প্রতীকী ছবি।
তৃণমূলের ১৫৮ জনের নামের তালিকা নিয়ে দিল্লি গিয়েছেন বলে দাবি করলেন বিজেপির ঝাড়গ্রাম জেলা সভাপতি সুখময় শতপথী। বিজেপি সূত্রের দাবি, জঙ্গলমহলে তৃণমূলের উপর স্নায়ুর চাপ বাড়াতে ভোট করাতে অভিজ্ঞ এমন কিছু জনপ্রতিনিধিকে তৃণমূল থেকে নেওয়ার কথা চলছে।
ঝাড়গ্রাম জেলা বিজেপির দাবি, ভোটের ফল প্রকাশের পরে জেলা তৃণমূলের একাংশ বিজেপিতে যোগ দেওয়ার জন্য মুখিয়ে রয়েছেন। তবে এ ক্ষেত্রে কাজের লোকেদেরই দলে নিতে চায় বিজেপি। ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত ভোটে ঝাড়গ্রাম জেলার ৭৯টি পঞ্চায়েতের মধ্যে ২৬টির ক্ষমতা দখল করেছিল বিজেপি। ঝাড়গ্রাম জেলা পরিষদ তৃণমূলের দখলে। জেলার পঞ্চায়েত সমিতির মধ্যে দু’টির ক্ষমতায় বিজেপি। বাকি ছ’টির ক্ষমতায় রয়েছে তৃণমূল। লোকসভা ভোটের সাফল্যের পরে পঞ্চায়েত স্তরেও পরিবর্তনের আশা করছে গেরুয়া শিবির। পঞ্চায়েত আইন অনুযায়ী, নির্বাচিত প্রধানের বিরুদ্ধে প্রথম আড়াই বছর অনাস্থা আনা যায় না। আপাতত পঞ্চায়েত প্রধানদের নিজেদের দিকে টেনে পঞ্চায়েতগুলি দখল করতে চায় বিজেপি। বিজেপি সূত্রের দাবি, তালিকা প্রস্তুত হয়ে গিয়েছে। দলের জেলা সভাপতি দিল্লি গিয়ে রাজ্যের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে তালিকা তুলে দেবেন। উচ্চ নেতৃত্বের অনুমোদন মিললেই কাজ শুরু হবে। বিজেপির জেলা সাধারণ সম্পাদক অবনী ঘোষ বলেন, ‘‘তৃণমূল থেকে যোগ দেওয়ার জন্য লম্বা লাইন। আমরা কাজের লোকেদের দলে নেব যাঁরা ভোট করতে পারবেন।’’ জেলা সভাপতি সুখময় শতপথী মুচকি হেসে বলছেন, ‘‘অপেক্ষা করুন, আর মাস খানেকের মধ্যে জঙ্গলমহল প্রকৃত হাসি হাসবে।’’
গত পঞ্চায়েত ভোটে ঝাড়গ্রাম জেলায় বিজেপি ভাল ফল করার পরেই জেলায় গেরুয়া তৎপরতা অনেক বেড়েছে। জেলা তৃণমূলের একাংশ প্রকাশ্যেই বলছেন, দলের কিছু নেতার অন্তর্ঘাতের জন্যই ঝাড়গ্রামে হার হয়েছে। নিচুতলার তৃণমূল কর্মীদের দাবি, রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পরে স্বজনপোষণ ও দুর্নীতিতে জড়িয়ে গিয়েছে দলের একাংশ। পঞ্চায়েতে দুর্নীতি হয়েছে। উপযুক্ত কাজ না পেয়ে অনেকে ভিন রাজ্যে শ্রমিকের কাজ করছে। জেলা তৃণমূলের এক প্রবীণ নেতার ক্ষোভ, ‘‘শুধু বিজেপিকে দোষ দিয়ে লাভ নেই। জনপ্রতিনিধিদের দুর্নীতির বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেয়নি দল। প্রশাসন চুপ করে থেকেছে। অযোগ্য নেতৃত্বের জন্য একাধিক গোষ্ঠী তৈরি হয়েছে। সেই কারণেই অন্তর্ঘাত হয়েছে।’’ তাঁর দাবি, বহু মানুষ বীতশ্রদ্ধ হয়েই বিজেপিকে ভোট দিয়েছেন। পঞ্চায়েত ভোটের ফল দেখেও জেলা নেতারা শিক্ষা নেননি।
বিজেপি যখন ঘর ভাঙতে ব্যস্ত, তখন কিন্তু ঘর ধরে রাখার তৎপরতার অভাব চোখে পড়ছে জেলা তৃণমূলে। জেলা তৃণমূল নেতারা বলছেন, দলীয় কর্মীদের ভুল বুঝিয়ে, ভয় দেখিয়ে দলবদল করানো হচ্ছে। দলের ঝাড়গ্রাম জেলা সভাপতি বিরবাহা সরেন অবশ্য বলছেন, ‘‘আমরা দলীয় স্তরে সবাই একযোগে বিজেপির মোকাবিলা করার জন্য তৈরি।’’