প্রকাশ: পরিষ্কার আকাশে মেঘ ফুঁড়ে দেখা দিল কাঞ্চনজঙ্ঘা। শিলিগুড়িতে। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক
গত সপ্তাহের ঘটনা। দার্জিলিং যাওয়ার পথে কার্শিয়াং টুরিস্ট লজে কিছুটা সময় কাটাতে চেয়েছিলেন সুমনা ও দীপঙ্কর বসু। বিধাননগরের বাসিন্দা, নব বিবাহিত দম্পতি। কর্মসূত্রে থাকেন বেঙ্গালুরুতে। কয়েক দিনের ছুটি নিয়ে পাহাড় ঘোরার পরিকল্পনা। কিন্তু কার্শিয়াং স্টেশনের কাছে পৌঁছতেই ভিড়ে ঠাসা মোর্চার পতাকা সজ্জিত জনসভার সামনে পড়েন তাঁরা। পরে জ্যাম ঠেলে এগোলেও আর কার্শিয়াঙে বসা হয়নি সুমনাদের।
তিনি বলেন, ‘‘হঠাৎ যেন কেন ভয় ভয় করল। মাইক বাজিয়ে মোর্চার একটি দল সভা করছিল। দোকানপাট কিছু বন্ধও ছিল। পুলিশে ছয়লাপ। তাই সোজা দার্জিলিং চলে যাই।’’
নভেম্বরের গোড়ায় শীত পড়তে শুরু করেছে। মাঝে কয়েক দিন হাল্কা বৃষ্টিও হয়েছে। মাঝেমাঝে সাতসকালে হলুদ রোদে ভরে উঠছে ম্যাল চৌরাস্তা। দেখা যাচ্ছে ঝকঝকে কাঞ্চনজঙ্ঘা। কিন্তু লোক কোথায়? দেখতে দেখতে মন খারাপ হয়ে যায় বিজয় খন্নার। বিজয় নিজের হোটেল রয়েছে শৈলশহরে। তাঁর কথায়, ‘‘হাল্কা ঠান্ডায় কী মনোরম আবহাওয়া! সন্ধ্যায় ঘরে ফায়ারপ্লেসের পাশে বসে কফিতে চুমুক। আহ্!’’ তার পরেই তাঁর মন্তব্য, ‘‘কিন্তু পর্যটক কোথায়!’’
দার্জিলিং হোটেল মালিকদের সংগঠনের সম্পাদকও বিজয়। তিনি জানান, সাধারণত প্রতি বছর পুজোর সময় থেকে নভেম্বরের অর্ধেকটা পর্যটকে ঠাসাঠাসি থাকে পাহাড়। পরে আবার বড়দিন থেকে বছরশেষ জুড়ে মরসুম। এ বার কোনও হোটেলে দুটো রুমে পর্যটক, কোনওটায় বা তিনটিতে। ফলে হোটেলের কর্মীদের ছুটিতে রাখতে হচ্ছে। খরচ তোলাই সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
অথচ এ বারে গরমে রেকর্ড পর্যটক এসেছিল পাহাড়ে। এর আগে কখনও এত মানুষ বাগডোগরা বিমানবন্দর দিয়ে যাতায়াত করেনি। তা হলে গোলমাল মিটে যাওয়ার পরেও কেন আবার পাহাড়মুখো হতে চাইছে না, প্রশ্ন উঠেছে কোনও কোনও মহলে। তার জবাবও দিচ্ছেন হোটেল মালিকদের কেউ কেউ। বলছেন, গত ১৫ জুন যখন গোলমাল চূড়ান্ত আকার নেয় পাহা়ড়ে, রাতারাতি বাক্স গুছিয়ে, বউ-বাচ্চা বাবা-মাকে নিয়ে নেমে যেতে হয়েছে পর্যটকদের। তার পরে টানা বন্ধ, গোলমালের খবর সংবাদমাধ্যমের মারফত পৌঁছেছে ঘরে ঘরে। এই অবস্থায় এখনও পুরনো আস্থা ফেরেনি মানুষের মনে। হাতে গোনা যে ক’জন এসেছেন এখন, তা হয় বিদেশি এবং ভিনরাজ্যের পর্যটক। অনেকেই সিকিমে চলে যাচ্ছেন।
ফলে মাথায় হাত পর্যটন ব্যবসায়ীদের। দার্জিলিং ট্রাভেল এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক প্রদীপ লামা জানান, গাড়ি দিনের পর দিন বসে থাকছে। অধিকাংশ হোটেল ফাঁকা। অথচ সরকার তো করছাড় দেয়নি। সেই টাকা মালিকেরা কোথা থেকে দেবে! আবার রাতে বহু এলাকায় পুলিশি অভিযান হচ্ছে। হুমকির পোস্টার পড়ছে। ফলে ভয়ের আবহটা বদলায়নি। দার্জিলিং, কালিম্পং, কার্শিয়াং ও মিরিকে ছোট-বড় মিলিয়ে ৩৫০ হোটেল রয়েছে। রোজ গাড়ি চলে হাজার দেড়েক। বর্তমানে মেরেকেটে ১০-১৫% পর্যটকদের কাজে লাগছে বলে জানালেন পর্যটন ব্যবসায়ী সম্রাট সান্যাল। তিনি জানান, খুবই ধীরে ধীরে পাহাড়ে লোক আসছে। পরিস্থিতি এমন থাকলে বড়দিনের মরসুমে কী হবে, কেউ বলতে পারছে না!