উধাও হবিবুর-ঘনিষ্ঠ ডালিম, বিপাকে ভাড়াটে চার পড়ুয়া

একটা বাড়ির মালিক এলাকাতেই রয়েছেন। কিন্তু, পুলিশ সেই বাড়িতে তালা মেরে দেওয়ায় বিপাকে পড়েছেন বাড়িটির ভাড়াটে ছাত্রেরা। অন্য বাড়িটি পুলিশ বন্ধ করেনি। খোদ মালিকই তালা ঝুলিয়ে সপরিবার উধাও হয়েছেন। আর তার জেরে ফ্যাসাদে পড়েছেন ওই বাড়ির ভাড়াটে, চার ইঞ্জিনিয়ারিং ছাত্র।

Advertisement

মহেন্দ্র জেনা

বোলপুর শেষ আপডেট: ১৬ অক্টোবর ২০১৪ ০৩:১৬
Share:

ডালিম শেখের বাড়িতে ভাড়া থাকতেন পড়ুয়ারা। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী।

একটা বাড়ির মালিক এলাকাতেই রয়েছেন। কিন্তু, পুলিশ সেই বাড়িতে তালা মেরে দেওয়ায় বিপাকে পড়েছেন বাড়িটির ভাড়াটে ছাত্রেরা।

Advertisement

অন্য বাড়িটি পুলিশ বন্ধ করেনি। খোদ মালিকই তালা ঝুলিয়ে সপরিবার উধাও হয়েছেন। আর তার জেরে ফ্যাসাদে পড়েছেন ওই বাড়ির ভাড়াটে, চার ইঞ্জিনিয়ারিং ছাত্র।

প্রথম বাড়িটি বর্ধমানের বাবুরবাগে। যা ভাড়া নিয়েছিল খাগড়াগড় বিস্ফোরণ-কাণ্ডে অন্যতম অভিযুক্ত কওসর। বাড়ির দোতলায় থাকত কওসর। নীচের তলায় চাকরির পরীক্ষা দিতে আসা কিছু যুবক। তদন্তের স্বার্থে পুলিশ সেই বাড়িতে তালা ঝুলিয়েছে। দ্বিতীয় বাড়িটি বোলপুরের মুলুক গ্রামের শান্তিপল্লিতে। বাড়ির মালিকের নাম ডালিম শেখ। যে আবার কওসরের সঙ্গী হবিবুর শেখের বিশেষ পরিচিত। হবিবুুর নিজেও শান্তিপল্লির বাসিন্দা। বিস্ফোরণের পর থেকেই কওসরের পাশাপাশি যার খোঁজ চালাচ্ছে এনআইএ।

Advertisement

ঈদের সময় থেকেই বাড়ি বন্ধ রেখে বেমালুম উধাও হয়ে গিয়েছে ডালিম শেখ। আর এতেই ঘোর বিপাকে পড়েছেন তাঁর বাড়ির ভাড়াটে, চার ইঞ্জিনিয়ারিং ছাত্র। মুলুক এলাকার একটি বেসরকারি পলিটেকনিক কলেজের ওই ছাত্রেরা ভাড়ার জন্য অগ্রিম দিয়েছিলেন ডালিমকে। তাঁরা ডালিমের বাড়িতে জিনিসপত্রও রেখে যান। কিন্তু, দুর্গাপুজো ও ঈদের ছুটির পর ভাড়া বাড়িতে ফিরে দেখেন, সদরে তালা। সপরিবার বেপাত্তা বাড়ির মালিক।

বুধবারও ডালিমের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, দরজায় তালা ঝুলছে। বাড়ির সব দরজা, জানলা বন্ধ। বাড়ির সামনে দাঁড়িয়েছিলেন কম্পিউটার সায়েন্স ও টেকনোলজির তৃতীয় বর্ষের ছাত্র সিকন্দর সেখ। সোমবারই মুরারইয়ের নিজের বাড়ি থেকে তিনি ফিরেছেন মুলুকে। বিরক্তির সঙ্গে বললেন, “চার জন থাকব বলে ২০ সেপ্টেম্বর কথা বলে গিয়েছি ডালিম শেখের সঙ্গে। বেড পিছু ৫০০ টাকা অগ্রিম এবং প্রতি মাসে মাথা পিছু ৪০০ টাকা ভাড়ার কথা হয়েছিল। সে টাকাও দিয়েছিলাম। এখন ফিরে দেখছি তালা বন্ধ বাড়ি।” আর এক ভাড়াটে সালাউদ্দিন শেখ বলেন, “কলেজের ইউনিফর্ম, বিছানা বালিশ, ড্রইং শিট-সহ সমস্ত কিছু ওই ভাড়া ঘরে আছে। কিন্তু কেউ ভিতরে ঢুকতে পারছি না। রোজই এসে ফিরে যেতে হচ্ছে।” তহিদুল ইসলামের কথায়, “কোথায় যে গেলেন ডালিম শেখ! পুলিশ এসেছিল, জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। বুঝতে পারছি না, কী করব! ভিতরে কলেজের পরিচয়পত্র আর জরুরি কাগজপত্র রয়েছে।”

স্থানীয় সূত্রে খবর, বছর ছয়েক আগে শান্তিপল্লিতে এসে থাকতে শুরু করে ডালিম। ডালিমের আচরণ যে ‘রহস্যজনক’, সে কথা জানিয়েছেন তাঁর প্রতিবেশীরা। পেশায় বাসনের ফেরিওয়ালা হলেও তাঁরা তাঁকে একাধিক ল্যাপটপ ব্যবহার করতে দেখেছেন। স্থানীয় সূত্রের খবর, খাগড়াগড় বিস্ফোরণ-কাণ্ডে অন্যতম অভিযুক্ত হবিবুরের সঙ্গে দহরম মহরম ছিল ডালিমের। হবিবুরের পরিবারের লোকেরাও জানিয়েছেন, দু’বছর আগে শান্তিপল্লির বাড়ি থেকে সে পালিয়ে যাওয়ার পরে বাড়ির সঙ্গে কোনও যোগাযোগ না রাখলেও, এই ডালিমের সঙ্গে তার নিয়মিত যোগাযোগ ছিল।

সেই ডালিম কেন উধাও, তা খতিয়ে দেখছেন গোয়েন্দারা। কিন্তু, কী ভাবে নিজেদের জিনিস ফেরত পাবেন, সেই চিন্তায় রাতের ঘুম উড়ে গিয়েছে সিকন্দর-তহিদুলদের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন