বিদেশ মন্ত্রকের আপত্তি, আটকাল পাঁচ চিনা ‘মউ’

নবান্নের খবর, বাণিজ্য সম্মেলনে চিনের প্রবল উৎসাহ এবং অংশগ্রহণ নিয়ে প্রথম থেকেই বিদেশ মন্ত্রকের সঙ্গে ঠান্ডা লড়াই চলেছে রাজ্যের।

Advertisement

জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ জানুয়ারি ২০১৮ ০৩:২১
Share:

আহ্বান: বেঙ্গল গ্লোবাল বিজনেস সামিটের মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: রণজিৎ নন্দী

পশ্চিমবঙ্গ নিয়ে চিনের ‘বাড়তি’ আগ্রহ কার্যত মাঠে মারা গেল। কারণ, বিদেশ মন্ত্রকের আপত্তি।

Advertisement

এ বার বেঙ্গল গ্লোবাল বিজনেস সামিটের ‘পার্টনার কান্ট্রি’ হতে চেয়েছিল চিন। তাতে সবুজ সঙ্কেত দেয়নি নরেন্দ্র মোদীর সরকার। চিনের বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে পাঁচটি মউ স্বাক্ষর করার পরিকল্পনাও আপাতত আটকে দিয়েছে বিদেশ মন্ত্রক। মন্ত্রকের যুক্তি, চিনের কোন কোন সংস্থা, কী উদ্দেশ্যে, কার সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধতে এবং রাজ্যে লগ্নি করতে চাইছে, তা আরও ভাল ভাবে খতিয়ে না দেখে ছাড়পত্র দেওয়া যাবে না।

নবান্নের খবর, বাণিজ্য সম্মেলনে চিনের প্রবল উৎসাহ এবং অংশগ্রহণ নিয়ে প্রথম থেকেই বিদেশ মন্ত্রকের সঙ্গে ঠান্ডা লড়াই চলেছে রাজ্যের। এ বার চিনের ৩০টি সংস্থার ৩৯ জন প্রতিনিধি সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন। শিল্প উন্নয়ন নিগম তাঁদের সরাসরি আমন্ত্রণ জানিয়েছিল। সে কথা জেনেও আপত্তি তোলে সাউথ ব্লক। বিদেশ মন্ত্রকের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, দিল্লির অনুমোদন ছাড়া এ ভাবে সরাসরি বিদেশি প্রতিনিধিদের আমন্ত্রণ জানানো যায় না। মন্ত্রকের ছাড়পত্র সাপেক্ষেই বিদেশিদের ভিসা দেওয়া হয়। কিন্তু রাজ্য যে হেতু সরাসরি আমন্ত্রণ জানিয়ে ফেলেছে, তাই চিনা প্রতিনিধিদের ভিসা আটকানো হয়নি।

Advertisement

‘পার্টনার কান্ট্রি’ হিসাবে চিনকে ছাড়পত্র না দেওয়ার প্রসঙ্গেও রাজ্যের ঘাড়েই দায় চাপিয়েছে বিদেশ মন্ত্রক। মন্ত্রকের মুখপাত্রের কথায়, ‘‘এমন কোনও প্রস্তাব মন্ত্রকের কাছে আসেনি।’’ রাজ্যের শিল্প দফতরের এক কর্তা অবশ্য বলেন, ‘‘অনেক বার বলার পরেও ছাড়পত্র মেলেনি। দিল্লি জানিয়েছে, বিভিন্ন মন্ত্রক ও নিরাপত্তা এজেন্সিগুলির অনুমোদন না মিললে তা দেওয়া সম্ভব নয়।’’ ‘ভাইব্র্যান্ট গুজরাত’-এ সহযোগী দেশ হিসাবে চিন কখনও সামিল হয়নি বলে শিল্পকর্তারা জেনেছেন।

বিজিবিএস নিয়ে কেন আগ্রহ দেখিয়েছিল চিন? সম্মেলনের প্রাক্কালে কলকাতায় চিনের কনসাল জেনারেল মা ঝানউ জানিয়েছিলেন, তাঁদের দেশের ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ (বিআরআই) প্রকল্পের মধ্যে পড়ছে ভারতের পূর্বাঞ্চল। তাই বেজিং এই অঞ্চলের সঙ্গে নিবিড় ভাবে আর্থিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক গড়তে চায়।

সেই সূত্রেই ইলেট্রনিক্স, ইঞ্জিনিয়ারিং, পরিকাঠামো নির্মাণ, বস্ত্র ইত্যাদি ক্ষেত্রে চিনা সংস্থাগুলির সঙ্গে পাঁচটি মউ সই করার প্রস্তাব ছিল। বিদেশ মন্ত্রকের এক মুখপাত্র জানান, রাজ্য ডিসেম্বরে মউ-এর খসড়া পাঠিয়েছিল। এত কম সময়ে সব দিক খতিয়ে দেখা সম্ভব হয়নি। চুক্তির খসড়া এখন আইন মন্ত্রক পরীক্ষা করছে। অন্যান্য মন্ত্রকেও মতামত নেওয়া হবে। ডোকলাম পরবর্তী পরিস্থিতিতে চিনা লগ্নির ‘নেপথ্য’ যাচাই না-করে ছা়ড়পত্র দেওয়া যাবে না। রাজ্যের এক কর্তা অবশ্য বলেন, ‘‘মউ এর খসড়া অনেক আগে পাঠানো হয়নি ঠিকই, কিন্তু যখন পাঠানো হয়েছিল তার পরেও ছাড়পত্র দেওয়ার যথেষ্ট সময় ছিল।’’

তবে কেন্দ্রের আশ্বাস, সব ঠিক থাকলে লগ্নিতে বাধা হবে না তারা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন