Kajari Banerjee Case

মুখ্যমন্ত্রীর ভ্রাতৃবধূর বিরুদ্ধে হাই কোর্টে মামলাকারী প্রিন্সিপালের নামে এফআইআর! কর্মচারীকে ‘জাত’ তুলে হেনস্থার অভিযোগ

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভ্রাতৃবধূ কাজরী বন্দ্যোপাধ্যায় রানি বিড়লা গার্লস কলেজের পরিচালন সমিতির সভাপতি। এই পদে তাঁর নিয়োগ নিয়ে বুধবার প্রশ্ন তুলেছে হাই কোর্ট।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৯:৩০
Share:

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভ্রাতৃবধূ কাজরী বন্দ্যোপাধ্যায়। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভ্রাতৃবধূ কাজরী বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামে কলকাতা হাই কোর্টে মামলা করেছেন রানি বিড়লা গার্লস কলেজের অধ্যক্ষা (প্রিন্সিপাল) শ্রাবন্তী ভট্টাচার্য। তাঁর বিরুদ্ধে এ বার এফআইআর দায়ের করা হল শেক্‌সপিয়ার সরণি থানায়। কলেজেরই এক অধ্যাপক শ্রাবন্তীর বিরুদ্ধে হেনস্থার অভিযোগ তুলেছেন। অভিযোগকারী তফসিলি জাতিভুক্ত। দাবি, পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায় থেকে আসার কারণে প্রিন্সিপাল তাঁকে নানা সময়ে নানা ভাবে হেনস্থা করেছেন। ‘জাত’ তুলে অপমান করেছেন। এমনকি, ক্ষমতা প্রয়োগ করে আটকে দিয়েছেন তাঁর পদোন্নতি এবং বেতন বৃদ্ধি। অভিযোগের ভিত্তিতে পদক্ষেপ করেছে পুলিশ।

Advertisement

রানি বিড়লা কলেজের হিন্দির অধ্যাপক মন্টু দাস। ২০১৪ সাল থেকে ওই কলেজে অধ্যাপনা করছেন তিনি। অভিযোগপত্রে জানিয়েছেন, ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে কলেজের প্রিন্সিপাল হয়ে আসেন শ্রাবন্তী। তার পর তাঁর সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়ে পড়েন। অভিযোগ, মন্টু যে তফসিলি জাতিভুক্ত, তা মানতেই চান না প্রিন্সিপাল। তাঁর জাতিগত শংসাপত্র ভুয়ো বলে দাবি করেন বার বার। সহকর্মীদের সামনে অপমান এবং নানা ভাবে হেনস্থা করা হয়। মন্টু অভিযোগপত্রে লিখেছেন, ‘‘উনি কলেজের এসসি-এসটি সেলে আমার নাম নথিভুক্ত হতে দেননি। সংবাদমাধ্যমেও দাবি করেছেন, আমার শংসাপত্র ভুয়ো। সামাজিক ভাবে এতে আমার সম্মানহানি ঘটেছে। ছাত্রছাত্রীদের সামনে আমার যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। প্রিন্সিপাল বার বার আমাকে কুকথা বলেছেন, সকলের সামনে ছোট করেছেন। আমার চাকরি খাওয়ার চেষ্টা করেছেন।’’ তফসিলি জাতি জনজাতি আইন অনুসারে প্রিন্সিপালের বিরুদ্ধে পদক্ষেপের আর্জি জানিয়েছেন মন্টু। গত ১২ সেপ্টেম্বর এই সংক্রান্ত এফআইআর রুজু হয়েছে।

বৃহস্পতিবার আনন্দবাজার ডট কম-কে মন্টু বলেন, ‘‘কলেজে আসার পর থেকে ওঁর অনেক অন্যায় কাজের প্রতিবাদ করেছি আমি। তাই আমার সঙ্গে সংঘাত। আমাকে অনেক খারাপ কথা বলেছেন। চামার বলে অপমান করেছেন। ওঁর ঘরে গেলে আমাকে বসতে দিতেন না। গত তিন বছর ধরে এটা চলছে। আমি পরিচালন সমিতির প্রধান কাজরী বন্দ্যোপাধ্যায়ের দফতরে গিয়ে অভিযোগ জমা দিয়েছিলাম। বিকাশ ভবনেও মৌখিক ভাবে জানিয়েছি।’’ শ্রাবন্তীর বিরুদ্ধে কলেজের আরও এক অধ্যাপক কনককুমার জানা অনুরূপ অভিযোগ তুলেছিলেন। তিনি অভিযোগ জানিয়েছিলেন জাতীয় তফসিলি জাতি কমিশনে। তাঁর কথায়, ‘‘প্রিন্সিপাল আমাকে কুকথা বলতেন, দুর্ব্যবহার করতেন। আমি কলেজের তৎকালীন প্রশাসককে জানিয়েছিলাম। ওঁর থেকে আমাকে দূরে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। তার পর আমি জাতীয় কমিশনে অভিযোগ জানাই ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে। কমিশন থেকে ওঁর জবাব চাওয়া হয়েছিল। উনি এখনও পর্যন্ত চূড়ান্ত কোনও জবাব দিতে পারেননি।’’

Advertisement

অভিযোগ সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছেন প্রিন্সিপাল নিজে। আনন্দবাজার ডট কম-কে শ্রাবন্তী বলেন, ‘‘এই অভিযোগ সর্বৈব মিথ্যা। এর বাইরে আর কিছু আমি বলব না। এটা বিচারাধীন বিষয়। আমি মনে করি, কলেজের যে মামলা এখন হাই কোর্টে চলছে, এটা তার সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত।’’ এ বিষয়ে ২২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত শ্রাবন্তীর বিরুদ্ধে কোনও কঠোর পদক্ষেপ করা যাবে না বলে আদালত জানিয়েছে।

রানি বিড়লা গার্লস কলেজের পরিচালন সমিতির সভাপতি মুখ্যমন্ত্রীর ভ্রাতৃবধূ কাজরী। তিনি শ্রাবন্তীর বিরুদ্ধে একটি শোকজ় নোটিস জারি করেছিলেন। তা চ্যালেঞ্জ করে শ্রাবন্তী হাই কোর্টে মামলা করেন। বুধবার হাই কোর্ট এই শোকজ় নোটিসে আট সপ্তাহের স্থগিতাদেশ দিয়েছে। উপরন্তু কলেজের পরিচালন সমিতিতে কাজরীর নিয়োগ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে। হাই কোর্ট জানায়, আইন অনুযায়ী যে কোনও কলেজের পরিচালন সমিতির সভাপতিকে ‘শিক্ষার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তি’ হতে হয়। কাজরী ‘শিক্ষার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তি’ নন। ফলে তাঁর নিয়োগ বৈধ কি না, খতিয়ে দেখা দরকার। এই মামলা চলাকালীনই কাজরীর বিরুদ্ধে মামলাকারী প্রিন্সিপাল শ্রাবন্তীর নামে এফআইআর করল পুলিশ। আদালতের নির্দেশের পর বৃহস্পতিবার কলেজে গিয়েছিলেন শ্রাবন্তী। অভিযোগ, তাঁকে কলেজে ঢুকতে বাধা দেওয়া হয়। তাঁর ঘরের সামনেও শেক্‌সপিয়ার সরণি থানার পুলিশও ছিল।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement