অধীর চৌধুরীর কপালে গোলাপি আবির দিয়ে তিলক কেটে রেণুকা মার্ডি বলেন, ‘‘দাদা আপনাকে দিল্লিতে দেখতে চাই।’’
সাংসদ হিসাবে অধীর চৌধুরী কুড়ি বছর ধরে দিল্লিতে। তার পরও দিল্লিতে দেখতে চান? আঁচলে মুখ মুছে রেণুকা বলছেন, ‘‘দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দেখতে চাই রে ভাই, প্রধানমন্ত্রী।’’
২৯ এপ্রিল মর্গে নিজের ছেলে রজত মার্ডির (২০) দেহ রেখে এসে বহরমপুর শহর লাগোয়া মাজদিয়ার প্রৌঢ়া রেণুকা অধীরকে ভোট দিয়েছিলেন। শুক্রবার অধীর মাজদিয়ার সেই বাড়িতে গিয়ে মার্ডির পরিবারের সবার সঙ্গে দেখা করে এলেন।
রেণুকা বলেন, ‘‘তৃণমূল ঝড়ে মমতা বন্দ্যোপধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন। বিজেপি ঝড়ে সেই মমতা এখন কাহিল। আগামী দিনে দেখবেন কংগ্রেস ঝড়ে মোদীর অবস্থাও এমন হবে। তখন দাদা প্রধানমন্ত্রী হবেন।’’ তার পর, বেগুনবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সুপারভাইজার রেণুকা ছেলের ছবির দিকে তাকিয়ে আঁচলে চোখ মোছেন।
গত ২৯ এপিল ভোটের দিন ভোরে ট্রেনচালক স্বামী সদানন্দ বিভাগীয় প্রশিক্ষণ নিতে ধানবাদ গিয়েছিলেন। বড় ছেলে নরেন্দ্রনাথ কলকাতায় ইঞ্জিনিয়িরিং-এর ছাত্র। তাঁকে বাড়িতে নিয়ে আসার জন্য কলকাতায় গিয়েছিলেন ছোট ছেলে রঞ্জন। বাড়িতে ছিলেন রেণুকা ও তাঁর মেজো ছেলে রজত। রেণুকা গিয়েছিলেন ভোট দিতে, কিন্তু মন বড় অস্থির লাগায় বাড়ি ফিরে এসেছিলেন। আর ফিরেই দেখেন, সিলিং ফ্যান থেকে রজত ঝুলছে।
প্রতিবেশীদের সাহায্যে ছেলেকে নিয়ে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গিয়েছিলেন, ফল হয়নি। ততক্ষণে মারা গিয়েছে রজত। রেণুকা বলেন, ‘‘ময়নাতদন্ত হতে তখনও ঘণ্টা দুয়েক দেরি আছে। মর্গের দরজার সামনে কান্নাকাটি করা ছাড়া আমার আর কিছুই করার ছিল না। তাই ফের ভোট দিতে গেলাম।’’
ওই অবস্থায়? তিনি বলেন, ‘‘আমার একটা ভোটের জন্য যদি দাদা (অধীর চৌধুরী) হেরে যায়। রজতও বলত ভোট নষ্ট করা উচিৎ নয়। তাই গিয়েছিলাম।’’
খবর শুনে অধীর চৌধুরী ভোটের পর দিন রেণুকাদের বাড়ি গিয়েছিলেন। ভোটে জেতার পর দিন শুক্রবার ফের রেণুকাদের বাড়ি পা রাখলেন তিনি। রজতের ছবিতে ফুলের মালা ও ধূপ দিয়ে অধীর বলেন, ‘‘এমন কোনও ঘটনা পৃথিবীতে আর কোনও রাজনৈতিক ব্যক্তির জীবনে ঘটেছে কি না জানা নেই। আমার অদ্ভূত অনুভূতি হচ্ছে।’’