Sukanta Majumdar's adopted village

মোদীর নির্দেশে সুকান্তের দত্তক নেওয়া গ্রামে রাস্তার হতশ্রী দশা! সাংসদ দুষছেন তৃণমূলের জেলা পরিষদকে

সুকান্তের দাবি, গত বছর মে মাসেই তিনি রাস্তা সারাইয়ের জন্য ৫০ লক্ষ টাকা দিয়েছিলেন। সেই টাকা ইচ্ছে করে রাস্তা সংস্কারের কাজে খরচ করেনি দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা পরিষদ।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

বালুরঘাট শেষ আপডেট: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৯:৫৪
Share:

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

একেবারে হতশ্রী দশা রাস্তার! দু’দিকের ধার ভাঙা। পিচ উঠে গিয়েছে। গর্ত হয়ে গিয়েছে পাথর বেরিয়ে। চতুর্দিক খানাখন্দে ভরা। তাতে চাকা পড়ে ছোটবড় দুর্ঘটনা তো ঘটছেই, গাড়িরও ক্ষতি হচ্ছে! একমাত্র বড় রাস্তার এমন বেহাল দশায় তিতিবিরক্ত চক রামপ্রসাদ গ্রামের বাসিন্দারা। ঘটনাচক্রে, সাংসদ নির্বাচিত হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নির্দেশে নিজের বালুরঘাট কেন্দ্রের ভাটপাড়া অঞ্চলের এই গ্রামটিকে দত্তক নিয়েছিলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার।

Advertisement

সুকান্ত অবশ্য গ্রামের রাস্তার এমন শোচনীয় দশার জন্য তৃণমূল পরিচালিত জেলা পরিষদকেই দুষেছেন। তাঁর দাবি, গত বছর মে মাসেই তিনি রাস্তা সারাইয়ের জন্য ৫০ লক্ষ টাকা দিয়েছিলেন। সেই টাকা ইচ্ছে করে রাস্তা সংস্কারের কাজে খরচ করেনি দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা পরিষদ। সাংসদ যে অর্থ দিয়েছিলেন, তা স্বীকার করে নিয়েছেন জেলা পরিষদের সহ সভাধিপতি অম্বরীশ সরকার। তাঁর অবশ্য বক্তব্য, ‘‘নিয়ম মেনে সরকারি কাজ করতে গিয়ে দেরি হচ্ছে। খুব দ্রুত ওই রাস্তার কাজ শুরু হবে।’’

২০১৪ সালে দিল্লির মসনদে বসার পরেই প্রধানমন্ত্রী সব সাংসদকে অনুরোধ করেছিলেন নিজেদের নির্বাচনী কেন্দ্রে একটি করে গ্রাম দত্তক নিতে। আর সেটিকেই সাজিয়ে-গুছিয়ে বানিয়ে তুলতে একটি আদর্শ গ্রাম। পাঁচ বছরের মধ্যে প্রতি সাংসদ এমন তিনটি গ্রামকে আদর্শ হিসেবে গড়ে তুললে ধাপে ধাপে দেশের সব গ্রামই সেজে উঠবে নব কলেবরে। ‘সংসদ আদর্শ গ্রাম যোজনা’ ঘোষণার পর প্রধানমন্ত্রী নিজের নির্বাচনী কেন্দ্র বারাণসীতে জোয়াপুর নামে একটি গ্রাম দত্তক নিয়েছিলেন। সেই কাজ সম্পূর্ণ করে বারাণসীতেই আর একটি পিছিয়ে পড়া গ্রাম নাগেপুরকেও দত্তক নিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। কংগ্রেসের সনিয়া গান্ধী তাঁর রায়বরেলী কেন্দ্রের উড়য়া গ্রাম আর রাহুল গান্ধীও জগদীশপুর গ্রাম দত্তক নিয়েছিলেন। সুকান্তও ২০১৯ সালে প্রথম বার সাংসদ নির্বাচিত হওয়ার পরেই চক রামপ্রসাদ গ্রামটি দত্তক নেন।

Advertisement

চক রামপ্রসাদের বাসিন্দাদের বক্তব্য, সুকান্ত গ্রামটি দত্তক নেওয়ার পর তাঁরা আশায় বুক বেঁধেছিলেন, এ বার ভোলই পাল্টে যাবে এলাকার! গ্রামের সার্বিক উন্নয়ন হবে। তার পাঁচ বছর পূর্ণ হতে চলল, কিন্তু গ্রামের সঙ্গে গোটা জেলার একমাত্র সংযোগকারী রাস্তার কেন সংস্কার করা হল না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন গ্রামবাসীরা। শুধু চক রামপ্রসাদ নয়, চক শ্যাম, দুধকুরি, নয়াপাড়া ও মোল্লাপাড়ার মতো অন্তত চার-চারটি গ্রামের মানুষের যাতায়াতের একমাত্র ভরসা ২.৮ কিলোমিটারের ওই রাস্তাটি। এলাকাবাসীর অভিযোগ, রাস্তা সারাইয়ের জন্য বার বার প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েও কোনও লাভ হয়নি। যেমন বেহাল ছিল, তেমনই থেকে গিয়েছে সেই রাস্তা!

২০০৭ সালে তৎকালীন বাম পরিচালিত জেলা পরিষদ এই রাস্তা তৈরি করে। তার পর দীর্ঘ সময় পেরোলেও জেলা সদর থেকে মাত্র পাঁচ কিলোমিটার দূরত্বে থাকা ওই রাস্তায় নতুন করে আর সংস্কারের কাজ হয়নি। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, রাস্তার এমনই দশা যে, এখন প্রাণ হাতে নিয়ে যাতায়াত করতে হয়। সাইকেল সমেত আরোহীদের পড়ে যাওয়ার ঘটনা নিত্য ঘটেই চলেছে। টোটোচালকেরাও যেতে চান না ওই রাস্তা দিয়ে। চক রামপ্রসাদের বাসিন্দা ভবেশচন্দ্র দেবনাথ বলেন, ‘‘শুধু আমরাই নই, আশপাশের আরও পাঁচটা গ্রামের মানুষ এই রাস্তা দিয়েই চলাফেরা করেন। বাচ্চা ছেলেমেয়েরা স্কুলে যায়। প্রতিদিন গড়ে অন্তত দু’হাজার মানুষ যাতায়াত করেন এই রাস্তা দিয়ে। কিন্তু এই রাস্তাটিকে সারানোর কেউই উদ্যোগে নেয় না। সাংসদ রাস্তা সারানোর জন্য ৫০ লক্ষ টাকা দিয়েছেন বলে শুনেছি, কিন্তু কাকে দিয়েছেন, কোথায় দিয়েছেন, তা জানা নেই আমাদের।’’ গ্রামের আর এক বাসিন্দা বাপি দেবনাথ বলেন, ‘‘সাংসদ বলছেন, তিনি টাকা দিয়েছেন। তা হলে সেই টাকা কোথায় গেল? কেন ওই টাকা দিয়ে রাস্তা সারাই করা হল না? জেলা পরিষদ যদি ইচ্ছে করে টাকা আটকে রাখে, তা ঠিক নয়।’’

সুকান্তও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, দ্রুত রাস্তা সারাইয়ের কাজ চালু না হলে আগামী দিনে এলাকার মানুষকে নিয়ে বড় আন্দোলনে নামবেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘রাস্তার বেহাল দশা দেখেছি। যত বারই গিয়েছি, তত বারই অসুবিধা হচ্ছে। সেই কারণেই তো টাকা দিয়েছিলাম। তার পর ছ’মাস কেটে গেলেও এখনও কাজ শুরু করতে পারেনি জেলা পরিষদ।’’ সাংসদের দাবি, লোকসভা ভোটের আগে যাতে কাজ শুরু না হয়, সেই চেষ্টা করা হচ্ছে। শাসকদলের ‘নোংরা রাজনীতি’র শিকার হচ্ছেন গ্রামবাসীরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন