনি তা ধরেননি। উত্তর দেননি টেক্সট মেসেজেরও।

সিবিআই সূত্রের খবর, তদন্তের কাজে সব দিকগুলিকে খতিয়ে দেখতে চাইছে ওই কেন্দ্রীয় সংস্থা। প্রশাসনিক স্তরে পাওয়া সব তথ্য যাচাই করার প্রক্রিয়া ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে। সংস্থার তদন্তকারী এক অফিসার জানাচ্ছেন, তদন্তের স্বার্থে প্রয়োজন অনুযায়ী জিজ্ঞাসাবাদের ব্যাপ্তি আগামী দিনে বাড়ানো হতে পারে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন