কোর্টে উঠতেই মামলা তুলে নিলেন ভারতী

শুনানির জন্য সোমবার কলকাতা হাইকোর্টে মামলাটি সবে উঠেছিল। সঙ্গে সঙ্গেই সেই মামলা প্রত্যাহার করে নিলেন পদত্যাগী আইপিএস অফিসার ভারতী ঘোষ এবং তাঁর স্বামী এমএভি রাজু।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০৩:২০
Share:

শুনানির জন্য সোমবার কলকাতা হাইকোর্টে মামলাটি সবে উঠেছিল। সঙ্গে সঙ্গেই সেই মামলা প্রত্যাহার করে নিলেন পদত্যাগী আইপিএস অফিসার ভারতী ঘোষ এবং তাঁর স্বামী এমএভি রাজু।

Advertisement

এ দিনই বাতিল টাকায় সোনা লেনদেন নিয়ে দাসপুরের কয়েক জন সোনা ব্যবসায়ীকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে সিআইডি। অভিযুক্ত ব্যবসায়ীদের খোঁজ পেতে ভিন্ রাজ্যে যেতে পারে তারা। সিআইডি-র এক আধিকারিক বলেন, “ব্যবসা সূত্রে বহু ব্যবসায়ী ভিন্‌ রাজ্যে চলে গিয়েছেন। তাঁদের নাম-ঠিকানা জানা গিয়েছে। তাঁদের সন্ধানে অফিসারেরা শীঘ্রই সংশ্লিষ্ট রাজ্যগুলিতে যাবেন।” সাগরপুর, গোপীগঞ্জ, চাঁইপাট-সহ বিভিন্ন এলাকা থেকে পাঁচ-ছ’জন ব্যবসায়ীকে দফায় দফায় জেরা করা হয়েছে। বাতিল টাকা কী ভাবে আনা হয়েছিল, সেই টাকা কোন পদ্ধতিতে ব্যাঙ্কে জমা দেওয়া হয়, তার খুঁটিনাটি তথ্য জোগাড়ের চেষ্টা চলছে।

সোনা প্রতারণা কাণ্ডে ধৃত বিমল ঘোড়ই ও রাজমঙ্গল সিংহকে এ দিন ফের নিজেদের হেফাজতে নিয়েছে সিআইডি। ওই দু’জনকে ঘাটাল আদালতে তোলা হয়। দু’পক্ষের সওয়াল-জবাবের পরে ঘাটালের এসিজেএম লীনা গোলদার বিমলকে দু’দিন এবং রাজমঙ্গলকে চার দিন সিআইডি-র হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন। দু’জনের কাছ থেকে বেশ কিছু সোনার গয়না এবং নগদ টাকাও উদ্ধার করা হয়েছে বলে আদালতে জানিয়েছে সিআইডি।

Advertisement

সিআইডি সূত্রের খবর, ভারতীর চারটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ‘ফ্রিজ’ করে দেওয়া হয়েছে। তিনি এখন ওই সব অ্যাকাউন্টে কোনও রকম লেনদেন করতে পারবেন না। ভারতী ফোনে বলেন, ‘‘এর মধ্যে আমার ‘স্যালারি অ্যাকাউন্ট’-ও আছে। তাতে হাত পড়লে আমি আদালতে যাব।’’ ভারতী ঝাড়গ্রামের পুলিশ সুপার থাকাকালীন যে-সব সিভিক পুলিশ নিয়োগ করা হয়েছিল, তাঁদের নিয়োগ-প্রক্রিয়াও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ওই সময়ে জঙ্গলমহলে যে-সব মাওবাদী আত্মসমর্পণ করেন, যাচাই করা হচ্ছে তাঁদের ধরা দেওয়ার প্রক্রিয়াও। বাঁকুড়া জেলা পুলিশ জানায়, আত্মসমর্পণকারী কিছু মাওবাদীকে আজ, মঙ্গলবার নবান্নে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। পুরুলিয়া থেকে সোমবার কিছু আত্মসমর্পণকারী মাওবাদী বাঁকুড়া রওনা হন। বাঁকুড়া থেকে যাঁরা নবান্নে যাচ্ছেন, তাঁদের সঙ্গে থাকবেন ওই মাওবাদীরাও।

কিন্তু মামলা ঠুকেও ভারতী এবং তাঁর স্বামী তা তুলে নিলেন কেন?

তাঁদের বিরুদ্ধে সিআইডি-র তদন্ত উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে অভিযোগ তুলে ওই তদন্তকারী সংস্থার বিরুদ্ধে সিবিআই তদন্তের দাবি জানিয়ে ৫ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টের বিচারপতি দেবাংশু বসাকের আদালতে মামলা করেন ভারতী ও তাঁর স্বামী। এ দিন বিচারপতি বসাকের এজলাসে মামলাটি তালিকাভুক্ত হয়েছিল। শুনানির জন্য সেটি আদালতে উঠতেই ভারতীদের এক আইনজীবী জানান, তাঁর মক্কেলরা মামলা প্রত্যাহার করে নিতে চান। কী কারণে প্রত্যাহারের ইচ্ছা, তা জানতে চান বিচারপতি। ওই আইনজীবী জানান, মামলার আবেদনে আরও কিছু নথি জুড়তে চান তাঁর মক্কেলরা। এই মামলা প্রত্যাহার করে তাঁরা নতুন মামলা করতে চান। তাঁদের সেই সুযোগ দেওয়া হোক।

রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল (এজি) আদালতে জানান, তার জন্য মামলা প্রত্যাহারের প্রয়োজন নেই। আবেদনকারীরা অতিরিক্ত হলফনামা দিয়ে সেই সব নথি জুড়তে পারেন।

বিচারপতি এজি-কে বলেন, আবেদনকারীরা যখন এই মামলা প্রত্যাহার করে নতুন মামলা দায়ের করার ইচ্ছা প্রকাশ করছেন, তখন তাঁদের সেই সুযোগ দেওয়া হোক।

প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী সোমবার বহরমপুরে বলেন, ‘‘কেচো খুঁড়তে সাপ বেরিয়ে যাবে। তাই মুখ্যমন্ত্রী আগেভাগে তাঁর স্নেহের ভারতীর বিরুদ্ধে এমন ওয়ারেন্ট বার করেছেন, যাতে তিনি আদালতে হাজির হতে না-পারেন। অর্থাৎ বিচারের আগেই মুখ্যমন্ত্রী তাঁর ফাঁসির ব্যবস্থা করে দিয়েছেন।” তাঁর অভিযোগ, মুখ্যমন্ত্রী এবং তাঁর দল ভারতীকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করেছেন। কিন্তু কাজ শেষ হতেই তাঁকে ছুড়ে ফেলে দিয়েছেন। বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ জানান, ভারতী বিজেপি-তে যোগদানের জন্য রীতি মেনে আবেদন করলে দলীয় নেতৃত্ব তা বিবেচনা করবেন। ‘‘ভারতী মুখ্যমন্ত্রীকে মা বলে ডেকেছিলেন। এখন সৎমায়ের ব্যবহার পাচ্ছেন। যে-সব আইপিএস, আইএএস অফিসার এখনও মুখ্যমন্ত্রীকে মা বলতে ইচ্ছুক, তাঁরা এখান থেকে শিক্ষা নিন,’’ সতর্ক করে দেওয়ার সুরে বলেন দিলীপবাবু।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement