প্রতিবাদে সৌমেন বাউড়ির বন্ধুরাও

শনিবার বিকেলে পাত্রসায়রে রাজ্যের মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীর মিছিল শেষ হওয়ার পরেই কাঁকরডাঙা মোড় উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা 

পাত্রসায়র ও বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ২৫ জুন ২০১৯ ০২:০৩
Share:

বিক্ষোভ: কৃষ্ণনগর হাইস্কুলে গুলিবিদ্ধ ছাত্রের সহপাঠীরা। নিজস্ব চিত্র

স্কুলছাত্র সৌমেন বাউড়িকে গুলি করার প্রতিবাদে পুলিশের বিরুদ্ধে সরব হল তার সহপাঠীরা। পাত্রসায়রের কৃষ্ণনগর হাইস্কুলের পড়ুয়ারা সোমবার কালো ব্যাজ পরে, হাতে কালো পতাকা নিয়ে ক্লাস বয়কট করে স্কুলের বাইরে বিক্ষোভ দেখায়। তাদের প্রশ্ন— সৌমেনের কী দোষ ছিল, পুলিশকে তার জবাব দিতে হবে। এ দিনই বাঁকুড়া শহরে পুলিশ সুপারের অফিসের কাছেও পাত্রসায়রের ঘটনার সঙ্গে রাজ্যে রাজনৈতিক হিংসার প্রতিবাদে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে বিক্ষোভ দেখায় বিজেপি। সেখানে বিজেপির রাজ্য সাধারণ সম্পাদক রাজু বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ করেন, ‘‘এখন স্কুল ছাত্রের উপরেও গুলি চালাচ্ছে রাজ্যের পুলিশ! পাত্রসায়রের ঘটনার আমরা সিবিআই তদন্ত চাইছি।’’

Advertisement

শনিবার বিকেলে পাত্রসায়রে রাজ্যের মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীর মিছিল শেষ হওয়ার পরেই কাঁকরডাঙা মোড় উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। বিজেপির অভিযোগ, কিছু বাচ্চা ছেলে মন্ত্রীর সামনে ‘জয় শ্রীরাম’ বলে চিৎকার করেছিল। তারপরেই পুলিশ তমালকান্তি গুঁই নামে এক বিজেপি নেতাকে মারধর করে। তেতে ওঠে এলাকা। গুলি চলে। যদিও মন্ত্রী দাবি করেছিলেন, তাঁর সামনে কেউ জয় শ্রীরাম বলেননি। পুলিশের দাবি, জমায়েত সরাতে গেলে পুলিশকর্মীদের লক্ষ করে বোমাবাজি শুরু হয়। সেই সময় গুলি চলে। তবে পুলিশ গুলি চালায়নি। ওই জমায়েত থেকে গুলি চালানো হয়ে থাকতে পারে বলে সন্দেহ প্রকাশ করেছে পুলিশ।

এ দিন বাঁকুড়ায় বিক্ষোভে বিজেপির বাঁকুড়া সাংগঠনিক জেলা সভাপতি বিবেকানন্দ পাত্র অভিযোগ করেন, ‘‘পুলিশের পোশাক পরেই গুলি চালানো হচ্ছে বলে ভিডিয়ো ফুটেজ ছড়িয়েছে। তাহলে নন্দীগ্রামের মতো এখানেও পুলিশের পোশাকে কি বহিরাগতেরা গুলি চালাল? এটাও তদন্ত করে দেখা দরকার।’’

Advertisement

কারা সে দিন গুলি ছুড়েছিল, তা নিয়ে এ দিনও সুনির্দিষ্ট ভাবে কিছু জানাতে পারেনি পুলিশ। জেলা পুলিশ সুপার কোটেশ্বর রাও বলেন, “কাদের ছোড়া গুলিতে তিন জন জখম হয়েছেন, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।” সে দিনের ঘটনায় কয়েকজন পুলিশ জখম হওয়ার অভিযোগ হলেও আক্রান্ত বিজেপি কর্মীদের তরফে এ দিন পর্যন্ত থানায় এফআইআর করা হয়নি। বিজেপির বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি স্বপন ঘোষ বলেন, ‘‘গুলিবিদ্ধদের চিকিৎসা করানো নিয়ে তাঁদের পরিজনেরা ব্যস্ত। তাঁরা পরে থানায় অভিযোগ জানাবেন।’’

এ দিকে, বাঁকুড়া মেডিক্যালের সিসিইউ-তে ভর্তি থাকা সৌমেনের শারীরিক অবস্থার এ দিন কিছুটা উন্নতি হলেও আশঙ্কা রয়ে গিয়েছে বলে জানাচ্ছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কারণ গুলি পেট ফুঁড়ে যাওয়ায় তার খাদ্যনালী ও কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, সৌমেনকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। হাসপাতাল সুপার গৌতমনারায়ণ সরকার বলেন, “সৌমেনের শারীরিক অবস্থা নিয়ে চিন্তা কাটছে না। ওকে সুস্থ করতে সব রকম ভাবে চেষ্টা চালাচ্ছি আমরা।”

পরিবারের দাবি, অষ্টম শ্রেণির পড়ুয়া বছর চোদ্দোর সৌমেন সে দিন টিউশন থেকে ফিরছিল। তখনই পুলিশের গুলি তাকে ফুঁড়ে দেয়। সে কোনও গোলমালে যুক্ত ছিল না। ওই ঘটনার জন্য পুলিশকেই দুষছে তার সহপাঠীরাও। তাদের অভিযোগ, ‘‘সৌমেন কী দোষ করেছিল, যে পুলিশ তাকে গুলি করে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিল? কাল আমাদের আর কাউকে যে পুলিশ গুলি করবে না, সে নিশ্চয়তা কোথায়? পুলিশকে ওই কাজের জন্য ক্ষমা চাইতে হবে।’’ সকাল সাতটা থেকে সাড়ে দশটা পর্যন্ত তাদের অবস্থান বিক্ষোভ চলে।

স্কুলের প্রধান শিক্ষক অসিতকুমার ঘোষ বলেন, ‘‘আমরা ছাত্রছাত্রীদের বলি, তাদের দাবি প্রশাসনকে জানিয়েছি। তার পরেই ওরা অবস্থান তুলে নেয়।’’ পরে স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা আহত ছাত্রের বাড়িতে গিয়ে পরিজনদের সঙ্গে কথা বলেন। তবে, শনিবারের ওই ঘটনার পরে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন এলাকার অনেকে। এ দিন বিক্ষোভকারী পডু়য়াদের অনেককেই বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘ওই ঘটনার পরে স্কুলে যেতে, টিউশনে যেতে আমাদের ভয় করছে।’’ প্রধান শিক্ষকের গলাতেও সেই আকুতি— ‘‘আমরাও চাই এলাকায় শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় থাকুক।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন