জল ছাড়া নিয়ে শুরু টানাপড়েন

সোমবার সন্ধ্যায় দিল্লি যাওয়ার আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়ে দেন, ‘‘রাজ্যে এখনও বন্যা পরিস্থিতি হয়নি। আমরা সব দিকে নজর রাখছি। ঝাড়খণ্ড আমাদের না-জানিয়ে জল ছেড়েছে। এ ভাবে বৃষ্টি চললে সমস্যা হবে।’’

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা ও রাঁচী শেষ আপডেট: ২৫ জুলাই ২০১৭ ০৫:০৯
Share:

মৎস্য-শিকার: টানা বৃষ্টিতে উপচে গিয়েছে পুরুলিয়ার চাকলতোড়ের তারা জলাধার। সেখানেই চলছে মাছ ধরা। সোমবার। ছবি: সুজিত মাহাতো।

দক্ষিণবঙ্গে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হতেই জল ছাড়া নিয়ে চাপানউতোর শুরু হয়ে গেল বাংলা ও ঝাড়খণ্ডের মধ্যে।

Advertisement

টানা বৃষ্টিতে রাজ্যের বহু এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে বিভিন্ন জলাধার থেকে জল ছাড়ায় দুই মেদিনীপুরের ডেবরা, ঘাটাল, পিংলা, হুগলির আরামবাগ মহকুমা, পান্ডুয়া, হাওড়ার উদয়নারায়নপুর এবং বীরভুমের লাভপুর, সাঁইথিয়া, সিউড়ির বহু নিচু এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। বাঁকুড়ায় দ্বারকেশ্বর এবং বর্ধমানে অজয় ও দামোদর বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে। আবহাওয়া দফতর দক্ষিণবঙ্গ ও ঝাড়খণ্ডে ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস দেওয়ায় আশঙ্কা বেড়েছে। কারণ, ঝাড়খণ্ডে বেশি বৃষ্টি হলেই সেই জল নেমে আসবে রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলিতে। নবান্নের আশঙ্কা, বন্যা তখন আর এড়ানো যাবে না।

সোমবার সন্ধ্যায় দিল্লি যাওয়ার আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়ে দেন, ‘‘রাজ্যে এখনও বন্যা পরিস্থিতি হয়নি। আমরা সব দিকে নজর রাখছি। ঝাড়খণ্ড আমাদের না-জানিয়ে জল ছেড়েছে। এ ভাবে বৃষ্টি চললে সমস্যা হবে।’’

Advertisement

না-জানিয়ে জল ছাড়ার অভিযোগ অবশ্য মানতে চায়নি প্রতিবেশী রাজ্যটি। ঝাড়খণ্ডের সেচমন্ত্রী চন্দ্রপ্রকাশ চৌধুরী বলেন, ‘‘এই অভিযোগ ভিত্তিহীন। ঝাড়খণ্ডের কোনও বাঁধ থেকে জল ছাড়া হলে সঙ্গে সঙ্গেই তা বাঁধ সংলগ্ন পশ্চিমবঙ্গের জেলাগুলির প্রশাসনকে জানিয়ে দেওয়া হয়। এ বারেও তা করা হয়েছে।’’ বর্ষণে ঝাড়খণ্ডের অবস্থাও যে সঙ্গিন, তা-ও জানিয়েছেন মন্ত্রী।

আরও পড়ুন:গুজরাতের চাপে সরছে না বাংলার নিম্নচাপ

গত চার দিনের টানা বৃষ্টিতে কোথায় কত ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তার হিসেব নিতে এ দিন নবান্নে প্রশাসনের পদস্থ কর্তাদের নিয়ে বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী। বৈঠকের পরে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘আরামবাগ, গোঘাট, ঘাটাল ও উদয়নারায়ণপুরে ওরা (ঝাড়খণ্ড) জল ছাড়ায় জল জমেছে।’’

রাজ্যের সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ও বিভিন্ন জেলার জেলাশাসক ও ইঞ্জিনিয়ারদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্স করেন। রাজীববাবু বলেন, ‘‘ডিভিসি-কে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে কোনও ভাবেই বাড়তি জল ছাড়া যাবে না। দফতরের ইঞ্জিনিয়ারদেরও দায়িত্ব ভাগ করে দেওয়া হয়েছে।’’

মাইথন বাঁধ কর্তৃপক্ষের তরফে জনসংযোগ আধিকারিক বিজয় কুমার বলেন— ঝাড়খণ্ডের কোন বাঁধ থেকে কখন কত জল ছাড়া হবে, তা ঠিক করে ‘দামোদর ভ্যালি রিভার রেগুলেটরি কমিশন’। ঝাড়খণ্ডের পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গের প্রতিনিধিরাও তাতে রয়েছেন। সবাইকেই জানিয়েই পদক্ষেপ করা হয়। জল ছাড়ার সব তথ্য জানানো হয় বাঁধ সংলগ্ন জেলাগুলির প্রশাসনকেও। ওই আধিকারিক জানান, জলধারণ ক্ষমতা পেরিয়ে গেলে জল ছাড়তেই হয়। না-হলে বাঁধ ভেঙে বিপুল ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে। ডিভিসি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, তাঁরা মাইথন থেকে ২০০০ কিউসেক ও পাঞ্চেত থেকে ২৪ হাজার কিউসেক জল এ পর্যন্ত ছেড়েছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন