বৃষ্টির জুজু সামলাতে বঙ্গের ভরসা শুধু প্রার্থনা

পূর্বাভাস শুনে পুজোর উদ্যোক্তা থেকে শুরু উৎসবপ্রেমী, সকলেই মুষড়ে পড়েছেন। তাঁদের প্রার্থনা, শেষ মুহূর্তের ভেল্কিটা যেন প্রকৃতিই দেখায়। উৎসবের পটভূমি শুকনো রেখে প্রকৃতি যেন বুঝিয়ে দেয়, সে মোটেই বেরসিক নয়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৩:৫৭
Share:

প্রতীকী ছবি।

অতন্দ্র নজরদারি চালালেও পুজোর প্রাকৃতিক পরিস্থিতি নিয়ে এত দিন কোনও আগাম ঘোষণায় যায়নি হাওয়ামোরগ। কিন্তু বুধবার আলিপুর আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, সপ্তমী থেকে দশমী পর্যন্ত কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গে মাঝারি বৃষ্টি হতে পারে। বৃষ্টির আশঙ্কা আছে দার্জিলিং-কালিম্পং-তরাই-ডুয়ার্সেও।

Advertisement

পূর্বাভাস শুনে পুজোর উদ্যোক্তা থেকে শুরু উৎসবপ্রেমী, সকলেই মুষড়ে পড়েছেন। তাঁদের প্রার্থনা, শেষ মুহূর্তের ভেল্কিটা যেন প্রকৃতিই দেখায়। উৎসবের পটভূমি শুকনো রেখে প্রকৃতি যেন বুঝিয়ে দেয়, সে মোটেই বেরসিক নয়।

উৎসব মাটি হবে না বলে আশা করছেন কেন্দ্রীয় আবহাওয়া বিভাগের ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল (পূর্বাঞ্চল) স়ঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়ও। তিনি বলছেন, ‘‘এটা প্রাথমিক পূর্বাভাস। পুজোর দিন ছয়েক বাকি। পরিস্থিতি ঠিক কী দাঁড়াবে, তা আরও স্পষ্ট হবে দু’তিন দিন পরে।’’

Advertisement

পুজোয় এ বার বিশেষ পূর্বাভাসের বন্দোবস্ত করছে আলিপুরের হাওয়া অফিস। পঞ্চমীর দিন থেকেই তা চালু হবে। কীসের ভিত্তিতে এই ধরনের পূর্বাভাস দিচ্ছেন আবহবিজ্ঞানীরা?

সঞ্জীববাবুর ব্যাখ্যা, বর্ষা ক্রমশ শেষের পথে এগোচ্ছে। এই পর্বে সে কখনও কখনও বেশ সক্রিয় হয়ে ওঠে। আবহাওয়ার মতিগতি যা, তাতে উৎসবে বর্ষার সেই সক্রিয়তারই আভাস মিলছে। যদি সে সত্যিই তৎপর হয়ে ওঠে, প়ঞ্চমী থেকে বিক্ষিপ্ত ভাবে ব়ৃষ্টি হতে পারে। আবার আবহবিজ্ঞানীদের একাংশ বলছেন, শেষ লগ্নে বর্ষা প্রবল খামখেয়ালি হয়। ফলে এ দিন যে-সব ইঙ্গিত দেখে হাওয়া অফিস পুজোর বৃষ্টির আশঙ্কা করছে, তা আচমকাই বদলে যেতে পারে। তুঘলকিপনা সংবরণ করে ভাল মানুষটির মতো উৎসবে যোগ দিতে পারে বর্ষাও।

এই আশাতেই কিছুটা বল পাচ্ছেন উত্তর কলকাতার একটি নামী পুজোর কর্তা। বলছেন, ‘‘মনেপ্রাণে চাই, আবহবিজ্ঞানীদের পূর্বাভাসকে যেন ঘোল খাইয়ে ছাড়েন মা দুগ্গা।’’ দক্ষিণ কলকাতার একটি পুজোয় এ বারের থিম বলাগড়ের নৌকা শিল্প। ওই পুজোর এক কর্তার প্রার্থনা, ‘‘নৌকা থিমেই থাকুক। ভিড় যেন হাসিমুখে হেঁটে হেঁটেই ঢোকে মণ্ডপে।’’

কিন্তু এ-সবই আশা আর প্রার্থনার কথা। দুর্ভাবনার দাপট তার থেকে অনেক বেশি। মৃৎশিল্পী এবং পুজোর উদ্যোক্তাদের চিন্তা, কুমোরটুলি থেকে প়ঞ্চমীতেই তো প্রতিমার যাত্রা শুরু হয় মণ্ডপের পথে। বৃষ্টি শুরু হলে দুর্গাপরিবার রওনা দেবে কী ভাবে?

গাঙ্গেয় বঙ্গের উপরে থাকা একটি ঘূর্ণাবর্তের প্রভাবে সোমবার থেকেই বৃষ্টি হচ্ছে। তবে এ দিন সেটি নিম্নচাপে পরিণত হলেও ছত্তীসগঢ়ের দিকে সরে গিয়েছে। হাওয়া অফিসের খবর, সেটি আরও পশ্চিমে সরে যাওয়ায় আজ, বৃহস্পতিবার থেকে আবহাওয়ার উন্নতি হবে। কিন্তু অন্য একটি ঘূর্ণাবর্তের প্রভাবে আজ থেকেই উত্তরবঙ্গে ভারী বৃষ্টি শুরুর আশঙ্কা রয়েছে।

আর্জি-আবেদন, অনুনয়-বিনয় সত্ত্বেও প্রকৃতি যদি পাগলামি করে, তাকে উপেক্ষা করার মন ও মানসিকতাও প্রস্তুত রাখছেন উৎসবপ্রেমীরা। তাঁদের কেউ কেউ বলছেন, সপ্তমী থেকে বৃষ্টি হলেও পুজোর আনন্দ মাটি হবে না। কেননা এখন পুজোর উদ্বোধন শুরু হয়ে যায় মহালয়াতেই। তৃতীয়া থেকে দর্শকেরা পথে নেমে পড়েন। ফলে সপ্তমীতে বৃষ্টি নামলেও আনন্দে ঘাটতি হবে না।

আবহবিজ্ঞানীদের একাংশের বক্তব্য এই প্রত্যাশায় তাল মেলাচ্ছে। ওই আবহবিদদের বক্তব্য, এই সময়ে বিভিন্ন এলাকায় বজ্রগর্ভ মেঘ থেকে বৃষ্টি হয় ঠিকই। তবে সেটা হয় স্থানীয় ভাবে। ফলে উত্তর কলকাতায় বৃষ্টি হলে দক্ষিণ কলকাতার শুকনো থাকতে বাধা নেই। দক্ষিণ ভিজতে থাকলে ধুলো উড়তেই পারে উত্তরে। দিনভর টিপটিপ বা ঝিরঝিরে বৃষ্টির আশঙ্কা কম। হয়তো দুপুরে কোথাও কোথাও এক পশলা বৃষ্টি হয়ে গেল। বিকেল থেকে রাত শুকনোই থাকল আবহাওয়া। ‘‘উৎসব কেমন কাটবে, তার পুরোটাই শেষ বর্ষার খামখেয়ালি প্রকৃতির মর্জির উপরে নির্ভরশীল,’’ মন্তব্য এক আবহবিজ্ঞানীর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন