অতীত: প্রিয়রঞ্জন ও গোপাল।
১৯৯২ সালে সাবেক পশ্চিম দিনাজপুর জেলা ভাগ হয়ে উত্তর এবং দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা গঠিত হলেও প্রিয়দা কোনওদিনও দক্ষিণ দিনাজপুরকে আলাদা চোখে দেখেননি। দিল্লিতে বসে ফোন করে বালুরঘাটে বন্যার খবর নিতেন প্রিয়দা। বলতেন, ‘গোপাল শাড়ি কাপড় পাঠালাম। আরও কিছু লাগলে বলিস।’
রাজনৈতিক জীবনে তাঁর খুব কাছে থাকতে পেরে দেখেছি, তিনি শুধু বিচক্ষণ রাজনীতিকই নন, মানুষের খুব কাছের ছিলেন। আপদ বিপদে নিজে উদ্যোগ নিয়ে ঢালাও সাহায্য করতেন। বালুরঘাটে সরকারি বা দলের কাজে এলেই তিনি আমার বাড়িতে উঠতেন। আগের দিন কলকাতা থেকে ফোন করে বলতেন, ‘বৌমাকে বলিস রান্না করতে। দুপুরে খাবো।’
আমি বলতাম দাদা বাড়িতে কিন্তু রানিং ওয়াটার নেই। শুনে প্রিয়দা হেসে বলতেন, ‘ও কোনও ব্যাপার নয়।’ আমার স্ত্রীর হাতের রাইখর মাছের ঝোল, লাউ ঘন্ট, বিভিন্ন শাকের পদের রান্না প্রিয়দা খুব পছন্দ করতেন। ভাত খেয়ে চাপা কলেই হাতমুখ ধুতেন। তখন তিনি কেন্দ্রীয় সেচ ও জলসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী। বালুরঘাটে একাধিকবার এসে সরকারি বৈঠক করে বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য বাঁধ সংস্কারে অর্থ বরাদ্দ করেছেন।
প্রিয়দা সে বার হাওড়া থেকে ভোটে দাঁড়িয়েছেন। বালুরঘাট থেকে গিয়ে জোর প্রচারে নেমেছি। একদিন প্রিয়দা হাতে একটা খাম ধরিয়ে বললেন, জরুরি কাজে এখনই দিল্লি যাচ্ছি। খামটা এক স্থানীয় বাসিন্দার বাড়িতে পৌঁছে দিতে বলে প্রিয়দা জানান, ওদের খুব কষ্ট চলছে। নামটা এখন মনে নেই। তবে এ ভাবে গোপনে তিনি সবসময় সাহায্য করতেন।
বালুরঘাটে যতবার এসেছেন হিলি থেকে হরিরামপুর পর্যন্ত সব কর্মীর নাম ধরে খোঁজ নিতেন। প্রখর স্মৃতিশক্তি ছিল তাঁর। সেই স্মৃতি হারিয়েই চলে গেলেন তিনি। দ্বিতীয়বার আমি পিতৃহারা হলাম। আশা ছিল, ফের প্রিয়দা সুস্থ হয়ে আসবেন। বর্তমান রাজনৈতিক অস্থিরতা ও যে শূন্যতা চলছে, তার অবসান ঘটাবেন।
প্রাক্তন জেলা যুব কংগ্রেস সভাপতি