চালক দলবীর সিংহ। —নিজস্ব চিত্র।
মামলা মূলত স্ত্রীর নামেই। তাতে গ্রেফতারের আশঙ্কায় আগাম জামিন চেয়ে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন তিনি। বৃহস্পতিবার হাইকোর্ট অন্তর্বর্তী নির্দেশে জানিয়েছে, ১৫ মার্চ পর্যন্ত ভারতী ঘোষের স্বামী এমএভি রাজুকে গ্রেফতার করা যাবে না। অর্থাৎ আপাতত চার সপ্তাহ রেহাই। পশ্চিম মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রামের প্রাক্তন পুলিশ সুপার ভারতীর গাড়িচালককে এ দিনই আটক করেছে সিআইডি।
তদন্তকারীরা এ দিন জানান, ভারতী এবং তাঁর স্বামীর চারটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করা হয়েছে। ভারতীর দু’টি অ্যাকাউন্টের একটিতে রাষ্ট্রপুঞ্জ থেকে পাওয়া ৫০ হাজার মার্কিন ডলার রয়েছে। বেতনের টাকা জমা পড়েছে অন্য একটি অ্যাকাউন্টে। তবে সেই টাকা গত দেড় বছরে তোলা হয়নি। বরং আরও ১৬ লক্ষ টাকা জমা পড়েছে সেখানে। ভারতী অবশ্য এ দিন দাবি করেন, ‘‘আমার আয়কর রিটার্ন দেখলেই বোঝা যাবে, কোনও রকম গরমিল আছে কি না।’’
হাইকোর্টে এ দিন রাজুর আগাম জামিনের শুনানিতে বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী ও বিচারপতি ডিভিশন বেঞ্চ নির্দেশ দিয়েছে, দাসপুর থানায় দায়ের করা মামলার তদন্তে সিআইডি-র সঙ্গে ভারতীর স্বামীকে সব রকম সহযোগিতা করতে হবে। তদন্তকারীরা ডাকলেই দিতে হবে হাজিরা। পাসপোর্ট জমা রাখতে হবে তদন্তকারীদের কাছে। কলকাতার নেতাজিনগর থানা এলাকার বাইরে যেতে পারবেন না তিনি। সপ্তাহে এক দিন ওই থানার ওসি-র কাছে হাজিরা দিতে যেতে হবে রাজুকে।
রাজুর আইনজীবী ভাস্কর সেন ও রানা মুখোপাধ্যায় জানান, তাঁদের মক্কেলের নাম দাসপুর থানায় দায়ের হওয়া এফআইআরে নেই। তাতে নাম রয়েছে পুলিশ অফিসারদের। রাজু পুলিশ নন। আয়-বহির্ভূত সম্পত্তি নিয়ে যে-অভিযোগ উঠেছে, তার জবাব দেওয়ার জন্য তাঁকে সময় দেওয়া উচিত। সেই অভিযোগটাও তাঁর বিরুদ্ধে নয়, তাঁর স্ত্রী ভারতী ঘোষের বিরুদ্ধে।
রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্ত ও পাবলিক প্রসিকিউটর শাশ্বতগোপাল মুখোপাধ্যায় পাল্টা জানান, নোটবন্দির সময়ে ভারতী ঘোষ এবং তাঁর অধস্তন পুলিশ অফিসারেরা সোনা কিনে প্রচুর নোট বদল করেছেন বলেও অভিযোগ তুলেছেন তদন্তকারীরা। কলকাতার তাঁদের দু’টি ফ্ল্যাটে তল্লাশি চালিয়ে নগদ প্রায় আড়াই কোটি টাকা, প্রচুর সোনা এবং জমি বিক্রির চুক্তিপত্র আটক করা হয়েছে। সবে শুরু হয়েছে তদন্ত। তাই ভারতীর স্বামীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন।
কলকাতায় যখন রাজুর আগাম জামিনের মামলার শুনানি চলছে, সেই সময়েই দক্ষিণ ২৪ পরগনার বাসন্তী-ভরতগড় এলাকা থেকে ভারতীর গাড়ির চালককে আটক করে সিআইডি। ওই গাড়িচালকের নাম দলবীর সিংহ। বারুইপুর জেলা পুলিশের এক কর্তা জানান, দলবীর সপ্তাহখানেক আগে বাসন্তী থানা এলাকায় এক আত্মীয়ের বাড়িতে উঠেছিলেন। এ দিন দুপুরে বাসন্তী থানার পুলিশ তাঁকে আটক করে রাতে সিআইডি-র হাতে তুলে দেয়। পশ্চিম মেদিনীপুরের দাসপুর ও খড়্গপুর লোকাল থানার মামলা সংক্রান্ত কয়েকটি বিষয়ে দলবীরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে বলে জানান সিআইডি-র এক কর্তা।