State News

নতুন করে বহু এলাকা প্লাবিত, রাজ্যে বন্যায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৩১

ঘাটালের মনোহরপুরেও জলে আটকে রয়েছেন ২০ জন। আজ, শনিবার ঘাটালে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী গিয়ে উদ্ধার কাজে নামবে। দাসপুরেও বহু এলাকা থেকে এখনও জল নামেনি। ফলে কার্যত দিশেহারা বাসিন্দারা।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৯ জুলাই ২০১৭ ১৪:১৭
Share:

উদ্ধার: পুরশুড়ায় তোলা নিজস্ব চিত্র।

বন্যা পরিস্থিতির এখনও উন্নতি হয়নি দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিতে। বৃষ্টি থেমে গিয়েছে ঠিকই, কিন্তু বাঁধের ছাড়া জলে নদীগুলো ফুলে ফেঁপে উঠছে। জলের চাপে বাঁধগুলো ভেঙে যাওয়ায় ফের নতুন করে প্লাবিত হচ্ছে বিভিন্ন গ্রাম। রাজ্যের বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের সচিব সুরেশ কুমার শনিবার জানান, বন্যায় এ পর্যন্ত মোট ৩১ জনের মৃত্যু হয়েছে। মোট ৪০৩টি ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছে। ৯০ হাজার মানুষ ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন।

Advertisement

দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটাল ও দাসপুরের। অন্য দিকে, হাওড়ার উদয়নারায়ণপুরের অবস্থাও খুব একটা ভাল নয়। ঘাটালে শিলাবতী নদীর বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় ফের নতুন করে প্লাবিত হয়েছে বিভিন্ন এলাকা। হু হু করে জল ঢুকছে গ্রামগুলোতে। দাসপুরের প্রায় ৯০টি গ্রাম এখনও জলমগ্ন। কোথাও কোথাও জলস্তর নামলেও নদীবাঁধগুলো ভেঙে যাওয়ায় বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। শিলাবতী নদীর বাঁধের একাংশ ভেঙে গিয়েছে আগেই।

আরও পড়ুন: শিশু পাচার কাণ্ডে রূপার বাড়িতে সিআইডি

Advertisement

বৃহস্পতিবার ঘাটালের প্রতাপপুরে বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় প্রচুর মানুষ জলবন্দি হয়ে পড়েন। তাঁদের উদ্ধারের জন্য শুক্রবার বায়ুসেনার হেলিকপ্টার পাঠানো হয়। কিন্তু, বাসিন্দারা যেতে রাজি হননি। ফলে ফিরে যেতে হয় কপ্টারটিকে। বায়ুসেনার দাবি, কপ্টার থেকে নামানো দড়ির মইয়ে উঠতে সাহস করেননি অনেকে। অনেকে আবার বাড়ি ছেড়ে আসতে চাননি। শনিবার বেলা সাড়ে ১২টা নাগাদ ফের বায়ুসেনার কপ্টার উদ্ধারকাজে যায় প্রতাপপুরে। এ দিন সেখান থেকে মোট ৯ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে।

ঘাটালের মনোহরপুরেও জলে আটকে রয়েছেন ২০ জন। আজ, শনিবার ঘাটালে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী গিয়ে উদ্ধার কাজে নামবে। দাসপুরেও বহু এলাকা থেকে এখনও জল নামেনি। ফলে কার্যত দিশেহারা বাসিন্দারা। পানীয় জলের সঙ্কটও দেখা দিয়েছে। ঘাটাল শহরের আশপাশের ৪১টি পঞ্চায়েত এলাকা পুরোপুরি জলমগ্ন হয়ে পড়ে। গ্রামে গ্রামে খোলা হয় ত্রাণ শিবির। গোটা ঘাটাল মহকুমায় এই মুহূর্তে ত্রাণ শিবিরের সংখ্যা ৪৭টি। সেখানে সব মিলিয়ে ঠাঁই নিয়েছেন ৫০৮০ জন দুর্গত। ঘাটাল শহরের যে এলাকাগুলোতে জল নেমে গিয়েছিল আজ সকাল থেকে সে সব জায়গায় ফের জল ঢুকতে শুরু করেছে। তুলনায় একটু উঁচু এলাকাগুলোতেও জল ঢুকছে।

হাওড়ার উদয়নারায়ণপুরের পাঁচারুলের রামসরণচক গ্রামে শুক্রবার রাতে বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় বেশ কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। জেলার ১১টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে ১০টি জলের কবলে। একশোর বেশি গ্রাম জলের তলায়। মুণ্ডেশ্বরীর বাঁধ ভাঙায় উদয়নারায়ণপুর থেকে জল ঢুকতে শুরু করেছে আমতার দিকেও। আমতার সাব পাওয়ার স্টেশন জলের তলায়। হাসপাতাল, স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে জল ঢুকে যাওয়ায় পরিষেবা ব্যাহত হচ্ছে। এলাকায় বিদ্যুত্ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। পুরশুঁড়ার ৮টি পঞ্চায়েত এবং খানাকুলের দু’টি ব্লকে জল বিন্দুমাত্র নামেনি। উল্টে রূপনারায়ণের জল ঢোকায় জলস্তর বাড়তে শুরু করেছে। ফলে পুরশুঁড়া ও খানাকুল কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। শুক্রবার বিকেলে খানাকুলের মাইনানে নাতিকে বাঁচাতে গিয়ে ঠাকুমা জলে ডুবে যান। তাঁর দেহ উদ্ধার করা হয়েছে। অন্য দিকে, পুরশুঁড়ার তোকিপুরে এক জনের জলে তলিয়ে যাওয়ার খবর পাওয়া গিয়েছে।

অন্য দিকে, পূর্ব বর্ধমানের জামালপুরের অবস্থা খুবই শোচনীয়। জামালপুর থানা এলাকার ৯টি গ্রাম কার্যত বিচ্ছিন্ন। এখানে রিং বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় ফের দামোদরের জল ঢুকছে গ্রামগুলোতে। জামালপুর মূলত কৃষিভিত্তিক এলাকা। জমির পর জমি জলের নীচে চলে গিয়েছে। প্রচুর ফসল নষ্ট হয়ে গিয়েছে।

প্রশাসন সূত্রে খবর, দামোদর ব্যারেজ থেকে ধীরে ধীরে জল ছাড়ার পরিমাণ অনেকটাই কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। মাইথন, পাঞ্চেত থেকেও জল ছাড়ার পরিমাণ কমিয়ে দেওয়া হবে বলেও জানা গিয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন