শিলিগুড়ির বন্যপ্রাণী উদ্যান এবং সুন্দরবনের প্রবেশ পথ ঝড়খালিতে, হেড়োভাঙা নদীর কোলে বাঘের বিচরণভূমি গড়তে ৮০ কোটিরও বেশি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে বলে জানালেন বনমন্ত্রী বিনয়কৃষ্ণ বর্মন। বৃহস্পতিবার বিধানসভায় তাঁর বাজেট বক্তৃতায় এমনই দাবি করেছেন বিনয়বাবু। উত্তরবঙ্গের ওই সাফারি পার্ক গড়ার ব্যাপারে বেশ কিছু দিন ধরেই আগ্রহ দেখিয়ে আসছেন মুখ্যমন্ত্রী। ইতিমধ্যেই সরকার ঘনিষ্ট বেশ কয়েক জন শিল্পোদ্যোগীকে নিয়ে ঝড়খালি গিয়ে বাঘের ওই বিচরণভূমির উদ্বোধনও করে এসেছেন মুখ্যমন্ত্রী। বস্তুত তাঁর আগ্রহকে মান্যতা দিতেই বন দফতর যে তড়িঘড়ি ওই দু’টি উদ্যান গড়তে চাইছে, বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছিল তা-ও। এ দিন মন্ত্রীর কথায় সে ব্যপারে সরকারি সিলমোহর পড়ল। মন্ত্রী জানান, শিলিগুড়ির পার্কের জন্য ৭৮ কোটি টাকা এবং ঝড়খালির জন্য প্রায় ৬ কোটি টাকার প্রস্তাব রাজ্য পরিকল্পনা পর্ষদে পাঠানো হয়েছে। কলকাতার আলিপুর এবং দার্জিলিঙের পদ্মজা নাইডু চিড়িয়াখানার জন্যও বরাদ্দের অঙ্ক প্রায় সাড়ে তিনশো কেটি টাকা।
সেই সঙ্গে জলাভূমি উন্নয়ন, পরিবেশ বান্ধব পর্যটন, বনাঞ্চলে যোগাযোগ ব্যবস্থা কিংবা বাড়ি তৈরির কাজেও বরাদ্দ করা হয়েছে বেশ কয়েক কোটি টাকা। তবে বির্তক দানা বেঁধেছে, সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্প এলাকায় বাঘের সংখ্যা নিয়ে। মন্ত্রীর দাবি, সুন্দরবনে ১১০টি এবং বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পে অন্তত ১০টি বাঘ রয়েছে। মাস খানেক আগে কেন্দ্রীয় সংস্থা এনটিসিএ-র উদ্যোগে বাঘ সুমারির রিপোর্ট অবশ্য সে কথা বলছে না। ওই রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, সুন্দরবনে বড়জোর ৯৯টি এবং বক্সায় সাকুল্যে ৪টি বাঘের উপস্থিতি টের পাওয়া গিয়েছে। তবে বনকর্তাদের একাংশ গত কয়েক বছর ধরেই দাবি করে আসছেন, বক্সায় কোনও বাঘ নেই। মন্ত্রীর হিসেব নিয়ে তাই প্রশ্ন তুলেছেন বাঘ বিশেষজ্ঞরা। তাঁদেরই এক জনের প্রশ্ন, ‘‘এনটিসিএ (ন্যাশনাল টাইগার কনজারভেশন সোসাইটি) তাদের রিপোর্টে স্পষ্টই জানিয়েছিল দেশ জুড়ে প্রায় ৩০ শতাংশ হারে বাঘের সংখ্যা বাড়লেও রয়েল বেঙ্গল টাইগারের আঁতুরঘর পশ্চিমবঙ্গে তাদের সংখ্যা ক্রমেই কমছে। তা সত্ত্বেও খোদ বিধানসভায় ওই পরিসংখ্যান দেওয়া এক কথায় মিথ্যচার।’’ বিনয়বাবু অবশ্য এ দিন দাবি করেছেন, বন দফতরের পাওয়া হিসেব মেনেই বিধানসভায় ওই তথ্য তুলে দিয়েছেন তিনি।