পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বাড়ি ফেরার খবরেও নিস্তব্ধতা কাটেনি বাসভবন বিজয়কেতনের। —নিজস্ব চিত্র।
অবশেষে মুক্তি পাবেন রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। সোমবার জেলে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পৌঁছোয়নি। ফলে নিয়োগ দুর্নীতিতে অভিযুক্ত, বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন জেলবন্দি পার্থের মুক্তি হয়নি। কিন্তু মঙ্গলবার দুপুরে যে তিনি ছাড়া পাচ্ছেন, তা এক প্রকার জেনেই গিয়েছেন বেহালা পশ্চিম বিধানসভায় তাঁর অনুগামীরা। পার্থ মুক্তি পাবেন জেনেও কিন্তু অদ্ভুত ভাবে ‘ঘুমিয়ে আছে’ তাঁর পাড়া।
এ বিষয়ে নাকতলার খানপুর রোডে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে কোনও আগ্রহ লক্ষ করা গেল না। পাড়ার যুবক-যুবতীরা তো বটেই, মধ্যবয়স্কেরাও কিছুতেই কথা বলতে চাইছেন না পার্থ-প্রসঙ্গে। নিয়োগ মামলায় ২০২২ সালের ২৩ জুলাই কলকাতার নাকতলার এই বাড়ি বিজয়কেতন থেকেই পার্থকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। সোমবার সন্ধ্যায় দেখা গেল, তাঁর বাড়ির গলিতে কেউই আর আগ্রহী নয় এ বিষয়ে কোনও আলোচনা করতে।
পার্থের পিতা বিজয় চট্টোপাধ্যায়ের নামানুসারে রাখা হয়েছে নাকতলার বাসভবন বিজয়কেতনের নাম। নিজস্ব ছবি।
পাড়ার স্টলে ফুচকা খাচ্ছিলেন অশনি বায়েন। তাঁর বক্তব্য, ‘‘দেখুন কে জেল থেকে ছাড়া পাচ্ছে জানি না। জানতেও চাই না।’’ গত কয়েক বছরে পার্থের বাড়ি ‘বিজয়কেতন’কে অদ্ভুত নিস্তব্ধতা গ্রাস করে রেখেছে যেন। বাড়ির উল্টো দিকে এখনও জ্বলজ্বল করছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং পার্থের ছবি সংবলিত স্থায়ী শেড। অনেকের বসার জায়গা থাকলেও সোমবার সন্ধ্যায় সেখানে বসে মাত্র দু’জন। তাঁদের এক জন পুলিশকর্মী সুরেন্দ্রনাথ টুডু। তিনিই জানালেন, তাঁর সঙ্গে আরও দু’-এক জন পাহারায় থাকেন। তবে আজ তাঁরা নেই। পার্থ মন্ত্রী হওয়ার পর থেকেই ওই পুলিশকর্মী নাকতলার বাড়িতে ডিউটি দেন। দেখেছেন, চরম ব্যস্ত পার্থের জন্য অপেক্ষারত মানুষের লম্বা লাইন। গত তিন বছরে সেই ভিড় যেন উবে গিয়েছে কপূর্রের মতো। ওই পুলিশকর্মীও জেনেছেন, মঙ্গলবার ইএম বাইপাসের হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরবেন পার্থ। কিন্তু সেই খবরেও পার্থের বাড়ির নিস্তব্ধতা কাটেনি!
পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বাড়ির সদর দরজা খোলার অপেক্ষায়। নিজস্ব ছবি।
২০০৯ সালে পার্থের পাশের বাড়িতেই বিয়ে হয়ে এসেছিলেন অন্তরা মিত্র। পার্থের আসার খবর টিভি থেকে শুনেছেন তিনি। বহিষ্কৃত তৃণমূল নেতার মুক্তির খবর প্রসঙ্গে বললেন, “অনেক দিন পর পার্থবাবু বাড়ি ফিরে আসবেন শুনে ভালই লাগছে। কত কী দেখেছি এই বাড়ির সামনে। আবার এখন দেখি এই বাড়ির একাকিত্ব।” গত তিন বছরের বেশি সময় এই বাড়ির ধারে কাছে আসেননি শাসকদলের কোনও নেতা। দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে দল ছয় বছরের জন্য নিলম্বিত করায় এখন পার্থ দলের কাছে ‘অচ্ছুত’। কিন্তু তা সত্ত্বেও, নাকতলা তৃণমূলের একটি সূত্র জানাচ্ছে, বেহালা পশ্চিমের এক তৃণমূল কাউন্সিলর পার্থকে হাসপাতাল থেকে বাড়িতে ফিরিয়ে আনার জন্য ‘মহা আয়োজন’ করেছেন।
পার্থের হাত ধরেই কলকাতার দুর্গাপুজোয় নাম করেছিল নাকতলা উদয়ন সঙ্ঘ। সেই পুজো কমিটির অন্যতম কর্তা অঞ্জন দাশ বলেন, “কমিটির সঙ্গে আলোচনা করে আমরা ঠিক করব, পার্থবাবুর সঙ্গে দেখা করতে যাব কি না।” এ সব কথা শুনে পুলিশকর্মীর সুরেন্দ্রনাথের সঙ্গে বসা প্রৌঢ় রাজেশ রায় দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলছেন, “সময় অনেক কিছুই দেখাল আমাদের। এক সময় পার্থ কারও সঙ্গে দেখা করার সময় পেত না। আজ তাঁদের অনেকেরই পার্থের সঙ্গে দেখা করার সময় নেই। কিন্তু পার্থের যা গিয়েছে, তা আর ফিরে আসার নয়।”