তিন তালাক

মুসলিম মহিলারা কেন পুলিশে যাবেন: সুলতান

তিন তালাক প্রথা বিলোপের দাবিতে মুসলিম মহিলা সংগঠনগুলি যখন সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে, তখন দু’দিন আগে কলকাতায় জমিয়তে উলেমার সভায় দাঁড়িয়ে এই ‘এই শরিয়তি পদ্ধতি’ জিইয়ে রাখার পক্ষেই জোরালো সওয়াল করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মন্ত্রিসভার দুই শীর্ষ সারির মন্ত্রী।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৯ নভেম্বর ২০১৬ ০৪:১৫
Share:

তিন তালাক প্রথা বিলোপের দাবিতে মুসলিম মহিলা সংগঠনগুলি যখন সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে, তখন দু’দিন আগে কলকাতায় জমিয়তে উলেমার সভায় দাঁড়িয়ে এই ‘এই শরিয়তি পদ্ধতি’ জিইয়ে রাখার পক্ষেই জোরালো সওয়াল করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মন্ত্রিসভার দুই শীর্ষ সারির মন্ত্রী। দলের এ হেন রাজনৈতিক অবস্থানকে আরও উচ্চতা দিতে গিয়ে মঙ্গলবার নতুন বিতর্ক উস্কে দিলেন তৃণমূলেরই দুই সংখ্যালঘু নেতা ও সাংসদ সুলতান আহমেদ এবং আহমেদ হাসান ইমরান। এঁদের একজন যেমন তালাক প্রথাকে মুসলিম মহিলাদের ‘মুক্তির পথ’ বলে ব্যাখ্যা করলেন, অন্যজন আবার প্রশ্ন তুললেন, পারিবারিক বিবাদের বিষয় নিয়ে মুসলিম মহিলারা পুলিশের শরণাপন্ন হবেন কেন?

Advertisement

এ দিন রানি রাসমণি অ্যাভিনিউতে ইমাম-মুয়াজ্জিনদের সভায় আমন্ত্রিত ছিলেন শাসক দলের এই দুই সংখ্যালঘু নেতা। সেখানে বক্তৃতা দিতে গিয়ে শুরুতেই তিন তালাক বিতর্কের প্রসঙ্গ তোলেন সুলতান। শরিয়তি আইন অনুযায়ী ওই প্রথা যে যুক্তিসঙ্গত তা তুলে ধরেন। পরেই বলেন,‘‘অনেক মহিলাই নির্যাতনের অভিযোগ নিয়ে ফৌজদারি আইনের ৪৯৮(এ) ধারায় অভিযোগ জানাতে যায়। কিন্তু মুসলিম মহিলারা পুলিশের কাছে যাবে কেন? পঞ্চায়েতে পঞ্চায়েতে গিয়ে এই ব্যাপারটা আমাদের দেখতে হবে। বোঝাতে হবে।’’

মঞ্চে দাঁড়িয়ে এর পর প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে যোগ্য সঙ্গত করেন তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ আহমেদ হাসান ইমরানও। তিন তালাক প্রথা বিলোপের দাবির বিরোধিতা করে তিনি বলেন,‘‘তালাক দিলেই অত্যাচার হয়ে গেল? তালাক আসলে মহিলাদের মুক্তির পথ।’’ তিন তালাকের পরে মুসলিম মহিলারা দ্বিতীয় বার বিয়ে করতে পারেন বলেও বোঝানোর চেষ্টা করেন ইমরান। একই সঙ্গে বধূহত্যার প্রসঙ্গ টেনে তাঁর এও বক্তব্য,‘‘বৃহত্তর সমাজে বধূহত্যা যে ভাবে হয় সে তুলনায় মুসলিম সমাজে বধূহত্যা অনেক কম।’’

Advertisement

স্বাভাবিক ভাবেই এই প্রতিটি কথার জন্য ইমাম-মুয়াজ্জিনদের সভায় এ দিন হাততালি কুড়িয়েছেন সুলতান ও ইমরান। কিন্তু রানি রাসমনি রোড থেকে এই কথাগুলি বাইরে ছড়িয়ে পড়তেই সমালোচনার ঝড় উঠেছে। শিক্ষাবিদ মীরাতুন নাহার বলেন,‘‘সুলতান আহমেদ হয়তো বলতে চাইছেন, ইসলাম ধর্মে এমন আইন আছে যে, মহিলাদের থানায় যাওয়ার বা ৪৯৮-এ ধারায় বধূ নির্যাতনের অভিযোগ দায়ের করার প্রয়োজনই নেই। কিন্তু আমি বলছি, প্রয়োজন আছে। প্রয়োজন যে আছে, তার প্রমাণ— এত কাল ধরে তাৎক্ষণিক তিন তালাক প্রথা অনুসারে নির্যাতন চলছে। আর মুসলিম মেয়েরা শুধু তো একটি ধর্মীয় সম্প্রদায়ের সদস্য নন, তাঁরা তো এই ভারতেরও মেয়ে! সুতরাং, তাঁরা যদি ভারতের আইন মেনে যন্ত্রণার অবসান চান, তা হলে তাঁকে বাধা দেওয়া হবে কেন? সেই বাধা দেওয়া তো মৌলবাদিতা!’’ এখানেই না থেমে ইমরানের বক্তব্যেরও জবাব দেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘তালাকের মধ্যে মেয়েদের মুক্তি আছে, সে কথাটা ঠিক। কারণ, তালাক মানে বিবাহবিচ্ছেদ। কিন্তু তাৎক্ষণিক ভাবে তালাক, তালাক, তালাক বললে নিশ্চয়ই কোনও মেয়ের মুক্তি হয় না! বরং, উল্টে এক লহমায় জীবনে অন্ধকার নেমে আসে। আর এই তাৎক্ষণিক তিন তালাক প্রথা ধর্মীয় আইনেরও বিরোধী।’’

তৃণমূল নেতাদের এ হেন মন্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন সিপিএমের শাখা সংগঠন গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির রাজ্য সম্পাদক মিনতি ঘোষও। তাঁর বক্তব্য, ‘‘সামন্ততান্ত্রিক মানসিকতা থেকেই তৃণমূল সাংসদ এমন মন্তব্য করেছেন! মুসলিম মহিলাদের প্রায়ই সালিশি সভায় যেতে বলা হচ্ছে! কোনও সভ্য রাষ্ট্রে এমন জিনিস মানা যায় না।’’ তাঁর আরও অভিযোগ, বিজেপির বিপরীতে মেরুকরণে হাওয়া দেওয়ার জন্যই তৃণমূল তালাক থেকে শুরু করে মুসলিম মহিলাদের বিষয়ে এই ধরনের কট্টরপন্থী অবস্থান নিচ্ছে।

সুলতান-ইমরানের বক্তব্যের বিরোধিতা করেন মালদহের কংগ্রেস সাংসদ মৌসম বেনজির নুরও। তাঁর কথায়, ‘‘এসব কথা বলে ওঁরা মুসলিম মহিলাদের অপমান করছেন। ভারত গণতান্ত্রিক দেশ। সেখানে কোনও মহিলা অন্যায়-অত্যাচারের মুখে পড়লে পুলিশের কাছে যাবেন, সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সুলতান আহমেদরা মধ্যযুগীয় কথা বলে, আসলে মুসলিম মহিলাদের সামাজিক ভাবে আরও অন্ধকারে ঠেলে দিচ্ছেন।’’

যদিও দলের এই দুই নেতার মন্তব্য নিয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া জানাতে চাননি তৃণমূলের দুই সাংসদ আফরিন আলি (অপরূপা পোদ্দার) এবং মমতাজ সংঘমিত্রা। বরং এড়িয়ে গিয়ে অপরূপা বলেন,‘‘দলের অবস্থানের বাইরে কোনও মন্তব্য করব না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন