Governor

পাশে বিজেপি সাংসদ নিশীথ, আঙুল উঁচিয়ে আইসি-কে ধমক রাজ্যপালের

ঘটনাচক্রে, যে পুলিশকে ধমকেছেন রাজ্যপাল, সেই দফতর মুখ্যমন্ত্রীর হাতে। ফলে এই জল আরও অনেক দূর গড়াবে বলেই মনে করছেন রাজনীতির কারবারিরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

দিনহাটা শেষ আপডেট: ১৩ মে ২০২১ ১৯:৪২
Share:

নিশীথকে পাশে রেখে রাজ্যপাল আঙুল উঁচিয়ে ধমকও দিচ্ছেন দিনহাটার এসডিপিও অমিত বর্মা এবং দিনহাটা থানার আইসি সঞ্জয় দত্তকে

প্রশাসনিক সফরে রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় কোচবিহার গিয়েছেন। কিন্তু সঙ্গে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব তথা কোচবিহারের বিজেপি সাংসদ নিশীথ প্রামাণিক। তা নিয়েই বিতর্ক শুরু হয়েছে রাজ্য রাজনীতিতে। কী ভাবে রাজ্যপালের প্রশাসনিক সফরে এক জন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ‘সঙ্গী’ হতে পারেন, তা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন। বৃহস্পতিবার রাজ্যপালের পাশে থাকা নিশীথকে পুলিশের উদ্দেশে লাঠি চালানোর ‘নির্দেশ’ দিতেও দেখা গিয়েছে। একই সঙ্গে নিশীথকে পাশে রেখে রাজ্যপাল আঙুল উঁচিয়ে ধমকও দিয়েছেন দিনহাটার এসডিপিও অমিত বর্মা এবং দিনহাটা থানার আইসি সঞ্জয় দত্তকে। সব মিলিয়ে রাজ্যপালের কোচবিহার সফর তুমুল বিতর্কের কেন্দ্রে।

Advertisement

গত মঙ্গলবারই রাজ্যপাল টুইট করে জানিয়েছিলেন, ভোট পরবর্তী রাজনৈতিক হিংসা যে সমস্ত জায়গায় হয়েছে, সে সব এলাকায় যাবেন। তা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বুধবার রাজ্যপালকে কড়া চিঠি দেন। ওই চিঠিতে তিনি ‘প্রোটোকল’-এর বিষয়ও উল্লেখ করেন। রাজ্যপালও পাল্টা চিঠি দেন মুখ্যমন্ত্রীকে। ধনখড় সেখানে লেখেন, সংবিধান মেনে যা করার তা তিনি করবেন। বিতর্কের এই আবহেই বৃহস্পতিবার কোচবিহার যান রাজ্যপাল। মাথাভাঙা, সেতাই-এর পাশাপাশি নীলবাড়ির লড়াইয়ে যে কেন্দ্রে সব থেকে বেশি প্রাণহানি হয়, সেই শীতলখুচিতেও যান তিনি। সেখান থেকে যান দিনহাটায়।

সম্প্রতি দিনহাটায় তৃণমূল নেতা উদয়ন গুহর উপর হামলা হয়। তার পর ওই এলাকার স্থানীয় বিজেপি নেতা অজয় রায়ের বাড়িতে হামলা চালানো হয় বলে তৃণমূলের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছিল বিজেপি। বৃহস্পতিবার সেই অজয়ের বাড়িতে যান ধনখড়। অজয়ের পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। রাজ্যপালের কাছে তাঁর পরিবারের সদস্যেরা অভিযোগ জানান, তাঁদের ক্রমাগত প্রাণে মারার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। তাঁদের নিরাপত্তার আশ্বাস দেন রাজ্যপাল। তার পর গাড়িতে কিছুটা এগোতেই মদনমোহন মোড়ের কাছে তৃণমূল কর্মীদের বিক্ষোভের মুখে পড়েন তিনি।

Advertisement

স্থানীয় তৃণমূল কর্মীদের ‘গো ব্যাক’ স্লোগানের মুখে পড়েন রাজ্যপাল। সেই সময় নিশীথকে পুলিশের উদ্দেশে বলতে শোনা যায়, ‘‘সব ক’টা অ্যান্টিসোশ্যাল। লাঠিচার্জ করুন।’’ পুলিশ বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দেওয়ার পর গাড়ি থেকে নেমে পড়েন রাজ্যপাল। পুলিশকে ধমক দিতে দেখা যায় তাঁকে। দিনহাটার এসডিপিও এবং আইসি-কে আঙুল উঁচিয়ে রাজ্যপাল বলেন, ‘‘এটা সম্পূর্ণ ভাবে পুলিশের ব্যর্থতা। আপনার পুলিশের ব্যর্থতা। আপনার জানা উচিত ছিল, রাজ্যপাল কখন, কোথায় যাবেন।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘এ রকম অব্যবস্থা দেখে অবাক হয়ে যাচ্ছি আমি। রাজ্যপালের গাড়ি আটকানোর সাহস হয় কী করে? আমি স্বপ্নেও ভাবিনি শাসন ব্যবস্থার এমন নগ্ন নাচ দেখব। সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছে এ রাজ্যের আইন ব্যবস্থা।’’ রাজ্যপালের পাশেই তখন দাঁড়িয়ে নিশীথ।

সংবিধান বিশেষজ্ঞদের একাংশের দাবি, নিয়ম অনুযায়ী রাজ্যপালের সুরক্ষায় ছায়াসঙ্গী হওয়ার কথা রাজ্য পুলিশের। সেই জায়গায় কী ভাবে নিশীথের মতো এক জন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে সঙ্গে নিয়ে প্রশাসনিক সফরে গেলেন তিনি, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে ওই অংশ। ইতিমধ্যেই এ বিষয়ে তৃণমূলের তরফে রাজ্যপালের সমালোচনা করা হয়েছে। সরকার পক্ষের উপ মুখ্য সচেতক তাপস রায় বলেন, ‘‘রাজ্যপাল এখন হতাশ। তিনি একটি মিশন নিয়ে এসেছিলেন বা তাঁকে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু হাজারো টুইট ও সাংবাদিক সম্মেলন করে রাজ্যপাল তো মিশন ফেল করছেন। তাই হতাশা কাটাতে বিজেপি নেতাদের নিয়ে এখন জেলা সফরে যাচ্ছেন।’’ রাজ্যের পরিবহণ ও আবাসন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘‘বিজেপি-র অ্যাজেন্ডাকে সফল করতে শীতলখুচি গিয়েছেন রাজ্যপাল। এটা বাংলার পক্ষে ভাল না। বাংলার মানুষের পক্ষে বিপজ্জনক।’’

ঘটনাচক্রে, যে পুলিশকে ধমকেছেন রাজ্যপাল, সেই দফতর মুখ্যমন্ত্রীর হাতে। ফলে এই জল আরও অনেক দূর গড়াবে বলেই মনে করছেন রাজনীতির কারবারিরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন