গঙ্গায় তলিয়েছে ঠাঁই, বন্ধুর বাড়ি পরবাসী বিধায়ক

গঙ্গা গ্রাস করেছে বিধায়কের ঘর। সে দিন এলাকার আরও শতাধিক পরিবারের সঙ্গে পথে এসে দাঁড়াতে হয়েছিল তাঁর পরিবারকেও। পরে এক বন্ধুর বাড়িতে আশ্রয় মিলেছে মালদহের বৈষ্ণবনগরের বিজেপি বিধায়ক স্বাধীন সরকারের।

Advertisement

জয়ন্ত সেন

বৈষ্ণবনগর শেষ আপডেট: ২৬ অগস্ট ২০১৬ ০৩:২৮
Share:

গঙ্গা গ্রাস করেছে বিধায়কের ঘর। সে দিন এলাকার আরও শতাধিক পরিবারের সঙ্গে পথে এসে দাঁড়াতে হয়েছিল তাঁর পরিবারকেও। পরে এক বন্ধুর বাড়িতে আশ্রয় মিলেছে মালদহের বৈষ্ণবনগরের বিজেপি বিধায়ক স্বাধীন সরকারের। এখন সেই অস্থায়ী আস্তানা থেকেই চলছে এলাকার ভাঙন পীড়িত মানুষগুলির জন্য রসদ সংগ্রহের লড়াই। বিধায়কের এই দুর্গতিতেও দলের রাজ্য নেতৃত্ব তাঁর খোঁজ নিয়ে উঠতে পারেনি। তবে বুধবার স্বাধীনবাবুকে ফোন করে তাঁর খবর নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

Advertisement

স্বাধীনবাবু জানিয়েছেন, বুধবার সকাল ১০টা ৪০ মিনিট নাগাদ তাঁর মোবাইলে ফোন করে প্রায় দশ মিনিট কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি কোথায় আছেন, কেমন আছেন— সবই জানতে চান। নিজের দুর্দশার কথা জানানোর পাশাপাশি গঙ্গা ভাঙনে বিপর্যস্ত তাঁরই প্রতিবেশী বীরনগর ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের সরকারটোলা, রবিদাসপাড়া ও চিনাবাজারের কয়েকশো বাসিন্দার কথাও তুলে ধরেন স্বাধীনবাবু। তাঁর অভিযোগ, ‘‘কোথাও দুর্গতদের মধ্যে ঠিক ভাবে ত্রাণ বিলি করা হচ্ছে না। মুখ্যমন্ত্রীর কাছে তাই আর্জি জানিয়েছি, ভাঙন পীড়িত ও বন্যা কবলিত এলাকার মানুষরা যেন ত্রাণ পায়। পুনর্বাসনেরও যাতে ব্যবস্থা হয়।’’

দল খোঁজ নিচ্ছে না, অথচ শাসকদলের শীর্ষ নেত্রী ফোন করেছেন— এই খবরে এলাকায় রীতিমতো আলোচনা শুরু হয়ে গিয়েছে। সম্প্রতি যে ভাবে বিভিন্ন দল থেকে জনপ্রতিনিধিরা শাসকদলে নাম লেখাচ্ছেন, তাতে এমন জল্পনা হওয়াটা অস্বাভাবিক নয়বলেই মনে করছেন মালদহের লোকজনও। যে ভাবে দল পাশে দাঁড়ায়নি, তাতে খেদও রয়েছে বিজেপি বিধায়কের। তবে তৃণমূলে যোগ দেওয়ার বিষয়টি তিনি উড়িয়ে দিয়েছেন। বলেছেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী তো সৌজন্য দেখিয়েছেন। আর বিজেপি আমার রক্তে। অন্য দলে যাওয়ার কোনও প্রশ্নই ওঠে না।’’

Advertisement

গত ২৯ জুলাই রাতে কালিয়াচক ৩ ব্লকের বীরনগর ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের সরকারটোলা ও চিনাবাজার গ্রামের প্রায় ১০০ পরিবারের বাড়িঘর গ্রাস করে গঙ্গা। বৈষ্ণবনগরের বিধায়ক স্বাধীন সরকারের পৈত্রিক বাড়ির একটা বড় অংশও ওই রাতে গঙ্গায় তলিয়ে যায়। সব হারিয়ে যখন আকাশের নীচে, তখন তাঁর পাশে দাঁড়ান প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক বিজয়কুমার প্রামাণিক। দোতলা বাড়ির একতলায় থাকতে দেন অকৃতদার বিধায়ক বন্ধুকে। স্বাধীনবাবুর ছোট ভাই মনোতোষও পরিবার নিয়ে ঠাঁই নিয়েছেন সেখানে। বৃদ্ধ বাবা-মাকে পাঠানো হয়েছে এই ব্লকেরই কুম্ভীরা গ্রাম পঞ্চায়েতের সুখপাড়ায় তাঁদের বোনের বাড়িতে।

বন্ধুর বাড়ির আস্তানাতেই এখন এলাকার মানুষ নানা সমস্যায় আসছেন বিধায়কের কাছে। তিনিও সাধ্যমতো চেষ্টা করছেন পাশে দাঁড়ানোর। বললেন, ‘‘পুরো পরিস্থিতি জানিয়ে রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের মাধ্যমে কেন্দ্রের জলসম্পদ মন্ত্রী উমা ভারতীর কাছে চিঠি পাঠিয়েছি। ওই দফতর সেই চিঠির প্রাপ্তি স্বীকার করেছে। আশায় আছি, এলাকার মানুষের জন্য কিছু সাহায্য পাওয়া যাবে।’’

কিন্তু এর পর নিজের ঠিকানা কী হবে? এখন এই নিয়ে ভাবার সময় নেই স্বাধীনের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন