চোখরাঙানি উপেক্ষা করে, হিজাব ছেড়ে সাইকেলে সওয়ার তিন কন্যা

পা-চাপা লেগিন্স পরেছিল বলে বন্ধ করে রাখা হয়েছিল ঘরে। এখন ওরা হাফপ্যান্ট-ট্র্যাকশুটে লাফিয়ে ওঠে দু’চাকায়। শনশনিয়ে চাকা ছোটে গ্রাম থেকে শহর, জেলা ছাড়িয়ে কলকাতা, রাজ্য থেকে জাতীয় স্তরের চ্যাম্পিয়নশিপে।

Advertisement

সেবাব্রত মুখোপাধ্যায়

বেলডাঙা শেষ আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৩:৪২
Share:

ছকভাঙা: অনুশীলনের ফাঁকে। —নিজস্ব চিত্র।

হিজাব পরেনি বলে টেনে চড় কষিয়েছিলেন মা। এখন ওরা বাড়ি থেকে বেরোয় হিজাব পরেই, মাঠে পৌঁছে সে সব ছেড়ে ফেলে সওয়ার হয় সাইকেলে।

Advertisement

পা-চাপা লেগিন্স পরেছিল বলে বন্ধ করে রাখা হয়েছিল ঘরে। এখন ওরা হাফপ্যান্ট-ট্র্যাকশুটে লাফিয়ে ওঠে দু’চাকায়। শনশনিয়ে চাকা ছোটে গ্রাম থেকে শহর, জেলা ছাড়িয়ে কলকাতা, রাজ্য থেকে জাতীয় স্তরের চ্যাম্পিয়নশিপে।

সুরাইয়া সুলতানা, সুরজাহান খাতুন, সাদিয়া ফারহান। বাড়ি মুর্শিদাবাদের বেলডাঙায়। সেখানেই দেবকুন্ডু শেখ এআরএম গার্লস হাই মাদ্রাসায় ক্লাস নাইনে পড়ে সুরাইয়া আর সুরজাহান, সাদিয়া ক্লাস এইটে। ‘ন্যাশনাল মাউন্টেন বাইক চ্যাম্পিয়নশিপ’-এ যোগ দিতে আগামী ১৯ সেপ্টেম্বর হাওড়া থেকে পুণের ট্রেন ধরবে তিনকন্যা।

Advertisement

এই লাফটা যে কত কঠিন ছিল তা জানে কেবল ওই তিন মেয়ে, তাদের কোচ আর মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষিকা। তিন মেয়ের বাড়ি থেকেই বলে দিয়েছিল— ও সব ‘বেয়াদবি’ চলবে না। মেয়েরা হাফপ্যান্ট পরে সাইকেল চালাবে, ছেলেরা চেয়ে-চেয়ে দেখবে, বদনাম হবে না? তার পর বিয়ে হবে? এ সব শরিয়ত-বিরোধী কাজ বরদাস্ত করা হবে না মোটেই।

আরও পড়ুন: পাহাড়ের আস্থা অর্জনের চেষ্টা বিনয়ের

শুনে প্রধান শিক্ষিকা মুর্শিদা খাতুন সোজা গিয়ে হাজির হন মেয়েগুলোর বাড়ি। সঙ্গে স্থানীয় বিধায়ক, মাদ্রাসা পরিচালন কমিটির হর্তাকর্তারাও। তিন ছাত্রীর বাবা-মায়ের সামনে হাতজো়ড় করে বলেন, ‘‘মেয়েদের ছাড়ুন। বিয়েতে কোনও সমস্যা হবে না। বিধায়ক নিজে বাড়িতে এসে কথা দিচ্ছেন!’’ আমাদের ধর্মে কি এ সব চলে— গুনগুন করে দ্বিধা। মুর্শিদা সপাটে বলেন, ‘‘কেন, সানিয়া মির্জা খেলে না? আফগানিস্তানে মেয়েরা ফুটবল খেলছে না?’’

বাড়িতে যা-ও বা বরফ গলল, মেয়েরা প্র্যাকটিস করবে কোথায়? মাদ্রাসার বড় মাঠ নেই। মেয়েদের নিয়ে কোচ মিলনতারা খাতুন আর সহকারী কোচ ওয়াহিদা খাতুন যা-ও বা দু’কিলোমিটার দূরের মাঠে গেল, সেখানেও বাধা। সে মাঠের কর্তাদের দাবি, ‘‘মেয়েরা আসায় ছেলেদের শৃঙ্খলা নষ্ট হচ্ছে।’’ শেষমেশ ঠাঁই মিলল সিআরজিএস হাইস্কুলের মাঠে। তিন বাবাই গরিব। ১৬ হাজার টাকার সাইকেল দিল সরকার আর ন্যাশনাল সাইক্লিস্ট অ্যাসোসিয়েশন।

প্র্যাকটিস হল। অনেক বলে-কয়ে কলকাতায় সিলেকশনে যাওয়ার ছাড়পত্রও মিলল বাড়ি থেকে। কিন্তু গত রবিবার চূ়ড়ান্ত নির্বাচনের খবর আসতেই ফের বেঁকে বসে মেয়েদের বাড়ি। মরিয়া মিলনতারা গিয়ে হত্যে দিয়ে পড়েন ছাত্রীদের বাড়িতে। শেষে বাবা-মা নিমরাজি— ‘‘যেতে পারে, যদি মিলনতারা সব সময়ে ওদের সঙ্গে থাকেন।’’ তা-ই সই!

২২ থেকে ২৪ সেপ্টেম্বর— লড়াই তিন দিনের। ঘরের চৌকাঠ পেরিয়ে মাঠ দখলের ল়ড়াই। জান কবুল!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন