হাই মাদ্রাসার ফলে দুই জেলায় এগিয়ে মেয়েরাই

চেঙ্গাইল হাই মাদ্রাসার নাইমা খাতুন, উলুবেড়িয়া হাই মাদ্রাসার শাবানা পারভিন, রঙমহল হাইমাদ্রাসার তাজকিনা মিনহা, জামবেড়িয়া সিদ্দিকিয়া সাধারণের হাইমাদ্রাসার সাবেরা খাতুন, নিমদিঘি হাইমাদ্রাসার আনোয়ারা খাতুন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

হাওড়া ও হুগলি শেষ আপডেট: ১৭ মে ২০১৭ ০৩:৩৭
Share:

সেরা: রাজ্যে ফাজিল পরীক্ষায় তৃতীয় মিজারুল ও মাদ্রাসার পরীক্ষায় রাজ্যে অষ্টম প্রশমা শাসমল। —নিজস্ব চিত্র।

চেঙ্গাইল হাই মাদ্রাসার নাইমা খাতুন, উলুবেড়িয়া হাই মাদ্রাসার শাবানা পারভিন, রঙমহল হাইমাদ্রাসার তাজকিনা মিনহা, জামবেড়িয়া সিদ্দিকিয়া সাধারণের হাইমাদ্রাসার সাবেরা খাতুন, নিমদিঘি হাইমাদ্রাসার আনোয়ারা খাতুন। আলাদা আলাদা মাদ্রাসায় পড়াশোনা করলেও এক জায়গায় এদের মিল এক জায়গাতেই।

Advertisement

সেটা হল চলতি বছরের মাদ্রাসা বোর্ডের দশম পরীক্ষায় নিজের নিজের মাদ্রাসায় এরা প্রত্যেকেই সেরা। হাওড়ার ২৫টি হাইমাদ্রাসা আছে। প্রায় প্রতিটি মাদ্রাসায় ছবিটা একই সেরার শিরোপাটি দখলে ছাত্রীদেরই।

তবে হাই মাদ্রাসার মাধ্যমিক পরীক্ষায় রাজ্যের ছাত্রীদের মধ্যে তৃতীয় স্থানাধিকারী ও সর্বোপরি রাজ্যের মধ্যে অষ্টম স্থান অর্জন করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে উদয়নারায়ণপুরের খলতপুর হাই মাদ্রাসার ছাত্রী প্রশমা শাসমল। তার প্রাপ্ত নম্বর ৭২৯। ভবিষ্যতে পদার্থ বিদ্যা নিয়ে গবেষণা করতে চায় প্রশমা। প্রশমার বাবা প্রশান্ত শাসমল বলেন, ‘‘আমার বাড়ি ়থেকে অনেকটা দূরে স্কুল আর কাছেই মাদ্রাসা। আর এই মাদ্রাসার পড়াশোনা খুব ভালো হয়। তাই এখানেই মেয়েকে ভর্তি করেছিলাম।’’ প্রশমার এই ফলে খুশি মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক নুুরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘‘প্রশমা বরাবরই পড়াশোনায় ভাল। ওই এই ভাল ফলে ওরই পরিশ্রমের স্বীকৃতি।’’

Advertisement

ফুরফুরার সিনিয়র মাদ্রাসার ছাত্র নুর আমিন সাহাজি চলতি বছরের ফাজিল পরীক্ষায় রাজ্যে দ্বিতীয় স্থান পেয়েছে। স্কুল সূত্রে জানানো হয়েছে তার প্রাপ্ত নম্বব ৫৪৬। ওই মাদ্রাসারই অন্য ছাত্র মিজারুল রহমান এ বার তৃতীয় হয়েছে। তার প্রাপ্ত নম্বর ৫৪০। এ বারের ফজল পরীক্ষায় ওই স্কুলেরই ছাত্র মুন্সি আবু যুবায়েক ৫২৯ নম্বর পেয়ে সপ্তম হয়েছেন। ডানকুনি সিদ্দিকিয়া হাই মাদ্রাসার ছাত্রী লোবাবা খাতুন ৫২৪ পেয়ে এবারে মাদ্রাসা পরীক্ষায় অষ্টম স্থান পেয়েছেন। লোবাবার ইচ্ছা আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষ করে আরবি ভাষায় লেখিকা হবে।

দু’জেলাতেই মেয়েদের ভাল ফলের প্রবণতা গত কয়েক বছর ধরেই দেখা যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন নিমদিঘি হাইমাদ্রাসার প্রধানশিক্ষক মাহাবুদুল আলি বেগ। তিনি বলেন, ‘‘আমার মাদ্রাসা থেকে এ বছর ১০২ জন পরীক্ষা দিয়েছিল। ৭০ শতাংশই ছাত্রী। তার মধ্যে থেকেই আনোয়ারা প্রথম স্থান অধিকার করেছে আমার মাদ্রাসায়। গত কয়েক বছর ধরেই এটা হচ্ছে।’’ একই কথা জানান উলুবেড়িয়া হাইমাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক তাইদুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘‘আমার মাদ্রাসায় ছাত্রীর সংখ্যা বেশি। প্রথম স্থান তাদের দখলেই যায়।’’

মাদ্রাসাগুলির প্রধান শিক্ষকেদের মতে, ‘‘খুব ভাল ছাত্রেরা চলে যায় সাধারণ হাইস্কুলে। যারা এখানে ভর্তি হয় পরে কাজে যুক্ত হয়ে পড়ায় স্কুল ছুট হয়ে পড়ে। কিন্তু মেয়েরা হাল ছাড়ে না। দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই করে তারা। ফলও পায় দশম শ্রেণীর পরীক্ষায়।’’

মাদ্রাসা বোর্ডের সিলেবাসের সঙ্গে মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সিলেবাসের খুব একটা ফারাক নেই। সেক্ষেত্রে মেয়েদের এই এগিয়ে চলাকে সংখ্যালঘু মুসলিম সমাজের পক্ষে ইতিবাচক বলেই মনে করেন মাহাবুদুল আলি বেগ বা তাইদুল ইসলামের মতো প্রধান শিক্ষকরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন