গাড়িতে সমর্থকের দেহ, খুকুরি নিয়ে গোর্খা নেতাদের হুঙ্কার সমতলেও

ময়নাতদন্তের পরে আশিসের দেহ মিরিকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে অন্তত ৩০টি গাড়িতে শতাধিক মোর্চার সমর্থকেরা শিলিগুড়ি যান। মর্গের সামনে প্ল্যাকার্ড নিয়ে মোর্চার নেতা জ্যোতিকুমার রাইয়ের নেতৃত্বে বিক্ষোভ দেখানো হয়।

Advertisement

প্রতিভা গিরি

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ১৯ জুলাই ২০১৭ ০৪:৩৬
Share:

সশস্ত্র: উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে মৃত সমর্থকের দেহ নিয়ে মিরিকে ফেরার পথে খুকুরি হাতে মোর্চা সমর্থকেরা। ছবি:বিশ্বরূপ বসাক।

মিরিকে সংঘর্ষে মৃত এক সমর্থকের দেহ নিয়ে গাড়ির মাথায়, জানলা দিয়ে খুকুরি উঁচিয়ে শিলিগুড়ি শহরের উপকণ্ঠে মাটিগাড়ায় ‘শোক-মিছিল’ করল গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা। অভিযোগ, খুকুরি উঁচিয়ে হুঙ্কার দিয়ে সামনে থাকা গাড়িগুলিকে সরতে বাধ্য করেছে তারা। মোর্চা সমর্থকদের এই ‘হুঙ্কারে’ ক্ষুব্ধ পথচারীরা এক সময়ে প্রতিবাদ করেন। তাঁদের সরব হতে দেখে দ্রুত দেহ নিয়ে মিরিকের দিকে রওনা দেন মোর্চার নেতা-সমর্থকেরা।

Advertisement

এই দফার গোলমাল শুরু হয় সোমবার রাত থেকে। ওই রাতে তৃণমূল সমর্থকদের বাড়িতে হামলা হয়। চেয়ারম্যান এল বি রাইয়ের ভাইকে খুকুরি দিয়ে কোপানো হয় বলে অভিযোগ। এই সংঘর্ষে এক আশিস তামাঙ্গ (৩৬) নামে এক মোর্চা সমর্থকের মৃত্যু হয় বলে মোর্চার দাবি। জখম হন আনন্দ তামাঙ্গ নামে আর এক সমর্থক। তাঁকে নেপালের বিরতা মোড়ের হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। আশিসের দেহ উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যাওয়া হয়।

ময়নাতদন্তের পরে আশিসের দেহ মিরিকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে অন্তত ৩০টি গাড়িতে শতাধিক মোর্চার সমর্থকেরা শিলিগুড়ি যান। মর্গের সামনে প্ল্যাকার্ড নিয়ে মোর্চার নেতা জ্যোতিকুমার রাইয়ের নেতৃত্বে বিক্ষোভ দেখানো হয়। অভিযোগ, তখনই খুকুরি দেখানো হলে উত্তেজনা ছড়ায়। বিকেল ৩টে নাগাদ মেডিক্যাল কলেজ থেকে দেহ নিয়ে বার হন নেতা-সমর্থকেরা। তখন রাস্তা জুড়ে পরপর গাড়ি আর তার মাথায় বসে বা জানলা দিয়ে গলা বাড়িয়ে খুকুরি উঁচিয়ে স্লোগান ও হুমকি চলতে থাকে।

Advertisement

পরে মোর্চার একাংশ দাবি করেছে, গোর্খাদের প্রথা মেনেই শোক মিছিলে খুকুরি ছিল। তবে জ্যোতিকুমার বলেছেন, ‘‘মিছিলে কেউ খুকুরি দেখিয়ে হুঙ্কার দিয়েছে বলে আমার জানা নেই। তা ছাড়া, বাড়ি থেকে অন্ত্যেষ্টি মিছিল শুরুর সময়ে সামনে এক জনই একটা খুকুরি নিয়ে থাকেন। দল বেঁধে খুকুরি নিয়ে শোক মিছিলের প্রথা আমাদের নেই। ’’

আরও পড়ুন: জিএসটি কাঁটায় স্যানিটারি ন্যাপকিন, আঁচ স্বাস্থ্য প্রকল্পে

সন্ধ্যায় দেহ মিরিকে পৌঁছলে নতুন করে গোলমাল শুরু হয়। পুরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলরের বাড়ি ভাঙচুর করে আগুন ধরানোর চেষ্টা হয় বলে অভিযোগ। মিরিক পুরভবনে আগুন ধরানোর চেষ্টা হলেও দমকল তা দ্রুত আয়ত্তে আনে। সেই সময়ে বিডিও অফিসে ভাঙচুর করে লেকের ধারের একটি পুলিশ বুথ পুড়িয়ে দেওয়া হয়। মোর্চার অভিযোগ, পুলিশ শূন্যে গুলি চালিয়ে পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ করেছে। পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেব বলেছেন, ‘‘গুলি চালানোর অভিযোগ ভিত্তিহীন। মোর্চা অশান্তি ছেড়ে আলোচনা বসলেই ভাল করবে।’’ রাতে মিরিকে সেনা টহল শুরু হয়েছে।

পাহাড়ে টানা বন্‌ধ ৩৪ দিনে পড়ল। এ দিনই মোর্চার ডাকা সর্বদল বৈঠকে বন্‌ধ চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তে সিলমোহর দেওয়া হয়েছে। সর্বদলের কয়েক জন প্রতিনিধির অভিযোগ, বন্‌ধ শিথিলের প্রসঙ্গ উঠতেই ফুঁসে ওঠেন কট্টরপন্থীরা। বন্‌ধ তুললে নেতাদের উপরে হামলার হুমকিও দেন তাঁরা। যদিও পর্যটন মহল ও চা বাগান মালিকদের তরফে পুজোর আগে পরিস্থিতি ঠিক করার আর্জি জানানো হয়েছে বিমল গুরুঙ্গের কাছে।

এই পরিস্থিতিতে আন্দোলন দিল্লিতে নিয়ে যেতে চাইছে মোর্চা। এ দিনের বৈঠকে ঠিক হয়েছে, ১ অগস্ট দিল্লিতে সর্বদল বৈঠক করবে মোর্চা। সেখানেই আন্দোলনের রূপরেখা নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপালের কাছে চিঠি পাঠানোর সিদ্ধান্তও হয়েছে। পাশের রাজ্য সিকিমের রাজ্যপাল ও মুখ্যমন্ত্রীর কাছে চিঠি পাঠিয়েও পাশে দাঁড়ানোর জন্য আর্জি জানাবে মোর্চা ও সহযোগী দলগুলি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন