Firhad Hakim

ববির ডিগবাজি! নিয়োগে দুর্নীতি বাম আমলে চালু ছিল, শেষমেশ উদয়ন-সুরে গান বেঁধে নিলেন ফিরহাদ

নিজের বাবা কমল গুহকে দুর্নীতির অভিযোগে ‘কাঠগড়া’য় তুলেছেন উদয়ন গুহ। প্রথমে ফিরহাদ উদয়নের তত্ত্ব মানতে চাননি। কিন্তু সোমবার দেখা গেল, তিনিও বলছেন, বাম আমলে চিরকুটে চাকরি হয়েছিল!

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ মার্চ ২০২৩ ১৪:১১
Share:

গত শনিবার রাজ্য মন্ত্রিসভায় তাঁর সহকর্মী উদয়ন গুহের যে বক্তব্যের বিরোধিতা করেছিলেন তিনি, সোমবার তাতেই সায় দিলেন ববি। নিজস্ব চিত্র।

এক দিনের ব্যবধানে কার্যত ডিগবাজিই খেলেন রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ (ববি) হাকিম। সরে এলেন বাম আমলে নিয়োগ দুর্নীতিতে চিরকুটের ‘ভূমিকা’ সংক্রান্ত তাঁর মতামত থেকে। গত শনিবার রাজ্য মন্ত্রিসভায় তাঁর সহকর্মী উদয়ন গুহের যে বক্তব্যের বিরোধিতা করেছিলেন তিনি, সোমবার তাতেই সায় দিলেন ববি।

Advertisement

শনিবার ‘টক টু মেয়র’ কর্মসূচিতে প্রশ্নের জবাবে ফিরহাদ বলেছিলেন, ‘‘ও (উদয়ন) কী পাগলের মতো বকছে, আমার জানা নেই! এটা নিয়ে আমার কোনও বক্তব্যই নেই। কারণ, চিরকুটে কোনও দিন লোক ঢোকানো যায় না। একটা আবেদনপত্র লাগে।’’ কিন্তু সোমবার উদয়নের সুরেই গলা মেলাতে দেখা গেল তাঁকে। ফিরহাদ বললেন, ‘‘চিরকুট বা লিস্ট, যা-ই হোক না কেন, বাম আমলে নিয়ম-বহির্ভূত ভাবেই চাকরি হয়েছে।’’ ববির এই ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে যাওয়াকে দলের একটি অংশ ‘ডিগবাজি’ বলেই বর্ণনা করছে। যদিও ববির অনুগামীদের দাবি, তিনি মোটেই নিজের অবস্থান থেকে সরে আসেননি। বাম আমলে দুর্নীতি হয়নি, এমন কিছু তিনি আগেও বলেননি। এখনও বলছেন না। চিরকুট হোক বা সুপারিশের তালিকা (লিস্ট)— বাম আমলে নিয়োগ দুর্নীতি হয়েছে। সেই অভিমত তাঁর আগেও ছিল। এখনও রয়েছে।

সোমবার কলকাতা বিমানবন্দরে রাষ্ট্রপতি দ্রোপদী মুর্মুকে স্বাগত জানাতে গিয়েছিলেন কলকাতার মেয়র। সেখান থেকে বেরোনোর সময়েই তিনি দাবি করেন, বাম আমলে চিরকুট দিয়ে নিয়ম-বহির্ভূত ভাবে চাকরি হয়েছে! ববির কথায়, ‘‘চাকরি নিয়ম-বহির্ভূত ভাবেই হয়েছে। তা না হলে সব বাম নেতাদের পরিবারের লোকেরা কী ভাবে চাকরি পেলেন? সম্ভব নাকি? চিরকুট বা লিস্ট, যা-ই হোক না কেন, বাম আমলে নিয়ম-বহির্ভূত ভাবে চাকরি হয়েছে। এ ব্যাপারে আমরা নিশ্চিত।’’

Advertisement

সম্প্রতি নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে বাম জমানার বিরুদ্ধে মুখ খুলতে শুরু করেছেন শাসক তৃণমূলের নেতারা। এই পরিস্থিতিতে নিয়ে নিজের বাবা তথা প্রাক্তন মন্ত্রী কমল গুহকেও ছাড়েননি তৃণমূল সরকারের মন্ত্রী উদয়ন। দুর্নীতির অভিযোগে নিজের প্রয়াত পিতাকেও কাঠগড়ায় তুলেছেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী। তা নিয়ে বিতর্কে তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ উদয়নের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। কিন্তু চিরকুট দিয়ে চাকরি দেওয়ার ‘তত্ত্ব’ মানতে চাননি রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ। তিনি জানিয়েছিলেন, উদয়ন কী বলেছেন, তিনি জানেন না। তা নিয়ে তাঁর কোনও বক্তব্যও নেই। কারণ, তাঁর মতে, ‘‘চিরকুট দিয়ে লোক ঢোকানো যায় না। অন্তত আবেদনপত্র লাগে। এ সব আগে হত। কিন্তু যখন থেকে নিয়োগের আইন (রিক্রুটমেন্ট রুল) তৈরি হয়, তার পর থেকে এ ভাবে নিয়োগ হয় না।’’

উদয়নের মন্তব্যের প্রেক্ষিতে কুণালের বক্তব্য ছিল, ‘চিরকুট’ আসলে ‘নিয়োগপত্র’ নয়। ওটা সুপারিশ। তিনি বলেছিলেন, ‘‘বাম জমানায় কোটা পেয়েছে (বাম) শরিকেরা। এটা ব্যক্তি কমল গুহের বিষয় নয়। তিনি ওই ব্যবস্থায় ছিলেন। চিরকুট নিয়োগপত্র নয়। ওটা সুপারিশ। সেই মতো নিয়োগ হয়েছে। উদয়ন’দা যা বলেছেন, তা-ই আমরা বলছি।’’

চিরকুট তত্ত্ব নিয়ে শাসকদলের দুই শীর্ষ নেতার মতপার্থক্যে স্বাভাবিক ভাবেই জল্পনা তৈরি হয় তৃণমূলের অন্দরে। ঘটনাচক্রে, শনিবার ববির ওই বক্তব্যের কিছু পরেই জাতীয় এবং রাজ্য স্তরে দলের ‘মুখপাত্র’-দের নামের দীর্ঘ তালিকা প্রকাশ করে তৃণমূল। তার কোনওটিতেই ববির নাম ছিল না। দলের অনেকের মতে, সেটি ছিল আসলে ববিকেই ‘বার্তা’, যে তিনি দলের মুখপাত্র নন। ফলে তাঁর এক্তিয়ার-বহির্ভূত কোনও বিষয়ে মন্তব্য না করাই উচিত। যদিও দলের তরফে এ ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক কোনও বক্তব্য মেলেনি।

কিন্তু ঘটনাপ্রবাহ বলছে, তার এক দিন পরেই আবার মুখ খুললেন ববি। তবে সেখানে নিজের আগের বক্তব্য থেকে সরে এসেছেন তিনি। বাম আমলের দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে দলীয় লাইনেই শেষমেশ ‘সিলমোহর’ দিয়েছেন তিনি। সিপিএমের বিরুদ্ধে যে দুর্নীতির অভিযোগ অধুনা তৃণমূলের বিভিন্ন স্তরের নেতা-মন্ত্রীরা তুলছেন, সেই প্রসঙ্গে ববির আরও বক্তব্য, ‘‘সিপিএম আমলেই দুর্নীতি শুরু হয়েছে। তবে গ্রেফতার হয়েছে আমাদের আমলে। সারদা কর্তাকে আমাদের প্রশাসন গ্রেফতার করেছে। সারদা-সহ বিভিন্ন চিটফান্ড বাম আমলেই তো শুরু হয়েছিল!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন