CPM

স্মারকলিপির সরণি ছেড়ে আন্দোলন সড়কে সিপিএম? দু’বছরে চার নেতানেত্রীর জেলে যাওয়ায় আশায় দল

বিরোধী পরিসরে যাওয়ার পর অনেক জেলায় নানা মামলায় স্থানীয় বা জেলাস্তরের সিপিএম নেতারা জেল খেটেছেন। বিভিন্ন আলোচনায় দলের অনেকে এটাও বলতেন, উপরের স্তরের নেতারা কেন আরামে রয়েছেন?

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১২:২৫
Share:

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

গত ২০১১ সাল থেকে সিপিএম বাংলায় বিরোধী পরিসরে। ক্ষয়িষ্ণু হতে হতে ক্রমে বিধানসভায় শুধু প্রধান বিরোধীদলের মর্যাদাই হারানো নয়, শূন্যে পরিণত হয়েছে ৩৪ বছর বাংলা শাসন করা দল। ক্ষমতা থেকে যাওয়ার পর সিপিএমের মধ্যে এই আলোচনা ছিল যে, সরকার থেকে চলে গেলেও সরকারি মানসিকতা পরিত্যাগ করা যাচ্ছে না। আন্দোলনের বদলে ঔপচারিক স্মারকলিপি দিয়েই ক্ষান্ত থাকছে দল। কিন্তু গত দু’বছরে আন্দোলন করতে গিয়ে রাজ্য কমিটির চার নেতানেত্রীর জেলে যাওয়া আশার সঞ্চার ঘটাচ্ছে দলে। যদিও সিপিএম নেতাদের অনেকেই ঘরোয়া আলোচনায় মেনে নিচ্ছেন, তা বলে এখনই ভোট বাক্সে এর প্রতিফলনের স্বপ্ন দেখা ঠিক হবে না।

Advertisement

হাওড়ার ছাত্র নেতা আনিস খানের মৃত্যুর তদন্তের দাবিতে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে পাঁচলার মিছিল থেকে ধুন্ধুমারকাণ্ড বাধিয়েছিলেন বাম ছাত্র-যুবরা। সেই আন্দোলন থেকে গ্রেফতার হয়ে জেলে গিয়েছিলেন যুবনেত্রী মিনাক্ষী মুখোপাধ্যায়। মিনাক্ষী তখন ছিলেন সিপিএম রাজ্য কমিটির আমন্ত্রিত সদস্য। ২০২২ সালের মার্চে রাজ্য কমিটিতে স্থায়ী সদস্য হন তিনি। সে বার মিনাক্ষী জেলে ছিলেন প্রায় তিন সপ্তাহ।

ওই বছরই সেপ্টেম্বরে বর্ধমানের আন্দোলন থেকে গ্রেফতার হয়ে প্রায় দু’সপ্তাহ জেল খেটেছিলেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলী তথা কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আভাস রায়চৌধুরী। যে আভাসকে সিপিএমে মিনাক্ষীর ‘আবিষ্কর্তা’ বলা হয়। বর্ধমান শহরে সিপিএমের আইন অমান্য আন্দোলন ঘিরে তুলকালাম কাণ্ড বেধেছিল। দু’টি সমাবেশের জমায়েত এগিয়ে যায় কার্জন গেটের দিকে। উদ্দেশ্য ছিল জেলাশাসকের দফতর ঘেরাও করা। তা আন্দাজ করে কার্জন গেটের আগে ত্রিস্তরীয় ব্যারিকেড গড়েছিল পুলিশ। কিন্তু তা চুরমার করে দেন আভাসেরা। একাধিক ভিডিয়ো ফুটেজে মোটামুটি দু’ধরনের ছবি ধরা পড়েছিল সে দিন। কোনওটায় আন্দোলনকারীদের রাস্তায় ফেলে পেটাচ্ছে পুলিশ। কোনওটায় পুলিশকে রাস্তায় ফেলে এলোপাথাড়ি মারছেন সিপিএমের লোকজন।

Advertisement

২০২৩ সালে পঞ্চায়েত নির্বাচনের পরে জলপাইগুড়িতে সিপিএম জেলা দফতর ঘেরাও করেছিল তৃণমূল ছাত্র পরিষদ। সিপিএমও পাল্টা জমায়েত নিয়ে সংঘাতে যায় শাসকদলের ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে। অতঃপর সিপিএম রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য জিয়াউল আলম-সহ বেশ কয়েক জন বাম নেতাকে গ্রেফতার করা হয়। চার দিন জেলে থাকতে হয়েছিল তাঁদের।

সর্বশেষ ঘটনা সন্দেশখালির নিরাপদ সর্দার। প্রাক্তন বিধায়ক নিরাপদ সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্যও বটে। আপাতত তিনি পুলিশি হেফাজতে। গত রবিবার তাঁকে কলকাতার বাঁশদ্রোণীর ভাড়াবাড়ি থেকে প্রথমে আটক করা হয়। তার পরে গ্রেফতার। সোমবার তাঁকে তোলা হয়েছিল বসিরহাট আদালতে। বিচারক তাঁকে তিন দিনের পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন। এর আগে বিরোধী সিপিএমে রাজ্য কমিটির সদস্যদের মধ্যে মধুজা সেন রায় এবং সায়নদীপ মিত্র জেল খেটেছিলেন। তবে সিপিএমের অনেকের বক্তব্য যে, সেই আন্দোলনে নির্দিষ্ট পরিকল্পনা ছিল না। কিন্তু পাঁচলা থেকে বর্ধমান বা সন্দেশখালিতে নকশা করে যা করার করা হয়েছে।

বিরোধী পরিসরে যাওয়ার পর অনেক জেলায় নানা মামলায় স্থানীয় বা জেলা স্তরের সিপিএম নেতারা জেল খেটেছেন। বিভিন্ন আলোচনায় সিপিএমের অনেকে এমন প্রশ্নও তুলতেন যে, উপরের স্তরের নেতারা কেন আরামে রয়েছেন? তাঁরা জেলে যাচ্ছেন না কোন যাদুবলে? সিপিএম নিজেদের সাংগঠনিক দলিলেও লিখেছে, আদায়যোগ্য নাছোড়বান্দা আন্দোলনের অনেক সুযোগ দল হাতছাড়া করেছে। এ ব্যাপারে অনেকেই নেতৃত্বের পরিকল্পনাকে দায়ী করেন। সিপিএম রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম অবশ্য বলছেন, ‘‘পার্টিকে আন্দোলনে রাখা প্রতি দিনের সাংগঠনিক কাজ। সেই কাজ আমরা করে যাব।’’

মাঝে একটা সময়ে কলকাতা-কেন্দ্রিক সিপিএমের আন্দোলনগুলিতে কিছু ‘ফ্রেম’ তৈরি হত। তা মূলত প্রিজন ভ্যানে উঠে স্লোগান দেওয়া বা পুলিশকে কিঞ্চিৎ ধাক্কাধাক্কি করার। যা দেখে অনেক নেতা আবার বলতেন, এ সব ফেসবুকে ‘লাইক’ পাওয়ার আন্দোলন। যার কোনও অভিঘাত নেই। তবে এই দু’বছরে যে চার রাজ্য কমিটির নেতানেত্রী গ্রেফতার হয়েছেন, তার সবক’টিই জেলার বুকে আন্দোলন। যাকে আলিমুদ্দিন স্ট্রিট আপাতত ‘ইতিবাচক’ হিসাবেই দেখতে চাইছে। কিন্তু ব্রিগেডের ঠাসা জমায়েত হোক বা ‘জঙ্গি আন্দোলন’, সিপিএমের মধ্যে প্রশ্ন সেই একটাই— ভোট ফিরবে তো?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন