৩৫ বছর পার, ফিরলেন ঘাসিরাম

মা আছেন, তবে তাঁর বোধশক্তি কাজ করে না। কাছে টানার লোক বলতে ছোট ভাই, তাঁর পরিবার আর পাড়ার ‘কাকা-জেঠা’রা।

Advertisement

দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় 

ঝালদা শেষ আপডেট: ২২ জানুয়ারি ২০১৯ ০৩:০৫
Share:

বাড়িতে ঘাসিরাম। —নিজস্ব চিত্র।

বাবার উপরে অভিমানে-রাগে বাড়ি ছেড়েছিল কিশোর। রাগ গলে জল হতে কাটল পঁয়ত্রিশ বছর। কিন্তু বাড়ি ফিরতে গিয়ে সমস্যা। তিন যুগে বদলে গিয়েছে পুরুলিয়ার ঝালদা। কোথায় বাড়ি? শেষে পুলিশের হস্তক্ষেপে ঘরে ফিরে ঘাসিরাম মাহাতো দেখলেন, বাবা নেই। মা আছেন, তবে তাঁর বোধশক্তি কাজ করে না। কাছে টানার লোক বলতে ছোট ভাই, তাঁর পরিবার আর পাড়ার ‘কাকা-জেঠা’রা।

Advertisement

তুলিন-উপরপাড়ার বাসিন্দা ঘাসিরামের ভাই দীনেশচন্দ্র মাহাতো চাষ আর রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। তিনি জানাচ্ছেন, সম্ভবত ১৯৮৪ সালে নিরুদ্দেশ হন তাঁর থেকে ছ’বছরের বড় ‘দাদা’। বছর বিয়াল্লিশের দীনেশ বলেন, ‘‘মায়ের কাছে শুনেছিলাম, দুর্গাপুজোর সময় দাদা কিছু কেনার বায়না করেছিল। বাবা বকায় রাগে-অভিমানে বাড়ি থেকে পালায়। অনেক খুঁজেও ওকে পাওয়া যায়নি।’’

সে কথা এক রকম ভুলতে বসেছিলেন পরিজনেরা। চমক আসে শনিবার রাতে। পুলিশ দীনেশবাবুকে খবর দেয়, তাদের কাছে আটক একটি লোক বলছে, তার নাম ঘাসিরাম মাহাতো। বহু বছর আগে ঘর ছেড়েছিল। এখন ফিরতে চায়। এসপিডিও (ঝালদা) সুমন্ত কবিরাজ জানান, শনিবার সন্ধ্যায় ঝালদা স্টেশন লাগোয়া এলাকায় এক জনকে এ দিক-ও দিক ঘোরাঘুরি করতে দেখে আটকান পুলিশকর্মীরা। জিজ্ঞাসাবাদ করতেই, জানা যায় এই কাণ্ড। পরে তাঁরা খবর পান, দীনেশবাবুর দাদা প্রায় তিন যুগ ধরে নিরুদ্দেশ।

Advertisement

আরও পড়ুন: নির্লিপ্ত রেল, সহযাত্রী ডাক্তারই ত্রাতা

ঝালদা থানার পুলিশ ঘাসিরামের ছবি তুলে চিহ্নিত করতে তুলিন ফাঁড়িতে পাঠায়। কিন্তু চিনবে কে? ঘাসিরামের বাবা জ্যোতিলাল মাহাতো বছর দশেক আগে মারা গিয়েছেন। বিরানব্বই বছরের মা বাঁকুবালাদেবী শয্যাশায়ী। তাঁর স্মৃতি বা বোধশক্তি কাজ করে না। অগত্যা ছবি নিয়ে পাড়ার ‘কাকা-জেঠা’দের দেখান দীনেশ। পাড়ার প্রবীণ মথুর মাহাতো, নগেন মাহাতো, ঠাকুরদাস মাহাতোরা বলেন, ‘‘ও যে ঘাসিরাম, আমরা নিশ্চিত।’’ রবিবার পড়শিদের নিয়ে ঝালদা থানায় গিয়ে ‘দাদা’কে বাড়ি ফেরান ‘ভাই’।

আরও পড়ুন: প্রধান শিক্ষক নিয়োগে এ বার র‌্যাঙ্কই উধাও!

এত দিন কোথায় ছিলেন? হিন্দি মেশানো বাংলায় ঘাসিরাম সোমবার বলেন, ‘‘কখনও বিলাসপুর, কখনও রউরকেল্লা—যেখানে, যা কাজ পেয়েছি, করেছি। বিয়ে করিনি। পরিবার বলতে বাবা-মা-ভাইকেই জানতাম। কিন্তু রাগ-অভিমান-লজ্জায় এত দিন ফিরতে পারিনি।’’ জানান, গত কয়েকদিন ‘মন কেমন করা’ বেড়ে যাওয়ায় রউরকেল্লা থেকে রওনা হন বাড়ির উদ্দেশে। একটু থেমে যোগ করেন, ‘‘এলাকাটা এত বদলেছে। কিছুই চিনতে পারছিলাম না। ভাবছিলাম, ফিরে যেতে হবে।’’ ঘাসিরামের গলা জড়িয়ে দীনেশবাবুর ছেলে কানন আর মেয়ে শম্পা বলে, ‘‘যাও তো দেখি!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন