উদ্বাস্তু অতিথি আপ্যায়নে সাফাই হচ্ছে ঘরদোর

বুধবার সীমানাবর্তী বারোবিশার পাকড়িগুড়িতে গিয়ে দেখা গেল, পুরোদমে নাকা তল্লাশি চলছে। কিন্তু একই সঙ্গে সাফসুতরো করা হচ্ছে ফ্লাড শেল্টারগুলিও। বারোবিশায় দু’টি ফ্লাড শেল্টার বা বন্যাত্রাণ কেন্দ্র রয়েছে। এক একটিতে তিনশো জনের জায়গা হতে পারে। প্রশাসন সূত্রের খবর, বছরতিনেক এই কেন্দ্রগুলিতে কেউ থাকেনি। তার আগে কিছু দিন কেন্দ্রীয় বাহিনীর একটি দল ছিল। বাড়িগুলি মেরামতও হয়নি পাঁচ-ছ’বছর। এখন সেখানে ঝাঁট পড়ছে। চলছে সাফাই।

Advertisement

পার্থ চক্রবর্তী ও রাজু সাহা

শেষ আপডেট: ০২ অগস্ট ২০১৮ ০৪:২৬
Share:

প্রস্তুতি: বারোবিশার পাকড়িগুড়িতে সাফ করা হচ্ছে ফ্লাড শেল্টার। নিজস্ব চিত্র।

অসমে খসড়া নাগরিক পঞ্জির (এনআরসি) কথা ঘোষণার দিনেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, ঘরে যদি কেউ আসেন, তা হলে উদ্বাস্তু হিসেবে দেখে সাহায্য করতে হবে। তাঁর সেই কথার সঙ্গে তাল মিলিয়েই এ বারে প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেল আলিপুরদুয়ারে।

Advertisement

এই প্রান্তিক জেলার সঙ্গে অসমের দীর্ঘ সীমানা রয়েছে। বুধবার সীমানাবর্তী বারোবিশার পাকড়িগুড়িতে গিয়ে দেখা গেল, পুরোদমে নাকা তল্লাশি চলছে। কিন্তু একই সঙ্গে সাফসুতরো করা হচ্ছে ফ্লাড শেল্টারগুলিও। বারোবিশায় দু’টি ফ্লাড শেল্টার বা বন্যাত্রাণ কেন্দ্র রয়েছে। এক একটিতে তিনশো জনের জায়গা হতে পারে। প্রশাসন সূত্রের খবর, বছরতিনেক এই কেন্দ্রগুলিতে কেউ থাকেনি। তার আগে কিছু দিন কেন্দ্রীয় বাহিনীর একটি দল ছিল। বাড়িগুলি মেরামতও হয়নি পাঁচ-ছ’বছর। এখন সেখানে ঝাঁট পড়ছে। চলছে সাফাই।

হঠাৎ এই তৎপরতা কেন? তা হলে কি ‘অতিথিদের’ জন্য জায়গার ব্যবস্থা করে রাখতে নির্দেশ এসেছে প্রশাসনের শীর্ষস্তর থেকে? আলিপুরদুয়ারের জেলাশাসক নিখিল নির্মল বলেন, ‘‘এ ব্যাপারে রাজ্য থেকে কোনও নির্দেশ আসেনি৷ যদি তেমন কোনও পরিস্থিতি তৈরি হয় (অর্থাৎ অসমে গোলমাল বাধে), তখন রাজ্য প্রশাসন থেকে যেমন নির্দেশ আসবে, সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে৷”

Advertisement

অসম থেকে লোক এলে যে তাড়িয়ে দেওয়া হবে না, সেটা কিন্তু স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে তৃণমূলের জেলা সভাপতি মোহন শর্মার কথায়। তিনি বলেন, ‘‘ওপাশ থেকে লোক এলে আমরা তো তাড়িয়ে দিতে পারব না।’’ তিনি জানান, তখন দল ও প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে উপরমহলের নির্দেশমতো পদক্ষেপ করা হবে।

আরও পড়ুন: গুয়াহাটির হাজার হাজার বাঙালির চোখে নাগরিক-আশঙ্কা

অসম সীমানা লাগোয়া ভল্কা বারোবিশা-২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান সুবলচন্দ্র দাস অবশ্য এত রাখঢাক না করেই বলেন, “কয়েক বছর আগে অসমে গোলমালের সময় ৫০-৬০টি পরিবার এখানে এসেছিল৷ তাদের আশ্রয় দিয়েছিলাম৷ এ বারও যদি তেমন হয়, তবে ফেলে দিতে পারব না৷ প্রাথমিক ভাবে তাদের আশ্রয় দিতেই হবে৷ সে জন্যই দু’টো বন্যাত্রাণ কেন্দ্র সাফসুতরো করা হচ্ছে৷’’ ওই গ্রাম পঞ্চায়েতেরই সদস্য মন্টু বিশ্বাস বলেন, “দু’দিন আগে প্রশাসনের তরফেও আমাদের বন্যাত্রাণ কেন্দ্র দু’টি সাফসুতরো করতে বলা হয়৷” গত দু’দিন ধরে বন্যাত্রাণ কেন্দ্রগুলিকে বাসযোগ্য করে তোলার পিছনে যে প্রশাসনের উপরমহলের সায় আছে, সেই ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে নবান্ন থেকেও।

তা হলে অসম সীমানায় এত নিরাপত্তার কড়াকড়ি কেন? এক পুলিশকর্তার কথায়, এই মওকায় যাতে কোনও জঙ্গি বা দুষ্কৃতী ঢুকে পড়তে না পারে, তাই এই সতর্কতা। ঘটনাচক্রে গত রাতেই বঞ্চুকামারি থেকে ধরা পড়েছে অসমের কোকরাঝাড়ের বাসিন্দা, রাভা ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্টের সদস্য গঙ্গারাম রাভা। পুলিশের দাবি, মঙ্গলবারই গঙ্গারাম সীমানা পার হয়ে পশ্চিমবঙ্গে ঢোকে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement