ক্যানসার যুদ্ধে হার, চলে গেলেন সৈফুদ্দিন

প্রতিপক্ষ সম্পর্কে কখনও কটু শব্দ ব্যবহার করেননি। গলার শির ফুলিয়ে কখনও বক্তৃতা করেননি। শস্তায় হাততালি কুড়োনোর চেষ্টাও ছিল না। যে কাজকে যুক্তিযুক্ত মনে হয়েছে, অন্য দলের হলেও তাকে স্বাগত জানিয়েছেন অকৃপণ কণ্ঠে। রোগের ঝাপ্টায় সেই গলাই বুজে গিয়েছিল কিছু দিন। মারণ-রোগের সঙ্গে লড়াইয়ে শেষ পর্যন্ত হেরে গেলেন প্রাক্তন সাংসদ সৈফুদ্দিন চৌধুরী।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:১৭
Share:

প্রতিপক্ষ সম্পর্কে কখনও কটু শব্দ ব্যবহার করেননি। গলার শির ফুলিয়ে কখনও বক্তৃতা করেননি। শস্তায় হাততালি কুড়োনোর চেষ্টাও ছিল না। যে কাজকে যুক্তিযুক্ত মনে হয়েছে, অন্য দলের হলেও তাকে স্বাগত জানিয়েছেন অকৃপণ কণ্ঠে। রোগের ঝাপ্টায় সেই গলাই বুজে গিয়েছিল কিছু দিন। মারণ-রোগের সঙ্গে লড়াইয়ে শেষ পর্যন্ত হেরে গেলেন প্রাক্তন সাংসদ সৈফুদ্দিন চৌধুরী।

Advertisement

দিল্লির বেসরকারি হাসপাতালে রবিবার রাতে মৃত্যু হল সিপিএমের এই প্রাক্তন নেতার। ক্যানসারে আক্রান্ত সফি কিছু দিন ধরেই ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। গত কয়েক দিনে তাঁর অবস্থার অবনতি হয়েছিল। তাঁর মৃত্যুতে ভারতীয় রাজনীতি যে এক সুভদ্র নেতা, শুভ চিন্তার প্রতীক এবং ভাল মানুষকে হারাল, এই বিষয়ে সফির কাছের মানুষ বা প্রতিপক্ষ দল, কারওরই কোনও দ্বিমত নেই।

সিপিএমে থেকেই দলের চিন্তায় সংস্কার চেয়েছিলেন সফি। তিনিই সম্ভবত সাম্প্রতিক কালে একমাত্র নেতা, যাঁর সঙ্গে সিপিএমের ‘সম্মানজনক বিচ্ছেদ’ হয়েছিল। ২০০০-এ সিপিএম ছাড়ার পরে ঘনিষ্ঠ বন্ধু এবং আর এক সিপিএম নেতা সমীর পূততুণ্ডকে নিয়ে গড়ে তুলেছিলেন নতুন দল পিডিএস। সেই থেকে এই ৬২ বছর বয়সে মৃত্যু পর্যন্ত সফিই ছিলেন পিডিএসের রাজ্য সভাপতি। শুরু করেছিলেন সিপিএমে ছাত্র রাজনীতি দিয়ে। সুবক্তা সফিকে ১৯৮০-এ কাটোয়া থেকে লোকসভার টিকিট দিয়ে তরুণ বয়সেই সংসদে পাঠিয়েছিল সিপিএম। সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটিরও সদস্য হয়েছিলেন। দল ছেড়েও সিপিএমের নেতাদের সঙ্গে তাঁর ব্যক্তিগত সম্পর্কে আঁচ পড়েনি। দু’দিন আগেই হাসপাতালে তাঁকে দেখে আসেন সিপিএমের রাজ্যসভার প্রাক্তন সাংসদ মইনুল হাসান। সফির অকালমৃত্যুতে সিপিএম শিবিরে শোক নেমেছে। ব্যক্তিগত ভাবেও মর্মাহত হয়েছেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। শোকপ্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। মুখ্যমন্ত্রীর মতে, অত্যন্ত ভদ্র ও নরম স্বভাবের ছিলেন সফি।

Advertisement

চিরাচরিত কমিউনিস্ট পরিচিতি ছাপিয়ে প্রগতিশীল মানবতাবাদী বলতে যা বোঝায়, সফি ছিলেন তা-ই। সারা জীবন মানবকল্যাণের স্বার্থে চিন্তা করে যাওয়া, বড় দলের ছাতা থেকে বেরিয়ে লোকবলহীন অবস্থাতেও সেই চিন্তার কথাই লিখে যাওয়া এমন রাজনীতিক খুব বেশি দেখা যায় না বলেই সফির মৃত্যুতে আরও বেশি মর্মাহত অনেকে। সিপিএম নেত্রী বৃন্দা কারাটও সেই কথাই বলেছেন।

শোক সামলে শেষ যাত্রার প্রস্তুতি নিচ্ছেন সফির নিকটজনেরা। পিডিএসের রাজ্য সম্পাদক সমীরবাবু জানিয়েছেন, আজ, সোমবার সফির দেহ আনা হবে কলকাতায়। পরের দিন কলকাতায় শেষ শ্রদ্ধা জানিয়ে মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে বর্ধমানের মেমারিতে তাঁর পৈতৃক বাড়িতে। অবস্থার অবনতির খবর পেয়ে সফির মা দিল্লিতেই ছিলেন। সেখানেই আছেন পিডিএস নেত্রী অনুরাধা দেব, প্রাক্তন সাংসদের স্ত্রী রুখসানা ও তাঁদের দুই ছেলেও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন