প্লাবনে গৃহহারা মানুষ, ফাঁকা ঘরে তাণ্ডব দুষ্কৃতীদের

কারও সর্বনাশ কারও পৌষ মাস—বাংলার প্রবাদ যেন সত্যি হয়ে ফিরেছে তিস্তা চরের বিস্তীর্ণ এলাকায়। প্লাবনে ঘর ছেড়েছেন মানুষ। আর তাঁদেরই ফেলে আসা ঘরদোরে শুরু হয়েছে দুষ্কৃতীদের তাণ্ডব। সন্ধ্যা নামতেই তারা নৌকা ভাসিয়ে ঢুকে পড়ছে জলবন্দি বসতি এলাকায়। সাবার করছে বাঁশ বাগান। কেটে জলে ফেলে দিচ্ছে গামার, কাঁঠাল, আম গাছ। ভেলায় ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে ধান-পাটের জাঁক। সুযোগ বুঝে খুলে নিচ্ছে ঘরের টিনের চালও।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ০৭ জুলাই ২০১৫ ০৩:২৩
Share:

চুরির ভয়ে ঘরের টিনের চাল খুলে নিয়ে যাচ্ছেন আতঙ্কিত বন্যা দুর্গতরা। সোমবার জলপাইগুড়ির দোমহনিতে দীপঙ্কর ঘটকের তোলা ছবি।।

কারও সর্বনাশ কারও পৌষ মাস—বাংলার প্রবাদ যেন সত্যি হয়ে ফিরেছে তিস্তা চরের বিস্তীর্ণ এলাকায়। প্লাবনে ঘর ছেড়েছেন মানুষ। আর তাঁদেরই ফেলে আসা ঘরদোরে শুরু হয়েছে দুষ্কৃতীদের তাণ্ডব। সন্ধ্যা নামতেই তারা নৌকা ভাসিয়ে ঢুকে পড়ছে জলবন্দি বসতি এলাকায়। সাবার করছে বাঁশ বাগান। কেটে জলে ফেলে দিচ্ছে গামার, কাঁঠাল, আম গাছ। ভেলায় ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে ধান-পাটের জাঁক। সুযোগ বুঝে খুলে নিচ্ছে ঘরের টিনের চালও।

Advertisement

মালবাজার মহকুমার বাসুসুবা থেকে ময়নাগুড়ির বর্মনপাড়া ত্রাণ শিবির জুড়ে তাই আতঙ্ক শরণার্থীদের চোখে মুখে। অনেকে নিরুপায় হয়ে রাতে নদী বাঁধের ক্যাম্পে ছেলেমেয়েদের রেখে বুক সমান জল ভেঙে চলে যাচ্ছে বাড়িতে। সেখানে চৌকির উপরে বেঞ্চ তুলে রাত জেগে ঘর পাহারা দিচ্ছেন। কিন্তু তাতেও দমছে না দুষ্কৃতীরা। গভীর জল দেখে নৌকা বেঁধে গাছ কেটে ফেলে দিচ্ছে তারা। বাঁশ বাগান কেটে ভাসিয়ে নিয়ে উধাও হচ্ছে। পরিস্থিতি দেখে শুধু ধান পাট নয়, ঘরের চাল খুলে বাঁধে এনে তুলছেন আতঙ্কিত মানুষজন।

জলপাইগুড়ির মহকুমাশাসক সীমা হালদার বলেন, “প্লাবিত এলাকায় দুষ্কৃতীদের তাণ্ডবের কথা শুনেছি। পুলিশকে নজরদারি বাড়াতে বলা হয়েছে। কিন্তু সমস্যা হল জল এখনও অনেকটাই। বাঁধ থেকে পাহারা দিয়ে লাভ হচ্ছে না।” অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জেমস কুজুর বলেন, “নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু জলের জন্য সমস্যা হচ্ছে।”

Advertisement

প্লাবিত এলাকার বাসিন্দারা জানান, গত শুক্রবার রাত থেকে গাছ চুরি শুরু হয়েছে। দেড়শো গামার, কাঁঠাল, কদম, আম, চিকরাসি গাছ চুরি হয়েছে। ত্রাণ শিবিরে পরিবার নিয়ে আশ্রিত বর্মণপাড়ার বাসিন্দা নির্মল রায় বলেন, “সূর্য ডুবতে বাইরের এলাকা থেকে নৌকা নিয়ে ঢুকে পড়ছে দুষ্কৃতীরা। টের পেলেও বাঁধের উপর থেকে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। আমার দু’টো বড় গামার গাছ চুরি হয়েছে। একটা কাঁঠাল গাছ অর্ধেক কেটে রেখেছে।” একই দশা বাসুসুবা এলাকার বাসিন্দা নৃপেন দাসের। রবিবার রাতে গাছ কেটে নেওয়ার পরে তাঁর ঘরের চৌকিতে তুলে রাখা ধানের ছ’টি বস্তা নৌকায় তুলে নিয়ে চম্পট দিয়েছে দুষ্কৃতীরা। তিনি বলেন, “বাড়ি বলতে দু’টো চালা ঘর। বাঁধের উপর থেকে কেমন করে পাহারা দেব ? ভয়ে সোমবার সকালে ঘরের টিন খুলে এনেছি।” তিস্তা বাঁধ জুড়ে প্লাবিত মানুষের ঘরের আসবাবপত্র, ভেঙে আনা ঘরের চাল। ধানের বস্তা।


জলপাইগুড়ির বরাপেটিয়ার ত্রাণ শিবিরে সারি সারি তাঁবু খাটিয়ে বানভাসি এ ভাবেই দিন কাটাচ্ছেন। ছবি: সন্দীপ পাল।

ময়নাগুড়ি পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সুভাষ বসু বলেন, “পুলিশ বাঁধে পাহারা দিচ্ছে। কিন্তু রাতে জলবন্দি এলাকায় পাহারা দেওয়ার উপায় নেই। আমরা বাসিন্দাদের পালা করে নৌকা নিয়ে টহল দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছি।” ওই অনুরোধের আগেই বিপদ টের পেয়ে বাসিন্দাদের অনেকেই শুক্রবার থেকে রাতে স্ত্রী সন্তানদের বাঁধের ক্যাম্পে রেখে ঘরে ফিরছেন। যেমন, বর্মণ পাড়ার বিহারী রায়। তিনি বলেন, “সন্ধ্যার পর জলে বাঁশ ভাসতে দেখে সন্দেহ হয়। ঝুঁকি না নিয়ে রাতে কোনও ভাবে ঘরে থেকে ধান পাহারা দিচ্ছি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন