ছাত্র সংসদই নেই, দাদাদের দাপট অটুট

ছাত্র সংসদের দখলকে কেন্দ্র করে বিরোধীদের সঙ্গে, কোথাও নিজেদের মধ্যে গোষ্ঠী-সংঘর্ষে বারবার নাম জড়িয়েছে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ বা টিএমসিপি-র। সরাসরি হস্তক্ষেপ করেও খাস কলকাতায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেননি শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়।

Advertisement

নীলোৎপল বিশ্বাস ও সুপ্রিয় তরফদার

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ জুলাই ২০১৮ ০৫:৩৯
Share:

তাঁদের নির্বাচিত ছাত্র সংসদের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গিয়েছে দীর্ঘদিন আগে। নতুন নির্বাচিত ছাত্র সংসদ বা অরাজনৈতিক ছাত্র কাউন্সিল, কোনওটাই গড়া হয়নি। অথচ কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে বিগত সংসদের ছাত্রনেতাদের রাজনীতি অব্যাহত!

Advertisement

শিক্ষা শিবিরের একাংশ বলছেন, অরাজনৈতিক ছাত্র কাউন্সিলের নির্দেশিকা জারি করেও সরকার তা বাস্তবায়িত করতে পারেনি। সেই সুযোগেই ক্যাম্পাসের পাশাপাশি কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালন সমিতিতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন ওই ‘ছাত্র দাদারা’। শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীদের সঙ্গে সরাসরি পরিচালন সমিতির বৈঠকেও যোগ দিচ্ছেন তাঁরা। তাঁদের ‘সুচিন্তিত মতামত’ ছাড়া কোনও সিদ্ধান্তই নেওয়া যাচ্ছে না।

ছাত্র সংসদের দখলকে কেন্দ্র করে বিরোধীদের সঙ্গে, কোথাও নিজেদের মধ্যে গোষ্ঠী-সংঘর্ষে বারবার নাম জড়িয়েছে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ বা টিএমসিপি-র। সরাসরি হস্তক্ষেপ করেও খাস কলকাতায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেননি শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। শিক্ষাজগতের ধারণা, এই প্রেক্ষিতেই ২০১৭ সালের ২২ মার্চ উচ্চশিক্ষা বিল পাশ হয় বিধানসভায়। সেই সময়েই অরাজনৈতিক ছাত্র কাউন্সিল তৈরির ইঙ্গিত দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার পরেই সেন্ট জেভিয়ার্স ও লেডি ব্রেবোর্ন কলেজের সঙ্গে বৈঠক করেন উচ্চশিক্ষা দফতরের প্রতিনিধিরা। কয়েক দিনের মধ্যেই ছাত্র কাউন্সিল গঠন সংক্রান্ত নির্দেশিকাও জারি করা হয়।

Advertisement

কথা ছিল, রাজ্য সরকারের পরামর্শে দু’বছর অন্তর ভোট হবে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে। ভোটে রাজনৈতিক দলের ব্যানার-ফেস্টুন ব্যবহার করা যাবে না। পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ ছাত্রছাত্রীরা ভোটে লড়তে পারবেন না। প্রার্থীর ক্লাসে ৬০ শতাংশ হাজিরা বাধ্যতামূলক। বলা হয়, কাউন্সিলের সভাপতি হবেন এক জন শিক্ষক। কোষাধ্যক্ষের পদেও থাকবেন কোনও শিক্ষকই। তবে সাধারণ সম্পাদক হবেন এক জন পড়ুয়া। সকলেরই মেয়াদ দু’বছর।

তার পরে কিন্তু ছাত্র কাউন্সিল আর আলোর মুখ দেখেনি। শুরু হয়নি ওই কাউন্সিল গঠনের প্রক্রিয়াও। শেষ ছাত্র নির্বাচন হয় ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে। তার পর থেকে কোনও নির্বাচন হয়নি, গড়ান হয়নি ছাত্র কাউন্সিলও। কাউন্সিলহীন কলেজে কী ভাবে ছাত্র-রাজনীতি চলবে, তা নিয়ে সম্প্রতি জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। পার্থবাবু জানিয়ে দেন, যে-সব কলেজে ছাত্র সংসদের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গিয়েছে, সেখানে বর্তমান ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে ছাত্র সংসদের কাজ চালাবেন শিক্ষক-শিক্ষিকারাই।

এসএফআইয়ের রাজ্য সভাপতি প্রতীক-উর-রহমান জানান, নিয়ম অনুযায়ী মেয়াদ-উত্তীর্ণ ছাত্র সংসদের সদস্যেরা কোনও ভাবেই পরিচালন সমিতিতে থাকতে পারেন না। ২০১৭ সালে নির্বাচনের পরে এক বছর পেরিয়ে যাওয়ায় ছাত্র সংসদগুলি মেয়াদ শেষ। অথচ গোটা রাজ্যে
সেই সব বিগত ছাত্র সংসদের
নেতারা পরিচালন সমিতিতে রয়ে গিয়েছেন আর ব্যাপক ‘তোলাশ্রী’ চলছে বলে প্রতীকের অভিযোগ। যদিও টিএমসিপি সূত্রে জানানো হয়েছে, কাউন্সিল গঠন বা নির্বাচনের আগে পর্যন্ত পুরনো সংসদের সদস্যেরাই পড়ুয়াদের প্রতিনিধিত্ব করেন।

আর এই নিয়মের ফাঁকেই কর্তৃত্ব কায়েমের রাস্তা পরিষ্কার হচ্ছে বলে মনে করছে বিরোধী শিবির। এসএফআই বলছে, অরাজনৈতিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে শাসক দলের আধিপত্য কায়েমের রাস্তাই পরিষ্কার হচ্ছে। সেই জন্যই কাউন্সিলের বিরোধিতা করে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যাপক আন্দোলন হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন