ব্যবসায় না হোক, পুজোয় সফল সিদ্ধিদাতা

ব্যবসায় না হোক, গণেশের প্রভাব বাড়ছে বঙ্গসমাজে। সিদ্ধিদাতা গণেশ আগে পয়লা বৈশাখে আসতেন লক্ষ্মীর সঙ্গে, শারদোৎসবে দুর্গার পরিবারের সদস্য হয়ে। কিন্তু গত কয়েক বছরে ভাদ্র মাসের শুক্লা চতুর্থীতে গণেশ একাই হাজির হচ্ছেন ঘরে-ঘরে, পাড়ার মোড়ে।

Advertisement

কুন্তক চট্টোপাধ্যায় ও অরুণাক্ষ ভট্টাচার্য

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০০:২১
Share:

গণপতি বাপ্পার লাড্ডুভোগ। বৃহস্পতিবার। ছবি: সুদীপ ঘোষ।

ব্যবসায় না হোক, গণেশের প্রভাব বাড়ছে বঙ্গসমাজে।

Advertisement

সিদ্ধিদাতা গণেশ আগে পয়লা বৈশাখে আসতেন লক্ষ্মীর সঙ্গে, শারদোৎসবে দুর্গার পরিবারের সদস্য হয়ে। কিন্তু গত কয়েক বছরে ভাদ্র মাসের শুক্লা চতুর্থীতে গণেশ একাই হাজির হচ্ছেন ঘরে-ঘরে, পাড়ার মোড়ে। এমনই তার প্রভাব, শহরে অনেক প্রথম সারির ক্লাবও দুর্গার পাশাপাশি পার্বতীপুত্র লম্বোদরের আরাধনা শুরু করেছে।

লালবাজারের হিসেবও বলছে, এ বছর কলকাতা পুলিশ এলাকায় প্রায় ৫০০ সর্বজনীন গণেশপুজো হয়েছে। কালীঘাটে গত বছর ১৫টি সর্বজনীন গণেশপুজো হয়েছিল। এ বছর একলাফে ২০টি। সেই সঙ্গে প্রতি বারের মতোই মহারাষ্ট্র নিবাস হলে গণেশ উৎসবে যোগ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

Advertisement

উত্তর ২৪ পরগনার বারাসত থানায় গত বছর গণেশ পুজোর অনুমতির আবেদন জমা পড়েছিল মাত্র দু’টি। এ বার ১১টি। সংখ্যা বেড়েছে বিরাটি, দমদমেও। সঙ্গে শহর থেকে শহরতলির ঘরের পুজোতেও হাজির গণেশ।

চাপ বেড়েছে প্রতিমা শিল্পীদেরও। বিশ্বকর্মার সঙ্গে গণেশপুজো একসঙ্গে পড়ে যাওয়ায় চাপ আরও বেশি। কুমোরটুলির এক শিল্পী বলেন, ‘‘গণেশের চাহিদা সামাল দিতে হিমশিম অবস্থা। তবু ভাল, এ বছর দুর্গাপুজো অক্টোবরের মাঝামাঝি। পুরোপুরি দুর্গায় মন দিতে কিছুটা সময় পাওয়া যাবে।’’ তবে শিল্পীদের অনেকেই মানছেন, গণেশপুজো বাড়ায় আয়ও বেড়েছে।

বাঙালির সঙ্গে গণেশের সম্পর্ক একেবারেই ছিল না, তা নয়। হাতি এমনিতেই পছন্দের মুখ। শিল্পী রামানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায় অজস্র গণেশ এঁকেছেন। অভিনেতা বসন্ত চৌধুরীর সংগ্রহে নানা ধরনের গণেশমূর্তি ছিল। কিন্তু পাড়ার মোড়ে মোড়ে এমন পুজো আগে ছিল না। তা হলে শুরু হল কী করে?

কেউ বলছেন, হিন্দি সিনেমা আর সিরিয়ালের হাত ধরেই মুম্বইয়ের গণপতি প্রভাব বাড়াচ্ছেন এ রাজ্যে। কারও মতে, খাস কলকাতায় মারোয়াড়ি, গুজরাতির সংখ্যা বাড়ছে বলেই গণেশপুজোর চল বাড়ছে। কেউ আবার বলছেন, রাজ্যে পালাবদলের পরে সরকারি আনুগ্রহে মেলা-খেলা-উৎসবের আধিক্য ছোঁয়াচে রোগের মতো যেন পাড়ায়-পাড়ায় ছড়িয়ে পড়ছে। কারও মতে, এটা কিছুটা কর্মহীন অলস যুবকুলের বাড়তি একটি উৎসবের অক্সিজেন। অনেকেই আগ্রহ নিয়ে জুটে যাচ্ছেন পাড়ার গণেশপুজোয়। বারাসতের হৃদয়পুরে একটি পুজোর কর্তা দেবব্রত বিশ্বাস বলেন, ‘‘ব্যবসায় মন্দার কারণে আমরা কয়েক জন গণেশ পুজো শুরু করেছিলাম। এ বার আরও অনেকে যোগ দিয়েছেন।’’

সমাজতত্ত্ববিদ ও ইতিহাসবিদদের অনেকে অবশ্য গণেশের প্রভাব বৃদ্ধিতে বলিউড সংস্কৃতিকে ততটা গুরুত্ব দিতে নারাজ। তাঁরা বলছেন, দু’দশক আগেই গণেশের দুধ খাওয়ার ঘটনার পরে অনেকের বাড়িতে ছোট ছোট গণেশমূর্তি ঢুকে পড়ে। কিন্তু এই পুজোর প্রাদুর্ভাব তখন ছিল না। সমাজতত্ত্ববিদ আশিস নন্দীর মতে, ‘‘এখন সব উৎসবই সর্বভারতীয় ধাঁচে হচ্ছে। তাই গণেশ মহারাষ্ট্র বা পশ্চিম ভারতে আটকে না থেকে গোটা ভারতেই ছড়িয়ে পড়েছেন।’’ তিনি এ-ও বলছেন, দীপাবলীর আগে ধনতেরস কিংবা বিয়েতে পঞ্জাবি রীতির ‘সঙ্গীত’ও এই ধাঁচেরই প্রভাব।
আর ইতিহাসবিদ ও কলকাতার সেন্টার ফর স্টাডি়জ ইন সোশ্যাল সায়েন্সেস-এর অধিকর্তা তপতী গুহঠাকুরতা বলছেন, ‘‘এ রাজ্যে এখন পুজোয় দুর্গাপুজোই মডেল। তা অনুসরণ করেই গণেশ পুজো থেকে শিবরাত্রি, সবেতেই জাঁকজমক বাড়ছে।’’

মত যতই হোক, নিটফল পথে গণেশপুজোর বাড়বাড়ন্ত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন