—ফাইল চিত্র।
বিধানসভা উপনির্বাচনে পরাজয়ের পরপরই পাহাড়ে ফের উঠল পৃথক গোর্খাল্যান্ডের প্রসঙ্গ। সে কথা তুললেন দার্জিলিং কেন্দ্রে মোর্চার প্রার্থী বিনয় তামাং-ই। বিনয়কে তৃণমূল এই নির্বাচনে সমর্থন করেছিল।
নির্বাচনে হারের পরে তার কারণ পর্যালোচনায় রবিবার দার্জিলিংয়ে পাঁচ ঘন্টার ম্যারাথন বৈঠক করেন বিমলপন্থী মোর্চার কেন্দ্রীয় কমিটির নেতারা। সেই বৈঠক শেষে বিনয় বলেন, ‘‘বিজেপি তাদের ইস্তেহারে বলেছিল জিতলে পাহাড় সমস্যার রাজনৈতিক সমাধান করা হবে। সেই সমাধান মানে পৃথক গোর্খাল্যান্ড রাজ্য তৈরি করা। তাই প্রধানমন্ত্রীর কাছে অমি অনুরোধ করব পাঁচ বছরের মধ্যে পৃথক রাজ্য তৈরি করে কথা রাখুন।’’ যদিও বিনয়ের দাবির সঙ্গে একমত নন তাদের সহযোগি দল তৃণমূল কংগ্রেস। দলের পাহাড় কমিটির সভাপতি এলবি রাই বলেন, ‘‘বিনয় তামাং তাঁর ব্যক্তিগত মতামত বলতেই পারেন। আমরা তাঁর সঙ্গে সহমত নই। পৃথক রাজ্যের বিষয়ে আমাদের দলের আলাদা অবস্থান আছে।’’
এদিন দার্জিলিংয়ের জজ বাজারে দলীয় দফতরে বৈঠকে বসেছিল বিনয়ের দল। ছিলেন অনীত থাপা, কেশবরাজ পোখরেল, ছিরিং দাহাল সহ কেন্দ্রীয় কমিটির সব নেতারাই। কেন ভোটের ফল খারাপ হল তা নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হলেও সংবাদমাধ্যমে সেই বিষয়ে কিছু বলতে চাননি বিনয়। মোর্চা সূত্রের খবর, হারের কারণ জানিয়ে ব্লক ও মহকুমা কমিটিগুলিকে দুই সপ্তাহের মধ্যে কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে লিখিত রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে। গোর্খাল্যান্ডের দাবি তোলার পরেও বিনয় বলেন, ‘‘রাজনৈতিক সমাধান বলতে কি বোঝাচ্ছে তা স্পষ্ট করতে হবে বিজেপিকে। পাহাড়ের সাধারণ মানুষ গোর্খাল্যান্ডের কথা ভেবেই বিজেপিকে জিতিয়েছে। আমরাও সেই রায় মেনে নিয়েছি। তাই এবার রাজ্য করে মানুষের রায়কে মান্যতা দিক বিজেপি।’’ এতদিন সরাসরি এনআরসির বিরোধীতা করেছেন বিনয়। সূর পাল্টে আজ তিনি বলেন, ‘‘আমি এনআরসির বিরোধী নই।’’ যুক্তি দিয়ে বিনয় জানিয়েছেন, যেহেতু পাহাড়ের ৮৭ শতাংশের বেশি মানুষের কাছে জমির মালিকানা নেই তাই তাদের ‘বহিরাগত’ তকমা দিয়ে তাড়িয়ে দেওয়া হতে পারে। তাই তাঁর দাবি, কেন্দ্রীয় সরকারকে আগে দার্জিলিং পাহাড়ের প্রতিটি বাসিন্দাকে ‘মূল বাসিন্দা’ হিসাবে ঘোষণা করে তারপর এনআরসি লাগু করতে হবে। তা না হলে তাঁরা এনআরসির বিরোধীতা করবেন। ভোটে হারলেও নির্বাচনি ইস্তেহারে যে ৩১ টি সমস্যার কথা তুলে ধরেছিলেন সেগুলি পূরণে কাজ করবেন বলেই জানিয়েছেন বিনয়।
জিটিএর নির্বাচনে তাঁর আপত্তি নেই বলেও এদিন জানিয়ে দিয়েছেন বিনয়। গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে বার বার উত্তপ্ত হয়েছে পাহাড়। পৃথক রাজ্যের দাবি তুলে সুবাস ঘিসিংকে সরিয়ে পাহাড়ের ক্ষমতা দখল করেন বিমল গুরুং। ২০১৭ তে ১০৫ দিনের পাহাড় বনধের পর অবশ্য পরিস্থিতি খানিকটা বদল হয়।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পক্ষ নিয়ে পাহাড়ের সরকারি ক্ষমতার চেয়ারে বসেন বিনয়। পৃথক রাজ্যের দাবি থেকে সরে এসে পাহাড়ের উন্নয়ন এবং গোর্খাদের পরিচিতির কথাই তুলে ধরেন। লোকসভা ও বিধানসভার উপনির্বাচনেও প্রকাশ্যে কোন দলই সেভাবে গোর্খাল্যান্ডের কথা বলেননি। মুখ্যমন্ত্রীও স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিলেন কোনভাবেই বাংলা ভাগ হবে না। ফের বিনয়ের মুখে গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে তাই চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে পাহাড়ে। দার্জিলিংয়ের নবনির্বাচিত বিজেপি সাংসদ রাজু বিস্তা বলেন, ‘‘দলের ইস্তেহারে গোর্খাদের জাতিস্বত্ত্বা রক্ষার কথা, সমস্যা সমাধানের কথা বলা হয়েছে। দলের নীতি ও সিদ্ধান্ত মেনে সেইভাবেই কাজ হবে।’’