ভোটের ময়দানে এ বার লড়াই আরও জমজমাট। মাঠে নামছেন রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যসচিব। তবে প্রার্থী হিসেবে নয়, প্রচারে।
রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যসচিব অর্ধেন্দু সেন ‘আক্রান্ত আমরা’-র প্রার্থী অম্বিকেশ মহাপাত্রের হয়ে প্রচার করবেন। বেহালা পূর্ব কেন্দ্রে তৃণমূলের হেভিওয়েট প্রার্থী, কলকাতার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে নির্দল প্রার্থী হয়েছেন অম্বিকেশ। যাঁকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জমানাতেই ব্যঙ্গচিত্র পাঠানোর জন্য গ্রেফতার করা হয়েছিল। সেই অম্বিকেশের হয়েই এ বার প্রচারে নামবেন অর্ধেন্দুবাবু। তাঁর যুক্তি, রাজ্যের উন্নয়নের জন্য ‘পরিবর্তন’ প্রয়োজন। সেই পরিবর্তনের স্বার্থেই তিনি প্রচারে নামবেন বলে ঠিক করেছেন।
ব্যঙ্গচিত্র-কাণ্ডে জেলে যাওয়ার পর থেকেই রাজ্যে প্রতিবাদের অন্যতম মুখ অম্বিকেশ মহাপাত্র। গত সাড়ে চার বছর ধরে তিনি রাজ্যে যারাই শাসক দল বা সরকারের আক্রমণের শিকার হয়েছে তাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। আক্রান্তদের নিয়ে গড়েছেন ‘আক্রান্ত আমরা’। বিভিন্ন ইস্যুতে রাজ্য সরকার এবং শাসক দলের অন্যতম কঠোর সমালোচক হিসেবেই দেখা গিয়েছে এই অধ্যাপককে। তাঁর সঙ্গে ‘আক্রান্ত আমরা’-র হয়ে ডোমজুড়ে প্রার্থী হয়েছেন প্রতিমা দত্ত। প্রতিমাদেবীর স্বামী, প্রয়াত তৃণমূল নেতা তপন দত্ত ২০১১-তে বালিতে খুন হন।
এই দু’টি কেন্দ্রেই বাম বা কংগ্রেসের জোটের কোনও প্রার্থী ঘোষণা হয়নি। এই দুই নির্দল প্রার্থীর হয়ে দু’দলের নেতা-কর্মীরা প্রচারে নেমেছেন। অম্বিকেশকে পাশে নিয়ে বেহালা পূর্ব কেন্দ্রে পদযাত্রাও করেছেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র। সেই প্রচারে অর্ধেন্দুবাবুর মতো পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির আমলা প্রচারে নামলে নতুন মাত্রা যোগ হবে বলেই মনে করছেন রাজনীতিকরা। শাসক দলের বিরুদ্ধেও জোর লড়াই হবে বলে বাম ও কংগ্রেস নেতাদের আশা।
কড়া আমলা হিসেবে পরিচিত অর্ধেন্দুবাবুকে ২০১০-এ রাজ্যের মুখ্যসচিব হিসেবে বেছে নেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। অবসরের পর তিনি গুড়গাঁওতেই থাকেন। লেখালেখি শুরু করেছেন। কখনও আবার বারাণসীতে পড়াতে গিয়েছেন। বাক-স্বাধীনতার পক্ষে দাঁড়িয়ে, অসহিষ্ণুতার বিরুদ্ধে সম্প্রতি ১৭ জন অবসরপ্রাপ্ত আমলা বিবৃতি জারি করেছেন। তাঁদের মধ্যে অর্ধেন্দুবাবুও রয়েছেন। জেএনইউ-তে কানহাইয়া কুমারদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা, হায়দরাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ে রোহিত ভেমুলার আত্মহত্যার মতো ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়েছেন তাঁরা। বাম-কংগ্রেস নেতারা বলছেন, তাঁদের মতো ‘আক্রান্ত আমরা’-ও পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল জমানায় গণতন্ত্রের উপর আঘাত, বাক-স্বাধীনতা খর্ব করার বিরুদ্ধে লড়ছে। অর্ধেন্দুবাবু স্বাভাবিক ভাবেই অম্বিকেশদের হয়ে প্রচারে নামার সিদ্ধান্ত নিয়ে সঠিক কাজ করেছেন।
পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে আমলাদের রাজনীতিতে যোগ দেওয়া ঘটনা নতুন নয়। আর এক প্রাক্তন মুখ্যসচিব মনীশ গুপ্ত যেমন এখন রাজ্যের মন্ত্রী। এর আগে বিক্রম সরকারের মতো প্রাক্তন আমলাও সাংসদ হয়েছেন। অর্ধেন্দুবাবু অবশ্য ঘনিষ্ঠ মহলে জানিয়েছেন, তিনি কোনও পদ বা ক্ষমতার আশায় প্রচারে নামছেন না। উন্নততর বাংলা গড়তেই তাঁর অম্বিকেশদের হয়ে প্রচারে নামার সিদ্ধান্ত।