অবশেষে পাঁচ দিন পরে শ্যাম গোষ্ঠীর কাছ থেকে এফআইআর নিল পুলিশ। আর সেই দিনই খাসজমি দখলের নালিশ গ্রাহ্য করতে কেন দেরি হয়েছে, সে জন্য শো-কজ করা হল জামুড়িয়া-২ ব্লকের বিএলএলআরও পলাশ নাথকে। যা দেখেশুনে অনেকেই বলছেন, রাজ্যের শিল্পবান্ধব ভাবমূর্তিতে যাতে বিশেষ দাগ না লাগে, সে জন্যই মামলা রুজু করল পুলিশ। কিন্তু একই সঙ্গে জমির তদন্ত জারি রেখে শ্যাম গোষ্ঠীর উপরে পাল্টা চাপও বজায় রাখল প্রশাসন।
পাঁচ দিন আগে জামুড়িয়া থানায় প্রথম অভিযোগ দায়ের করেন শ্যাম কর্তৃপক্ষ। তখন ‘র্যানসম’ (যাকে তোলাবাজির অভিযোগ বলে ব্যাখ্যা করা হয়েছিল) এবং প্রাণনাশের হুমকির মতো অভিযোগ করেছিলেন তাঁরা। কিন্তু এ দিন এফআইআর করার সময় ‘র্যানসম’ শব্দটি বাদ দেওয়া হয়। এজিএম (আইচআর) সুমিত চক্রবর্তী জানান, “আগের অভিযোগে আমরা ওই শব্দটি লিখেছিলাম ঠিকই। কিন্তু সেটির নির্দিষ্ট অর্থ যে ‘মুক্তিপণ’, তা পরে জেনেছি। আমাদের কাছে কেউ কোনও মুক্তিপণ চায়নি। তাই ওই শব্দটি বাদ দেওয়া হয়েছে।” সুমিতবাবুর বক্তব্য শোনার পরে অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা অলোক দাস বলেন, “এত দিন ওঁরা আমার বিরুদ্ধে তোলাবাজির অভিযোগ করে এসেছেন। এখন বলছেন, মানে না জেনেই লিখেছিলেন। অথচ ওঁদের অভিযোগেই দল আমাদের সাসপেন্ড করেছে। আমি মানহানির মামলা করছি।”
তবে প্রাণনাশের হুমকির কথা এ দিনও এফআইআরে রেখেছন সুমিতবাবুরা। তাঁদের অভিযোগ নেওয়ার পরে জামুড়িয়া থানা ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪৪৭ (কোনও অপরাধের উদ্দেশ্যে অবৈধ অনুপ্রবেশ), ৩৮৫ (ভয় দেখানো), ৫০৬ (অশালীন ভাষা ব্যবহার) এবং ৩৪ (একই অভিসন্ধিতে একাধিক ব্যক্তি কোথাও জড়ো হওয়া) ধারায় মামলা করে পুলিশ। একাধিক আইনজীবী কিন্তু বলেছেন, এই ধারাগুলি সবই জামিনযোগ্য। তাই পুলিশ অভিযুক্তদের গ্রেফতার করে আদালতে হাজির করলেও তাঁরা অনায়াসে জামিন পেয়ে যেতে পারেন।
প্রশ্ন হচ্ছে, পুলিশ কেন অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে জামিনযোগ্য ধারা দিল?
আসানসোল-দুর্গাপুরের পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েলের দাবি, শ্যাম গোষ্ঠীর তরফে নতুন করে যে লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়েছে, তার ভিত্তিতেই যে ধারা দেওয়া সম্ভব, তাই দেওয়া হয়েছে।
কারখানা কর্তৃপক্ষ অবশ্য পুলিশের এই দাবি মানতে চাননি। সুমিতবাবু বলেছেন, “আমি প্রাণনাশের হুমকির কথা পুলিশকে জানিয়েছিলাম। কিন্তু পুলিশ তার পরিপ্রেক্ষিতে কোন ধারা দিয়েছে, তা জানি না।” সুমিতবাবু জানান, আজ, মঙ্গলবার তিনি এফআইআরের প্রতিলিপি পাবেন। তার পরেই বলতে পারবেন পুলিশ ঠিক কোন কোন ধারা প্রয়োগ করেছে।
বিরোধীরা বলছেন, জামিনযোগ্য ধারায় মামলা রুজুর পিছনে প্রশাসনের উচ্চতম পর্যায়ের ইঙ্গিতই কাজ করেছে। সম্প্রতি জামুড়িয়ার বিষয়টিকে ‘ছোট ঘটনা’ বলে মন্তব্য করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার পরে কিছুটা শিল্পমহলের চাপ সামলাতে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করলেও শ্যাম গোষ্ঠীর উপরে পাল্টা চাপ বজায় রাখছে প্রশাসন। সে জন্য এক দিকে যেমন জামিনযোগ্য ধারায় মামলা করা হয়েছে, অন্য দিকে বিএলএলআরও-কে শো-কজ করে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে, জমির তদন্ত থেকে এত সহজে সরে আসছে না প্রশাসন।
যে দুই তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে এ দিন এফআইআর দায়ের করেছেন শ্যাম গোষ্ঠীর কর্তারা, তাঁরই এক জন, চঞ্চল বন্দ্যোপাধ্যায় গত ৩০ জুন জামুড়িয়া থানায় কারখানাটির বিরুদ্ধে খাসজমি দখলের অভিযোগ করেন। পর দিন বিএলএলআরও দফতরে অভিযোগটি নিয়ে যান তিনি। ১৬ জুলাই কারখানা কর্তৃপক্ষ চঞ্চলবাবুদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করলে ১৮ তারিখ ফের বিএলএলআরও দফতরে অভিযোগ নিয়ে তদ্বির করেন তিনি। তার পরে পলাশবাবু জমি মাপজোকের নির্দেশ দেন। এর আগেও বহু ক্ষেত্রে তিনি এমন ধীরে চলেছেন বলে অভিযোগ। সে জন্য তাঁকে শো কজ করা হয়েছে। যদিও পলাশবাবু বলেন, “আমি এখনও শো-কজের কোনও কাগজ হাতে পাইনি।”