কন্যাশ্রীর টাকায় বাঁচার স্বপ্ন

বর্ধমান ২ ব্লকের জগৎপুর গ্রামের পারসিনা জানান, পায়ের তলায় মাটি খুঁজতে বাড়ির কাছে বাকলসা বাজারে ‘কন্যাশ্রী’ প্রকল্পের পঁচিশ হাজার টাকায় বিউটি পার্লার খোলেন তিনি। আড়াই মাস ধরে ওই রোজগারেই পড়াশোনা চলছে তাঁর।

Advertisement

সৌমেন দত্ত

বর্ধমান শেষ আপডেট: ১৯ জুলাই ২০১৭ ০৪:১২
Share:

সাফল্য: কন্যাশ্রীর পোস্টারে পারসিনা ও আল্পনা। —নিজস্ব চিত্র।

বাড়ি থেকে বলে দিয়েছিল, ‘আর পড়াতে পারব না। নিজের রোজগারে পড়তে হবে’। মাথায় বাজ পড়েছিল বর্ধমানের হাটগোবিন্দপুর কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী পারসিনা খাতুনের। দিশাহীন অবস্থায় তাঁকে পথ দেখায় কন্যাশ্রী প্রকল্পের অর্থসাহায্য।

Advertisement

বর্ধমান ২ ব্লকের জগৎপুর গ্রামের পারসিনা জানান, পায়ের তলায় মাটি খুঁজতে বাড়ির কাছে বাকলসা বাজারে ‘কন্যাশ্রী’ প্রকল্পের পঁচিশ হাজার টাকায় বিউটি পার্লার খোলেন তিনি। আড়াই মাস ধরে ওই রোজগারেই পড়াশোনা চলছে তাঁর।

এমন লড়াইকে স্বীকৃতি দিয়েছে পূর্ব বর্ধমান জেলা প্রশাসন। পারসিনাকে সামনে রেখে অন্য ‘কন্যাশ্রী’দের স্বনির্ভর হওয়ার সাহস জোগাতে চাইছেন কর্তারা। পারসিনার মতো দশ জনের ছবি ও লড়াইয়ের কাহিনি পোস্টারে প্রচারও করা হচ্ছে।

Advertisement

বর্ধমানের তেজগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের আল্পনা বিশ্বাসের কথাও ঠাঁই পেয়েছে পোস্টারে। দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রীর বাড়ি আউশগ্রামের ভেদিয়ায়। বাবা বাসুদেব ঘোষ খেতমজুর। পঞ্চম শ্রেণিতে উঠতেই আল্পনাকে পাঠানো হয়েছিল মামার বাড়ি, বর্ধমান লাগোয়া সদরঘাটে। পরে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার উদ্যোগে বৃত্তিমূলক শিক্ষা নিয়ে পুতুল বানানো ও পুতুল নাচ দেখানো শেখেন আল্পনা। ‘কন্যাশ্রী’র টাকা জমিয়ে পুতুল তৈরির সরঞ্জাম কেনেন। এখন তিনি ও তার তিন বন্ধু পাড়ার ক্লাবের হয়ে মেলায় ‘পাপেট শো’ করেন। আল্পনার প্রত্যয়, “কন্যাশ্রী প্রকল্পের দ্বিতীয় ধাপে ২৫ হাজার টাকা পেলে আরও অনেক পুতুল বানাব। তাতেই আমার পড়ার খরচ উঠবে।’’ আল্পনার মামা ও দাদু নির্মাণ-শ্রমিক। দিদিমা সরস্বতী মণ্ডলের কথায়, “মেয়েটা এ ভাবে এগোলে, বাবা-মায়ের মুখে নিশ্চয় হাসি ফুটবে।”

একই জেদ পারসিনার। পার্লার খোলায় পড়শি, আত্মীয়দের অনেকেই কটূক্তি করেছিলেন। পাত্তা দেননি বছর কুড়ির তরুণী। তাঁর কথায়, “চুরি-ডাকাতি করছি না। কাজ শিখে পার্লার খুলেছি। যারা কটূক্তি করছে, তারাই এক দিন গর্ব করবে।” পারসিনার মা সামসুরন্নেসা বিবি বলেন, “টাকার অভাবে মেয়েকে পড়া ছেড়ে দিতে বলেছিলাম। ও দেখিয়েছে, ওর পড়তে চাওয়ার ইচ্ছেটাই ঠিক ছিল।”

পূর্ব বর্ধমানের এ রকম দশ জন ‘কন্যাশ্রী’র দশ হাজার পোস্টার বানিয়েছে প্রশাসন। তা ছড়িয়ে দেওয়া হবে। কন্যাশ্রী প্রকল্পের আধিকারিক শারদ্বতী চৌধুরী বলেন, “লক্ষ্য ঠিক থাকলে সবাই পারবে—এই বার্তা দিয়ে মেয়েদের উৎসাহ দিতে চাই।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন